ঘুষ নিয়ে পুলিশের এএসআই ‘এতো টাকা নিইনি ভাই’

ইমরান খান



ঘুষ নিয়ে পুলিশের এএসআই ‘এতো টাকা নিইনি ভাই’

ইমরান খান: ‘এতো টাকা কিন্তু নিইনি। টাকা যে নিইনি এটা বললেও মিথ্যা কথা হবে ভাই। যা করেছি সব কথা আপনাদের বললাম। আমারও বউ বাচ্চা আছে। সংসার আছে ভাই। এখন আমাদের বাঁচাবেন নাকি ক্ষতি করবেন সেটা ভেবে দেখেন। বিষয়টি এখানেই শেষ করেন। আপনারা আসছেন আমরা আপনাদের অনার করব। ভিডিওটা আর কোথাও দিয়েন না।’ সোর্সের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণের ভিডিও এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে জেনে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য এভাবেই অনুনয় করছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটনের পল্লবী থানার এএসআই ফয়সাল।

 

রাজধানীর পল্লবীতে কিছু পুলিশ সদস্যের ঘুষ ও দুর্নীতির কারণে বন্ধ হচ্ছে না মাদক বাণিজ্য। অভিযোগ উঠেছে, টাকা দিলেই সব কাজ হয় পল্লবী থানায়। শুধু মাদক ব্যবসায়ী নয়, যেকোনো আসামি ধরলেই বিপুল টাকা দিতে হয় পল্লবী থানার কয়েক পুলিশকে। স্থানীয়দের এমন অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দৈনিক ভোরের আকাশ। এরমধ্যেই এক নারীর কাছ থেকে পুলিশের সোর্স জালালের টাকা নেয়ার একটি ভিডিও আসে প্রতিবেদকের হাতে। ওই নারী তাকে এতো টাকা কেন দিচ্ছেন, সেটি জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। শেষ পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বর বিহারি ক্যাম্পে নিজ বাড়িতে পাওয়া যায় এই নারীকে। তিনি জানান, গত ১৪ জুন মিরপুর ১২ নম্বর থেকে তার স্বামী সারোয়ার আলম টিপুসহ ৬ জনকে মাদক ও একটি প্রাইভেটকারসহ আটক করেছিলেন পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক এসআই শুভ, এএসআই ফয়সাল ও এএসআই শফিকুল। মামলা ছোট করতে ও জব্দ হওয়া গাড়ি ফেরত দিতে জালালের মাধ্যমে পুলিশকে টাকা দিয়েছিলেন তিনি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সাক্ষাৎ করতে চান প্রতিবেদকের সঙ্গে।

 

মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের চন্দ্রবিন্দু মোড়ে ডাকা হলে নিজের টিমের এএসআই ফয়সাল ও এএসআই শফিকুলকে পাঠান এসআই শুভ। তারা এসে রিপোর্টটি না করতে বিভিন্নভাবে অনুরোধ করতে থাকেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর সেখানে হাজির হোন পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক এসআই শুভ। তিনি প্রথমে মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও ক্যামেরা সরাতেই সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ শুরু করেন। বলতে থাকেন, আপনারা সাংবাদিক হিসেবে নয়, ভাই-ব্রাদার হিসেবে কথা বলেন। কাজ করতে গেলে কিছুটা ভুলভ্রান্তি হবেই। হয়তো আমাদেরও হয়েছে।

 

প্রাইভেটকার মাদক ব্যবসায়ীর পরিবারকে ফেরত দেয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তার পাশে থাকা এএসআই ফয়সাল ও এএস আই শফিকুল বলেন দেয়া হয়েছে। সোর্স জালালের মাধ্যমে তাদের গাড়ির কাগজ দেয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে, এসআই শুভ বলেন, শোনেন কমন কথা বলি। সোর্স কারো না। আবার সোর্স সবার। আমি পুলিশ আপনি সাংবাদিক। আজ সোর্সকে আপনি পাঁচ টাকা বেশি দিলে সে আপনার পক্ষে কাজ করবে। আপনারা নিউজে যাইয়েন না। আমি আপনাদের সঙ্গে রাতে বা সন্ধ্যায় দেখা করব।

 

গ্রেপ্তার সারোয়ার আলম টিপুর স্ত্রীর কাছে পুরো বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ১৪ জুন মিরপুর ১২ নম্বর থেকে তার স্বামী সারোয়ার আলম টিপুসহ ছয় জনকে মাদক ও একটি প্রাইভেটকারসহ আটক করেছিলেন পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক এসআই শুভ, এএসআই ফয়সাল ও এএসআই শফিকুল। মামলা ছোট করতে ও জব্দ হওয়া গাড়ি ফেরত দিতে জালালের মাধ্যমে পুলিশকে প্রথমে ৬০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন তিনি। এই জালাল এএসআই ফয়সালের সোর্স হিসেবে পরিচিত। পরে থানায় গিয়ে এসআই শুভকে আরো ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেন বলেও দাবি করেন তিনি। সোর্সদের মাধ্যমেই সব ধরনের অবৈধ লেনদেনে জড়ান অসাধু পুলিশ সদস্যরা। এর আগে পল্লবী থানার চতুর্থ তলায় পুলিশের ওয়াকিটকি হাতে নিয়ে টিকটক করে আলোচনায় এসেছিলেন লাবলু নামের এক সোর্স। তিনিও এসআই শুভর সোর্স হিসেবে পরিচিত।

 

এ বিষয়ে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমি এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

 

 ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য