অন্তহীন অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। অভিযোগের পর তদন্ত কমিটি হয়; তদন্ত হয়। কিন্তু অধিকাংশ তদন্ত প্রতিবেদনই থেকে যায় আড়ালে। শাস্তিও হয় না তেমন একটা। প্রত্যাহার, সাময়িক বরখাস্ত, বদলি এর মধ্যেই আটকে থাকে। একশ্রেণির অসাধু পুলিশ সদস্যের নানা অপকর্ম, অনিয়ম ও অপরাধের কারণে সরকারি এ সংস্থাটি এখন নানা প্রশ্নের মুখে। পুলিশের অপরাধ প্রমাণের পরে মাঝে মধ্যে শাস্তি হলেও থেমে নেই পুলিশের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, অপহরণ, খুন, ছিনতাই, নির্যাতন, আটক করে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়াসহ প্রচুর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ অভিযোগের মাত্রা বেড়েই চলেছে। কিছু অভিযোগ পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নজরে আসলে অনেক ঘটনাই থেকে যায় লোকচক্ষুর আড়ালে। রাজনৈতিক তদবিরে বদলি এবং পদোন্নতির কারণে অনেক পুলিশ সদস্যই তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পর্যন্ত পাত্তা দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, পুলিশ এখন বেপরোয়া।
পুলিশের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক যে অভিযোগগুলো উঠছে তার মধ্যে যে একটি অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়, সেটি হলো থানায় ধরে নিয়ে গিয়ে অর্থ আদায়। এসব অভিযোগে ভুক্তভোগী অনেকেই থানায় অভিযোগ দেয়। কিন্তু নিজ বাহিনীর বিরুদ্ধে হওয়া অনেক অভিযোগই আড়ালে থেকে যায়। গত মাসে রাজধানীর মিরপুরে একটি জুতার দোকানের কর্মচারী মো. ফরিদকে মাঝপথে আটকে থানায় নিয়ে যায় শাহ আলী থানার এক এসআই। মাদকের মামলায় আসামি করার ভয় দেখিয়ে তার পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদাও দাবি করা হয়। পরে অর্ধেক টাকা দিয়ে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনে তার পরিবার। গণমাধ্যমের খবরে এমন অভিযোগ প্রায়ই আসছে। কিন্তু এসব অভিযোগে কী ব্যবস্থা নেয় পুলিশ? মিরপুরের ওই ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর অভিযুক্তকে প্রত্যাহার বা ক্লোজ করেই দায় সারে পুলিশ।
হাতে গোনা কয়েকজন বাদে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আপদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান। সিংহভাগই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। পুলিশের নিম্ন কিংবা মধ্যম মান থেকে শুরু করে অনেক কর্মকর্তাই বিশাল বাড়ি ও ফ্লাটের মালিক হয়েছে। অবৈধভাবে অনেকে সম্পত্তি অর্জন করলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আইনের রক্ষক হয়েও পুলিশ বিভিন্ন কারণে প্রতিষ্ঠানটির ভক্ষক হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবের কারণে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নানা রকম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। অনেক পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতি নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। অনেক কর্মকর্তা গুলশান-বনানীতে বিলাসী জীবন-যাপন করেন। সাধারণত থানার ওসি বা অফিসার ইনচার্জ হিসেবে একজন ইন্সপেক্টর বা পরিদর্শক পদায়ন হন। একজন পরিদর্শক নবম গ্রেডের বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। কিন্তু অনেক কর্মকর্তার চলাফেরা বিলাসী পারিবারিক জীবন থাকে চোখে পড়ার মতো।
মামলার তদন্ত ও গ্রেপ্তার বাণিজ্য করে পুলিশের এসআই থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ বেশকিছু কর্মকর্তা বিলাসী জীবন-যাপন করেন। প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ অহরহ। সম্প্রতি নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়া পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ দুদকের জালে আটকা পড়েছেন। এতেই দেশের পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আতঙ্ক। পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের মতো ব্যক্তিকে সংস্থাটি আইনের জালে আটকে ফেলা হয়েছে। এরপরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে দুর্নীতিপ্রবণ এই সেক্টরটিতে। দেড় দশক ধরে মানুষ দেখে আসছে পুলিশের দোর্দণ্ড প্রতাপ। প্রান্তিক পর্যায়ের কনস্টেবল থেকে শুরু করে শীর্ষপদ পর্যন্ত মানুষ সহ্য করেছে পুলিশি দৌরাত্ম্য। অনেকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার, নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। মিথ্যা মামলায় আসামি করে অর্থ আদায় করেছেন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা। মাদকদ্রব্য ঢুকিয়ে দিয়ে করা হয়েছে মিথ্যা মামলা। গায়েবি মামলার আসামিও করা হয়েছে লাখ লাখ মানুষকে। ভুক্তভোগী মানুষের এসব সহ্য করা ছাড়া কিছুই করার ছিল না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশের উচ্চপদস্থ ২০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দুদকের হাতে রয়েছে। এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রভাব খাটানো, পেশিশক্তি প্রদর্শন, মানি লন্ডারিং, অর্থপাচার, দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি), খুলনা, যশোর, বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার, সিআইডি, পিবিআই, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, পুলিশ হাসপাতাল, শিল্পাঞ্চল পুলিশসহ অন্যান্য শাখার ২০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুই থেকে পাঁচ বছর ধরেই চলছে অনুসন্ধান। ফাইলগুলো বাধা রয়েছে লাল ফিতায়। ২০ কর্মকর্তার মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৫ জন, বাকি ৫ জন সাবেক।
কর্মরতদের মধ্যে র্যাব-২ ঢাকার তেজগাঁওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রমোটি) উত্তম কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাড অ্যান্ড ফিন্যান্স) এমএ মাসুদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে ২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। সিআইডির পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ সম্পদ বৈধ করার জন্য সাউদার্ন পার্ক সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি খোলার অভিযোগ, সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল হামিদ ও তার স্ত্রী নিশাতের বিরুদ্ধে ঘুষের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ আড়াল করতে সম্পত্তি ক্রয়সহ মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ, রাজশাহী সারদার পুলিশ একাডেমির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক হামিদুল আলমের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
খুলনার খালিশপুর পুলিশ লাইনসের আরআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ৬-এর পরিদর্শক আবুল বাশারের বিরুদ্ধে বেআইনি ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে ও পেশিশক্তি দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদের বিরুদ্ধে লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে অপরাধলব্ধ আয়ের উৎস আড়াল করাসহ মানি লন্ডারিং এবং অবৈধ সম্পদ অর্জন, কুমিল্লা অঞ্চলের সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, ঢাকার আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক জাবেদ মাসুদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জন, রাজশাহী পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক ফরিদুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, ঢাকার পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে পাচার, নিজ ও স্ত্রীর নামে দেশে-বিদেশে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
যশোর জেলা পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, অতিরিক্ত আইজিপি হেমায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে টঙ্গী, গাজীপুরে দুটি প্লট, ৩০০ ফিটে পুলিশ প্রকল্পে একটি প্লট, সাভার পুলিশ হাউজিংয়ে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট, জোয়ার সাহারা পুলিশ প্রকল্পে প্লট, ঢাকার উত্তরায় ফ্ল্যাট ও প্লট, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ছয়তলা বাড়ি, গোপালগঞ্জে পেট্রোল পাম্প, স্কুল, কলেজ, বাড়িসহ অন্যান্য অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া পুলিশ পরিদর্শক ওবায়দুল হকের বিরুদ্ধে ১০টি ব্যাংকসহ বিকাশ ও নগদের ১৬টি হিসাবে ২০০২ সাল থেকে ৯১ কোটি ৮২ লাখ টাকার লেনদেন, সরকারি চাকরিজীবী হয়ে নিজেকে চারটি প্রতিষ্ঠানের মালিক দেখিয়ে অবৈধ আয়ের উৎস্য গোপন করে ভাই আজিজুল হকের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অর্থ আদান-প্রদান পূর্বক অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ এবং সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে শত শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।
পুলিশের সাবেক পাঁচ কর্মকর্তার মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান জোনের সাবেক অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল হাসান ফিরোজের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জন, সাবেক পুলিশ পরিদর্শক আবদুল হক খান ও তার মেয়ে সাদিয়া আফরোজের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে পুলিশ বিভাগে কর্মরত থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার, এনকাউন্টারের ভয় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া, বগুড়া জেলার সাবেক পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞার বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক এবং খুলনা বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের সাবেক ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারি ওষুধ চুরিসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দুদকের অনুসন্ধানে রয়েছে ২ হাজার ২১৫টি ফাইল। তাদের মধ্যে অর্ধশত আমলা, সাবেক ও বর্তমান মিলে অন্তত ২০ পুলিশ কর্মকর্তার ফাইল দীর্ঘদিন ধরে আটকা রয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা বলছেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয় কথাবার্তা বা কাগজকলমেই থেকে যাচ্ছে। বাস্তবে দুদক কিংবা সরকার শক্ত অবস্থান না নেওয়ায় বেড়েই চলেছে দুর্নীতি।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স ঘোষণা এক বিষয় আর দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম বাস্তবায়নে পরিবেশ সৃষ্টি করা আরেক বিষয়। ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালীদের ওপর হাত দেওয়া কঠিন; এমন ধারণা পোষণ করে দুদক। এজন্য আলোচনায় আসা ব্যক্তিদের অনুসন্ধানের আওতায় এনে লম্ফজম্প করে সংস্থাটি। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দায় সরকারকে অবশ্যই নিতে হবে। এখানে সরকারের দায় আছে। কারণ পুলিশ কর্মকর্তারা এককভাবে দুর্নীতি করেননি। সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ, সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ প্রসঙ্গে তিনি জানান, এ দুজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, অবৈধ সম্পদের মালিকানা, স্বর্ণপাচার হোক; পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে অনেক অংশীজন, পরিচালনাকারী ছিলেন; সুরক্ষাকারী অনেকে ছিলেন। তাদের দুর্নীতিরও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
চলমান দুর্নীতিবিরোধী এসব কার্যক্রমের বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিটি দপ্তর ২৪ ঘণ্টাই আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। হটলাইন হোক বা লিখিত অভিযোগ হোক, দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোনো অভিযোগই আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। আপনারা (গণমাধ্যম) যেটাকে অভিযান বলছেন, আমরা সেটিকে বলছি কাজ। দুদক যেসব আকস্মিক অভিযান পরিচালনা করে, তাতে দেখবেন দায়ীদের গ্রেপ্তার করা হয় না; বরং সতর্ক করা হয়। এসব অভিযান নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমনে নতুন সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। দুর্নীতি বন্ধে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে সর্বশক্তিও নিয়োগ করেছে কমিশন। নিয়োগবাণিজ্য, ভর্তিবাণিজ্য, কমিশনবাণিজ্য, ফাইল আটকে রাখা, ঘুষ গ্রহণ ও প্রদানসহ যেখানেই দুর্নীতির গন্ধ পাওয়া যাবে সেখানেই দুদক হাজির হয়ে যাবে। দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, অনুসন্ধান ও তদন্ত আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করা উচিত। এ ব্যাপারে কমিশন চেষ্টা করছে। তিনি দাবি করেন, কমিশনের কার্যকর ভূমিকার কারণেই অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজ আগের চেয়ে দ্রুত হচ্ছে। পুলিশের ২০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধীরগতির অনুসন্ধানের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।
দুদক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে ২৪ ঘণ্টাই দুদকের গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে। দুর্নীতিবাজদের হাতেনাতে ধরার জন্য নজরদারি ও আকস্মিক সাঁড়াশি অভিযানও চলছে। এ নিয়ে দুর্নীতিবাজদের মধ্যে দেখা দিয়েছে দুদক আতঙ্ক। কখন কোথায় দুদক হানা দেয় এ ভয়েই অস্থির সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ব্যাংক, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরাও এ আতঙ্কের বাইরে নয়। বিশেষ করে দুদকের হটলাইন ১০৬ নম্বরে কে কখন ফোন করে কী তথ্য দিয়ে দেয়, এ আতঙ্কই কাজ করছে বেশি। এর পাশাপাশি দুদক কর্মকর্তাদেরও কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে আসামির সঙ্গে গোপনে আঁতাত করায় এক পরিচালককেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য