সংবাদ প্রকাশের জের

ঢাকা কলেজের হলে সাংবাদিককে রাতভর নির্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা কলেজের হলে সাংবাদিককে রাতভর নির্যাতন
সাংবাদিক নির্যাতনকারী সোহেল

ঢাকা কলেজের সাংবাদিক ফয়সালকে ছাত্রলীগের নির্যাতনের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশে সহায়তা করার অভিযোগ এনে সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক ওবায়দুর সাঈদ এর উপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতারা । আবাসিক হলে থাকা ওই শিক্ষার্থীকে রাতভর আটক রেখে দফায় দফায় নির্যাতন করে ছাত্রলীগ নেতা রাউফুর রহমান সোহেল ও তার অনুসারীরা।

 

গত বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা থেকে পরদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের ২০৬ নং কক্ষে বুয়েটের আবরার ফাহাদ স্টাইলে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে । খবর পেয়ে ১৮ ঘণ্টা পর পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

 

নির্যাতনের শিকার হওয়া ওবায়দুর সাঈদ ও হলের অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর ওবায়েদের রুমে আসে ফরহাদ হোসেন হলের ছাত্রলীগ নেতা রাউফুর রহমান সোহেল ও তার কয়েকজন অনুসারী। এ সময় সোহেল ওবায়েদের বুকে লাত্থি মেরে ফ্লোরে ফেলে দেয় । এরপর মুখে ও কানে এলোপাতাড়ি চড় থাপ্পর মারতে থাকে।

 

তার কাছে জানতে চাওয়া হয় ফয়সালকে নির্যাতনের খবর কোন কোন পত্রিকায় পাঠানো হয়েছে। এরপর সোহেল ওই সাংবাদিকের গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে তার ফোনের লক খুলতে বাধ্য করে। কলেজের সাবেক ও বর্তমান সাংবাদিকদের যোগাযোগের মেসেঞ্জার গ্রুপ ও সাংবাদিক সমিতির গ্রুপের সকল কথোপকথন স্কিন ভিডিও করে নেয় তারা।

 

ওবায়েদের এক বন্ধু ও হলের একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা সবাই সোহেলের হাত থেকে ওবায়েদকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু সোহেলের হিংস্র আচরণের কাছে আমরা অসহায়। বাধা দিতে গেলে সে আমাদেরও মারতে আসে। এর পরদিন দুপুরে ওবায়েদ বার বার জুমার নামাজ পড়তে চেয়েছে ওকে জুমার নামাজও পড়তে দেয়া হয়নি। রুমে তালা দিয়ে আটকিয়ে রাখা হয়। প্রায় ১৫ ঘন্টারও বেশী সময় নির্যাতনের পর তাকে নেয়া হয় প্রিন্সিপালের রুমে। প্রিন্সিপাল পরিবারের সদস্যদের ডেকে এনে মারধরের ঘটনা গোপন রাখার শর্তে তাকে বড় ভাইয়ের জিম্মায় দেয়।

 

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে । আগামী ছয় দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে তদন্ত কমিটিকে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট নাসির উদ্দিন বলেন, পুরো ঘটনাটি প্রিন্সিপাল স্যার দেখছেন আমি কিছু বলতে পারবো না।

 

ঢাকা কলেজের শিক্ষক সমিতির সম্পাদক কুদ্দুস শিকদার বলেন, ওবায়েদের বিষয়টি শুনেছি। এ নিয়ে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ বলেন, আজ (শনিবার) কলেজে ছাত্রলীগের বড় কর্মী সভা চলছে, আমি একটু ব্যস্ত আছি। নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে; এ বিষয়ে পরে কথা বলবো।

 

হামলাকারী রাউফুর সোহেল বলেন, আমি কর্মী সভায় ব্যস্ত এখন কথা বলতে পারবো না।

জানা গেছে, সাংবাদিক নির্যাতনকারী সোহেল বিবাহিত ছাত্রনেতা। তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা রয়েছে। নীলক্ষেতে ব্যবসায়ীদের নির্যাতন, পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

 

এর আগে গত বুধবার গেস্ট রুমে যেতে দেরি করায় ইংরেজি বিভাগের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং ডেইলি বাংলাদেশ ও প্রতিদিনের ক্যাম্পাসের ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি ফয়সাল আহমেদকে বেধড়ক পেটায় ছাত্রলীগ নেতারা। এ ঘটনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় বিভিন্ন সাংবাদিক ও ছাত্র সংগঠন।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য