-->
শিরোনাম

হিমুর আত্মহত্যার নেপথ্যে

রুদ্র মিজান
হিমুর আত্মহত্যার নেপথ্যে

রুদ্র মিজান: বিগো লাইভে আসক্তি ছিল অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর। এ থেকেই দ্বন্দ্বের উৎপত্তি প্রেমিক বন্ধু মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রুফির সঙ্গে। এছাড়াও অনেকের সঙ্গে বন্ধুতা ছিল হিমুর। কেউ কেউ আসা-যাওয়া করতের এই অভিনেত্রীর বাসায়। এ নিয়ে কলহ তৈরি হয় রুফির সঙ্গে। রুফি চাইতেন না ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকুক হিমুর।

 

এই দ্বন্দের সমাপ্তি হওয়ার আগেই জীবনের সমাপ্তি টানেন ছোট পর্দার পরিচিত অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু। শেষ পর্যন্ত গত ২ নভেম্বর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে তার। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে হিমুর প্রেমিক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রুফিকে। জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন তিনি।

 

দীর্ঘদিন থেকেই হুমায়রা হিমুর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল রুফির। বিগো লাইভ নিয়ে ঝামেলা শুরু হয় এই জুটির মধ্যে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘ তিন-চার বছরে যাবৎ রাত জেগে বিগো লাইভে কথা বলতেন হিমু। এর মাধ্যমে দেশে-বিদেশে অনেকের সঙ্গে তার বন্ধুতা গড়ে ওঠে। বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি রুফি। রুফিকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছে র‌্যাব।

 

জিয়াউদ্দিন রুফিকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় হিমুর উত্তরার বাসায় যায় রুফি। পরে অনলাইন জুয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হিমু ও জিয়াউদ্দিন রুফির মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। একপর্যায় হিমু ভাঙচুর করেন। হিমু বাগবিতন্ডা একপর্যায়ে রুমের বাইরে থেকে একটি মই এনে রুমে ঢুকেন। রুমের সিলিং ফ্যানে আগে থেকেই বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দেন হিমু। কিন্তু তা গুরুত্ব দেননি রুফি।

 

কারণ এর আগেও সামান্য কলহের জেরে তিন-চার বার আত্মহত্যা করবেন বলেছিলেন। এবারো আগের মতো আত্মহত্যা করার ব্যাপারে জানালে সে বিষয়টি গুরুত্ব দেননি রুফি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ঘটে ঘটনা। বাথরুম থেকে বের হয়ে রুফি দেখতে পান হিমু সত্যি সত্যি গলায় ফাঁস দিয়েছেন। তখন তিনি হিমুকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

 

এসময় পাশের রুমে থাকা হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনেন তিনি। পরে মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বঁটি এনে রশি কেটে হিমুকে নিচে নামান। ঘটনাটি ঘটে হিমুর উল্টরার বাসায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার পর থেকে ৫টার মধ্যে।

 

পরে বাসার দারোয়ান এবং মিহিরের সহায়তায় হিমুকে বাসা থেকে রাজধানীর উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে যান জিয়াউদ্দিন রুফি। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক হিমুকে মৃত ঘোষণা করার পরপরই নিখোঁজ হন রুফি। পরে গতকাল দুপুরে বংশাল এলাকা থেকে রুফিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

 

জানা গেছে, ২০১৪ সালে অভিনেত্রী হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে জিয়াউদ্দিন রুফির বিয়ে হয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। ওই সময় থেকেই হিমুর সঙ্গে যোগাযোগ হতো রুফির। ওই বিয়ে বিচ্ছেদের পর জিয়াউদ্দিন রুফি অন্যত্র বিয়ে করেন। তারপরও হিমুর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। গত চার-পাঁচ মাস যাবৎ রুফির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় হিমুর।

 

হিমুর ঘনিষ্ঠরা জানান, নিয়মিত হিমুর বাসায় আসা যাওয়া করতেন রুফি। এরমধ্যে হিমুকে বিয়ে করবেনও বলে প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। গ্রেপ্তারের পর র‌্যাবের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছেন রুফি। কয়েক বছর আগে মায়ের মৃত্যু, তার আগে মা-বাবার বিচ্ছেদের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন হিমু। নাটকেও তেমন কাজ ছিল না তার। হতাশাগ্রস্ত হিমু তখন আসক্ত হন বিগো লাইভে। রাত গভীর হলেই হাজির হতেন এতে।

 

এমনকি অনলাইনে জুয়ায়ও অংশ নিতেন তিনি, এমনটি জানা গেছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে। এ নিয়ে প্রায়ই দুজনের মধ্যে ঝগড়া হতো। হিমুর মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা দায়ের করেছেন তার খালা। এতে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে আসামি করা হয়েছে মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রুফিকে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, জিয়াউদ্দিন রুফি (৩৬) হিমুর বয়ফ্রেন্ড। ছয় মাস আগে থেকে তিনি নিয়মিত হিমুর বাসায় যাতায়াত এবং মাঝে-মধ্যে রাত্রীযাপন করতেন। আসামি রাফির ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ও বিগো আইডি ব্লক দেন হিমু। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে ঝামেলা হলে রাফি হিমুকে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচনা দিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করেন। মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রুফি ‘ও’ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল কেমিক্যালের ব্যবসা করতেন বলে জানা গেছে।

 

এদিকে, গতকাল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে হিমুর লাশের ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুকে দাফনের জন্য নেয়া হয়েছে তার গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুরে। জুম্মার নামাজের পর তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আইয়ের মসজিদে হিমুর প্রথম নামাজে জানাজা হয়। লক্ষীপুর জেলার মেয়ে হুমায়রা হিমু মঞ্চনাটকের মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন।

 

২০০৬ সালে টেলিভিশন নাটক ‘ছায়াবীথি’-তে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। একই বছর পিআই (প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর) নামে একটি টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করেন। তারপর ‘বাড়ি বাড়ি সারি সারি’, ‘হাউস ফুল’, ‘গুলশান এভিনিউসহ অনেক জনপ্রিয় নাটক উপহার দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। ছোটপর্দায় পেয়েছেন বেশ জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি। কমেডি গল্পের নাটক মানেই হুমায়রা হিমু। ২০১১ সালে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রেও পা রাখেন হিমু।

 

সম্প্রতি দেওয়ান নাজমুলের পরিচালনায় ‘তোরে কত ভালোবাসী’ নামে একটি সিনেমার কাজ শেষ করেন তিনি।

 

এ বিষয়ে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোর্শেদ আলম বলেন, সুরতহাল ও পরিবারের বক্তব্যে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, হুমায়রা হিমু আত্মহত্যা করেছেন। কয়েক দিন ধরে হুমায়রা হিমুর সঙ্গে তার প্রেমিক রুফির ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিও গ্রেপ্তার হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version