ভিডিও করার কারণে যুবককে মারধর করে পুলিশ!

ইমরান খান
ভিডিও করার কারণে যুবককে মারধর করে পুলিশ!

ইমরান খান: তখন গভীর রাত। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে প্রবেশ করে পুলিশের কয়েকটি গাড়ি। পুলিশ সদস্যদের গন্তব্য হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। সেখানে গিয়ে দেখা যায় চিকিৎসাধীন এক যুবকের চারপাশে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েক পুলিশ সদস্য। তারা সবাই ঢাকা মেট্টোপলিটনের রূপনগর থানায় কর্মরত। পুলিশ সদস্যদের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। তাদের হেফাজতে থাকা যুবকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভুক্তভোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, মিথ্যা অভিযোগে ওই যুবককে আটক করার সময় নিজেই ভিডিও ধারণ করছিলেন। ওই সময়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তার গলা চেপে ধরে পুলিশ। এতেই নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় তার। অসুস্থ হয়ে যান ওই যুবক। একপর্যায়ে তাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যান পুলিশ সদস্যরা। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায়, মিরপুরের রূপনগরের ১৬ নম্বর রোডে। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় রাত ১টার দিকে।

 

হাসপাতালে অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ও পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মাহবুবুর রহমান সরকার। কিছুক্ষণ পর সেই যুবককে হুইল চেয়ারে করে পুলিশের গাড়ির সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে গাড়িতে করে অন্যত্র নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, যুবকটির নাম কাব্য। তার অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দিলে পুলিশ সদস্যরা তাকে নিয়ে সেখানে রওনা দেন। জানা গেছে, পুলিশের উপস্থিতিতে যুবক কাব্যকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

 

ভুক্তভোগী যুবকের বাবা জসিম দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, মিরপুরের রূপনগর এলাকার ১৬ নম্বর রোডে নিজ দোকান থেকে কাব্যকে আটক করে পুলিশ। এ সময় ভিডিও ধারণ করার চেষ্টা করায় তাকে মারধর করেন পুলিশ সদস্যরা। একপর্যায়ে রূপনগর থানার এএসআই সোহেল কাব্যর গলা চেপে ধরেন। পুলিশের নির্যাতনে সে অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।

 

তিনি বলেন, আমাদের রিকশার পার্টসের দোকান আছে। আমি ছেলেকে দোকানে রেখে স্যান্ডেল কিনতে মিরপুর ১০ নম্বরের দিকে গিয়েছিলাম। হঠাৎ লোকজন ফোন দিয়ে জানায় আমার ছেলেকে পুলিশ ধরে অনেক মারধর করছে। পুলিশ বলছে, আমার ছেলে নাকি গাঁজা খাচ্ছিল। কিন্তু আমার জানামতে আমার ছেলে এসবের মধ্যে নাই। আর গাঁজা খেলেও এভাবে মারধর করতে হবে কেন? তাকে থানায় নিয়ে মামলা দিতে পারত। সেটা কিন্তু থানা পুলিশ করেনি। কাব্যর স্বজনরা জানান, মাদক বিক্রি বা মাদক সেবনের কোনো অভিযোগ নেই তার বিরুদ্ধে। এমনকি তার বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই।

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে জসিমের দোকানে যান রূপনগর থানার এএসআই সোহেল রানা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের গাড়িচালক ইব্রাহিম। তারা কাব্যকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চান। তখন কাব্য জানতে চান, তার অপরাধ কী, কেন তাকে আটক করতে চাচ্ছে পুলিশ। এ সময় বিষয়টি সবাইকে জানাতে ফেসবুক লাইভে যাওয়ার চেষ্টা করেন কাব্য। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে পুলিশ। এ সময় তাকে মারধর করেন এএসআই সোহেল রানা ও ইব্রাহিম। এরপর ঘটনাস্থলে ছুটে যায় আরও কয়েক পুলিশ সদস্য। প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন, তারাও যুবককে মারধর করে। মাটিতে ফেলে অনেকক্ষণ কাব্যর পিঠে-পায়ে লাথি দিতে থাকে তারা। এরপর তাকে থানায় নিয়ে যায়।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রূপনগরের ১৬ নম্বর রোডে কাব্যর বাবা জসিমের রিকশার যন্ত্রপাতির দোকান ও রিকশার গ্যারেজ রয়েছে। দুইটি স্থাপনার জন্য থানা পুলিশকে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা দেন জসিম। ঘটনার আগে সন্ধ্যায় কাব্যর বাবা জসিমকে থানায় ডেকে নিয়েছিলেন রূপনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহা. রাশেদুল আলম। থানায় ডাকার পর প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা বাড়িয়ে অর্থাৎ সাত হাজার টাকা করে দিতে বলেন তিনি। কিন্তু এতে অসম্মতি জানান জসিম। ব্যবসার অবস্থা খারাপ জানিয়ে থানা থেকে বের হয়ে যান তিনি। এরপরই তার ছেলে কাব্যকে দোকানে গিয়ে মারধর করেন পুলিশ সদস্যরা। এ বিষয়ে রূপনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহা. রাশেদুল আলমের কাছে জানতে চাওয়া মাত্রই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরবর্তীতে কল দিলে তিনি বলেন, আমি অফিসের একটি মিটিংয়ে আছি। পরে আপনাকে কল দিচ্ছি। কিন্তু এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি আর কল দেননি।

 

কাব্যকে মারধরের বিষয়ে রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল বলেন, গাঁজা সেবন করার সময় কাব্য নামে ওই যুবককে আটক করা হয়েছে। তখন পুলিশের সঙ্গে ওই যুবকের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। তবে ছেলেটিকে হাসপাতালে কেন নিতে হলো সে বিষয়ে কোনো সদুউত্তর দিতে পারেননি এ পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়া কাব্যের পিতার কাছে নিয়মিত মাসোহারার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য