ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর ‘আত্মহত্যা’র পর পলাতক তার কথিত প্রেমিক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রুফিকে আটক করেছে র্যাব। র্যাবের পক্ষ থেকে তার নাম মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন জানানো হলেও হিমুর মৃত্যুর পর তার নাম উরফি জিয়া বলে জানা যাচ্ছিল।
শুক্রবার সকালে জিয়াউদ্দিনকে আটক করা হয়। র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং থেকে এক বার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিকেলে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছে র্যাব। গতকাল বিকেলে ফ্যানের হ্যাঙ্গারে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয় হিমুকে। সেখান থেকে হিমুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম গতকাল বলেন, ‘শুনেছি, একজন যুবক হিমুকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর সেই যুবক তার মোবাইলসহ পালিয়ে গেছেন।’
উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোর্শেদ আলম গতকাল বলেছিলেন, প্রেমিক উরফির সঙ্গে তার বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। কয়েকদিন ধরে হুমায়রা হিমুর সঙ্গে উরফির ঝগড়া-বিবাদও হয়েছে। হাসপাতালে হিমুকে ফেলে উরফি পালিয়েছে। আমরা উরফিকে খুঁজছি। তাকে পেলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে অভিনেত্রীর মৃত্যুর আসল কারণ কি।’
হুমাইরা হিমু ১৯৮৫ সালের ২৩ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইস্পাহানি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। মঞ্চনাটকে অভিনয়ের
মাধ্যমে তিনি প্রথম নাট্য জগতে প্রবেশ করেন। ফ্রেঞ্চ নামক নাট্য দলের হয়ে তিনি অভিনয় করেন। ২০১১ সালে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে হুমায়রা হিমুর অভিষেক হয়। চলচ্চিত্রের গল্পটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এবং চলচ্চিত্রে তার অসাধারণ অভিনয় সমালোচকদের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছিল।
জানা যায় ব্যক্তিগত জীবনে রুফি বিবাহিত ছিলেন। হুমায়রা হিমু বিগো লাইভ নামের একটি অ্যাপে লাইভ করতো। সেখান থেকেই দুজনের পরিচয়। বিগো লাইভে রুফি নামেই অ্যাকাউন্ট ছিল কথিত প্রেমিকের। সেখান থেকে দুজনের হৃদয়ঘটিত সম্পর্কের তৈরি হয়।
এ বিষয়ে হিমুর খালা পরিচয়ে একজন বলেন, ‘আমি যতদূর জানি, বিগো অ্যাপস থেকে ওই বন্ধুর সঙ্গে হিমুর পরিচয়। তিনি ভালো সেন্ডার। আমি তাকে (হিমু) বলেছি, তুমি লাইভ করো, সাপোর্ট করো কিন্তু বিয়ে পর্যন্ত যেও না। চার-পাঁচ দিন আগে ওর সঙ্গে আমার এটুকুই কথা হয়। তার প্রেমিকের নাম জিয়াউদ্দিন। তার আইডির নাম রুফি। আসল নাম জিয়াউদ্দিন রুফিয়া। হিমু তাকে ব্লকও করেছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘স্পটে মিহির ছিলেন। তিনি হিমুর বোন নয়, মেকআপ আর্টিস্ট। তিনি আরো ভালো বলতে পারবেন যে, রুফি কখন হিমুর বাসায় গিয়েছেন। আমি যতদূর শুনেছি, দুপুরের পর সেখানের যান রুফি। এরপর হাসপাতালে নিয়ে আসেন তিনি ও মিহির। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হলে হিমুর মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায় রুফি।’
এ বিষয়ে উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোর্শেদ আলম বলেন, ‘প্রেমিক রুফির সঙ্গে তার বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। কয়েকদিন ধরে হুমায়রা হিমুর সঙ্গে তার ঝগড়া-বিবাদও হয়েছে। হিমুর মৃত্যুর পর হাসপাতালে তাকে ফেলে পালিয়ে যায় সে।’
তিনি বলেন, ‘অভিনেত্রী হিমু ছিলেন ব্রোকেন ফ্যামিলির। তিনি তার এক পালিত ভাইকে নিয়ে উত্তরার ফ্ল্যাটে থাকতেন। তার সঙ্গে এক ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ওই প্রেমিকের সঙ্গে হিমুর দ্বন্দ্ব হয়েছিল। সেখান থেকেই এ ঘটনা ঘটতে পারে।’ উল্লেখ্য, হিমুকে লক্ষ্মীপুরে তার মায়ের পাশে দাফন করা হবে।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য