- আধিপত্য বিস্তারে চলছে সংঘর্ষ
- খুন, ছিনতাই-চাঁদবাজি নিত্যসঙ্গী
- আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারা
গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের লুণ্ঠিত দেড় হাজার অস্ত্রের হদিস পাওয়া যায়নি। তবে এসব অস্ত্র রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রায় প্রতিদিনই সেখানে চলছে গোলাগুলি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। গত আড়াই মাসে মোহাম্মদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১০ জন। আহত হন শতাধিক ব্যক্তি। মূলত মাদক কারবারিরা আধিপত্য বিস্তারের জেরে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। এতে স্থানীয়দের দিন কাটছে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায়।
সূত্র বলছে, মোহাম্মদুপুর থানা থেকে ৫ আগস্ট রাতে যে অস্ত্রগুলো লুট হয়; সেগুলোর বেশ কিছু এখন ব্যবহৃত হচ্ছে জেনেভা ক্যাম্পে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই ক্যাম্পে বড় অভিযান চালায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উদ্ধার হয়নি আগ্নেয়াস্ত্র। সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলছেন, লোকবল ও টহল ভ্যান সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতায় এসব নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। লোকবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পেলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড দ্রুতই নিয়ন্ত্রণে নেওয়া যাবে।
সোমবার (৭ অক্টোবর) জেনেভা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, জি-ব্লকে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই গ্রুপের তুমুল সংঘর্ষ চলছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ক্যাম্পের মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে ১০-এর অধিক গ্রুপ। এই গ্রুপগুলোর মূলহোতা হচ্ছে ভূঁইয়া সোহেল, চুয়া সেলিম, আরমান, পলু কসাই, সৈয়দপুরিয়া, ছটু মাসুদ, মনু, চারকু, রাজসহ একাধিক গ্রুপ। তাদের অধীনে ক্যাম্পের অন্তত ৫০০ অস্ত্রধারী আছে, যারা মাদক বিক্রি, মাদকের চালান ক্যাম্পে আনা ও নেওয়ার কাজ করে। এরাই বিভিন্ন সময় জড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষে। এসব কারণে গত দুই মাসে এ ক্যাম্পে হত্যার শিকার হয়েছেন শাহনেওয়াজ কাল্লু ছাড়াও ক্যাম্পের বাবুল হোসেনের ছেলে অটোরিকশাচালক সানু, শাহেন শাহ ও মো. সাগর। আগে এখানে সংঘর্ষ হতো দা, বঁটি কিংবা চাপাতি নিয়ে। সরকার পতনের পর সবাই স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, ৫ আগস্ট গণভবন ও বিভিন্ন থানা লুট করতে যায় ক্যাম্পের বাসিন্দারা। সেখান থেকেই বিপুল অস্ত্র তারা লুট করে। এসব অস্ত্র দিয়েই চলে এখন সংঘর্ষ।
এ ব্যাপারে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান বলেন, বিহারি ক্যাম্পেও অভিযান চালাবেন তারা। এজন্য উচ্চপর্যায়ে কথাবার্তা চলছে। তারা অনুমতি দিলেই সেখানে অভিযান চালানো হবে।
জানা গেছে, রোববার (৬ অক্টোবর) সকালে মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেড এলাকায় বেসরকারি খাদ্যপণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নেসলের গাড়ি থামিয়ে ১২ লাখ টাকা ও ব্যাংকের চেক বই ছিনিয়ে নেয় একদল ছিনতাইকারী। সেদিন হাউজিংয়ের ৩ নম্বর সড়ক দিয়ে যাচ্ছিল নেসলে কোম্পানির পণ্যবহনকারী গাড়িটি। তখন কয়েকটি মোটরসাইকেলে আসা ছিনতাইকারীরা গাড়িটির গতিরোধ করে। এরপর তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গাড়ির সামনের গ্লাসে আঘাত করতে থাকে। এতে চালক গাড়িটি থামাতে বাধ্য হন। তার পর ঘটে চাঞ্চল্যকর ছিনতাইয়ের ঘটনা। এ ঘটনায় নেসলের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে সেদিনই একজন মামলা করেছেন মোহাম্মদপুর থানায়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মঙ্গলবার রাতে মনির পালোয়ান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও ছিনতাইকৃত টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
নেসলের এরিয়া ম্যানেজার দিদারুল আলম বলেন, আমরা সেদিনই মামলা করেছি। পুলিশ কাজ করছে। আশা করছি আমরা ছিনতাই হওয়া টাকা ফেরত পাব। অপরাধীরা আইনের আওতায় আসবে।
শুধু এ ঘটনাই নয়, গত এক সপ্তাহে মোহাম্মদপুর থেকে গাবতলীর দিকে যেতে সোয়ারীঘাট বেড়িবাঁধ সড়ক, বেড়িবাঁধ চার রাস্তার মোড় থেকে বসিলা এবং গাবতলী সেতু এলাকায় ১০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর কোনোটিরই মামলা হয়নি।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত শুধু মোহাম্মদপুরেই খুন হয়েছে ১০ জন। এসব খুনের নেপথ্য কারণ হচ্ছে আধিপত্য বিস্তার, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ ও বাজার দখল। প্রকাশ্যে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া, গোলাগুলি যেন এই এলাকায় নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ রুহুল কবীর খান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। মাঠে যৌথ বাহিনীর সদস্যরাও আছেন। আশা করি দ্রুত সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য