-->
মানবতাবিরোধী অপরাধ

পুলিশের তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
পুলিশের তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে

গণঅভ্যুত্থান দমনে হত্যা, গণহত্যা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের তালিকা তৈরি করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) তদন্ত সংস্থা। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তালিকার জন্যও সংস্থাটি নাম সংগ্রহ শুরু করেছে। আইসিটি বিভিন্ন বাহিনীকে একাধিক চিঠি পাঠিয়েছে দায়িত্ব পালনকারী সদস্য এবং আন্দোলনের সময় বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেয়া সদস্যদের তথ্য জানতে চেয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে আইসিটির তদন্ত সংস্থার সমন্বয়কারী মো. মাজহারুল হক জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ (ডিএমপি) বিভিন্ন বাহিনীকে বেশ কয়েকটি চিঠি দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের সময় তাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয়েছে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সংস্থাটি বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার পর আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের ভূমিকা তদন্ত করবে এবং তারপর তাদের অপরাধ মাত্রা অনুযায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে।

গত ৩ ও ৬ অক্টোবর ডিএমপি কমিশনারকে দেয়া আইসিটির দুটি চিঠির অনুলিপি পেয়েছে দ্য ডেইলি স্টার। প্রথম চিঠিতে ডিএমপির আওতাধীন সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পরিদর্শকদের (তদন্ত) বিবরণ চেয়েছে আইসিটি। ডিএমপির গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত সব উপ-পরিদর্শক ও পরিদর্শকদের তালিকাও চেয়েছে সংস্থাটি। দ্বিতীয় চিঠিতে সংস্থাটি ডিএমপির প্রতিটি বিভাগ ও ইউনিটের জন্য ইস্যু করা ১৮-১৯ জুলাই এবং ৩-৫ আগস্টের কমান্ড সার্টিফিকেটের (সিসি) সত্যায়িত অনুলিপি চেয়েছে।

কমান্ড সার্টিফিকেটে পুলিশ সদস্যদের নাম, পদবি, দায়িত্বের সময়, দায়িত্বের উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব এলাকার তথ্য থাকে। সেই সঙ্গে দায়িত্ব পালনের সময় বাহিনী সদস্যরা কতগুলো আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে গেছে সেই তথ্যও থাকে। কমান্ড সার্টিফিকেটের সাহায্যে আইসিটি তদন্ত সংস্থা বিশ্লেষণ করতে পারবে যে আন্দোলনের সময় নিরস্ত্র শিক্ষার্থী ও জনগণের ওপর কোন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ও কত গুলি ব্যবহার করা হয়েছে। আইসিটি তাদের চিঠিতে ডিএমপিকে এই সময়ের মধ্যে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে। অপর চিঠিতে সংস্থাটি ডিএমপি কমিশনারকে ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস ইউনিটের একটি অর্গানোগ্রাম এবং ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তা ও তাদের পদবি জানতে চেয়েছে।

ডিএমপির ডেপুটি কমিশনার (হেডকোয়ার্টার্র ও অ্যাডমিন) তাহেরুল হক চৌহান জানান, তারা শনিবার আইসিটি থেকে চিঠি পেয়েছেন। ডিএমপির ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস ইউনিটকে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও তথ্য সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা বিস্তারিত তথ্য দিতে পারব।

আইসিটির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে নিশ্চিত করেছেন, তারা রাজনৈতিক সংগঠন, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের একটি তালিকা তৈরি করছে। এই রাজনৈতিক দলটির অনেক নেতাকর্মীকে ছাত্র আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে। কিছু কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন, আন্দোলনের সময় অপরাধের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ বাহিনীকে আরও একটি ধাক্কা দেবে। কারণ, বাহিনীর সদস্যরা হত্যাসহ শত শত মামলায় আসামি হবে।

অতিরিক্ত সুপারিন্টেনডেন্ট পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় আমরা ইতোমধ্যেই ভুগছি। এখন যদি কমান্ড সার্টিফিকেট বিশ্লেষণ করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে পুলিশের অনেকেই এমন মামলায় অভিযুক্ত হবেন, সেটা তিনি করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এই তালিকার বিষয়টি মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মনোবল আরও ভেঙে দেবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের ঘটনায় অন্তত ৪৪৯ জন পুলিশ সদস্যকে ৩০০টি মামলায় আসামি করা হয়েছে, যার বেশিরভাগই হত্যা মামলা। এসব মামলায় পুলিশের দুই সাবেক মহাপরিদর্শকসহ ১৭ কর্মকর্তা এবং বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জুলাই-আগস্টে ডিএমপিতে দায়িত্ব পালন করা এক সাব-ইন্সপেক্টর বলেন, সিনিয়রের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা দায়িত্ব পালন করেছি। এমনকি ১৭-১৮ জুলাই এবং ৩-৫ আগস্ট কমান্ড সার্টিফিকেট প্রতিবেদনও ঠিকভাবে লেখা হয়নি, অনুসরণও করা হয়নি। কারণ, ওই সময় আন্দোলন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। কাজেই কমান্ড সার্টিফিকেট প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে প্রকৃত চিত্র পাওয়া কঠিন হবে। তবে, আমরা এখন মামলার সম্মুখীন হচ্ছি।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version