ইমরান খান: ‘আমার বোন গার্মেন্টসে চাকরি করত। অসুস্থার কারণে চাকরি ছাড়তে চাইছে। এজন্য আমার বোনকে বিষ খাওয়াইয়া তার জামাই মাইরা ফালাইছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই। আশরাফ হোসেন ডলারের ফাঁসি চাই।’ রাজধানীর পল্লবীর কালশি রোডের বিহারিদের ‘বগুড়া ক্যাম্পে’ বিষপানে জিনাত আরা নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু ঘটে।
রোববার সন্ধ্যায় বোনের লাশ জড়িয়ে ধরে এভাবেই আর্তনাদ করতে করতে কথা গুলো বলছিলেন মৃত জিনাতের ভাই মোহাম্মদ আরিফ। নিহতের পরিবারের অভিযোগ জিনাতকে খাবারের সঙ্গে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে তার স্বামী ডলার। এরপর থেকে পলাতক রয়েছে অভিযুক্ত স্বামী।
জানা গেছে, গত শনিবার রাতে নিজ বাড়িতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় গৃহবধূ জিনাতকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রোববার তার মৃত্যু ঘটে।
চিকিৎসকরা জানান, বিষক্রিয়ার কারণে জিনাতের মৃত্যু ঘটেছে। স্ত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে পালিয়ে যান আশরাফ হোসেন ডলার। মিরপুর-১০ নম্বরে বিহারি ক্যাম্পে থাকেন জিনাতের বড় বোন রোকাইয়া বেগম। বোনের সঙ্গে দেখা করতে শনিবার রাতে বগুড়া ক্যাম্পে যান রোকাইয়া ও তার ভাই আরিফ।
এ বিষয়ে রোকাইয়া বলেন, আমি গিয়ে দেখলাম রাস্তায় পড়ে থাকা একটি মেয়েকে ঘিরে লোকজন ভিড় করেছে। কাছে গিয়ে মেয়েটিকে উল্টে দেখলাম এতো আমার বোন জিনাত। সঙ্গে সঙ্গে আমার ভাই ও আমি তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম। জিনাতের জামাই ডলারের দুই ভাই ফাহাদ ও আফজাল সেখানে ছিল।
কিন্তু সহযোগিতার জন্য তারা এগিয়ে আসেনি। হাসপাতালে নেয়ার পর আমার বোন জানায় তাকে মারধর করেছে তার স্বামী ডলার। একপর্যায়ে জোর করে মুখে বিষ ঢেলে দেয়। পরে ঘর থেকে বের করে রাস্তায় ফেলে রেখেছিল তার স্বামী ডলার।
জিনাতের মা নিঘাত আরা অভিযোগ করে বলেন, চারদিন আগে যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে মারধর করেছে ডলার। বাবার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিতে চাপ দিয়েছিল জিহনাতকে। জিনাত অসম্মতি জানালে তাদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। তাকে নির্যাতন করে ডলার। আমরা কষ্ট পাব বলে বিষয়টি আমাদের জানায়নি, শুধু তার বোনকে জানিয়েছিল। দুই লাখ টাকা না পেয়ে আমার মেয়ে জিনাতকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলছে। বিয়ের পাঁচ মাসে প্রায়ই জিনাতকে নির্যাতন করতো ডলার, এই অভিযোগ করেন তার মা।
নিহতের খালাতো বোন সায়বা খুশবু বলেন, আমার বোন জিনাত গর্ভবতী ছিল। এমন অবস্থায় তার জামাই কীভাবে এমন নির্যাতন করতে পারল সেটা বুঝতে পারছি না। এর আগেও আমার বোন বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন জিনাতের স্বজনরা।
জিনাতের মৃত্যুর খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়না তদন্তের জন্য তার লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে রোববার রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে পল্লবীর কালশী রোডের বগুরা ক্যাম্পের বাসায় লাশ আসে নিহত গৃহবধূ জিনাতের। এ সমসয় ওই এলাকার শত শত মানুষ সেখানে ভিড় করেন। নিহত জিনাতের স্বামী ডলারকে অভিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান স্থানীয়রা।
ডলারের প্রতিবেশীরা জানান, ডলার-জিনাত দম্পতির মধ্যে কলহ লেগেই থাকতো। যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই জিনাতকে মারধর করত ডলার। মারধর ও চিৎকারের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পেতেন আশপাশের বাসিন্দারা। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করতে চাইলেও পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে বলে জানিয়েছে নিহত জিনাতের বাবা মো. মঈন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান মিয়া দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
নিহতের পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অপমৃত্যুর মামলা তো মেয়েটির বাবাই করেছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। সেই অনুসারে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এই দম্পতির স্বজনরা জানান, ডলার একজন পরিবহন ব্যবসায়ী। পাঁচ মাস আগে প্রেম করে বিয়ে করেন ডলার-জিনাত। এর আগে জিনাতের অন্যত্র বিয়ে হয়েছিল।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য