-->
টিআইবির প্রতিবেদন

বিচারিক সেবায় সর্বোচ্চ ঘুষ, দুর্নীতির শীর্ষে বরিশাল বিভাগ

অনলাইন ডেস্ক
বিচারিক সেবায় সর্বোচ্চ ঘুষ, দুর্নীতির শীর্ষে বরিশাল বিভাগ

দেশের সেবা খাতগুলোর মধ্যে বিচারিক সেবা পেতে টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিতে হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিচারিক সেবার ক্ষেত্রে প্রতি খানাকে গড়ে ৩০ হাজার ৯৭২ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এর পরের অবস্থানে ভূমি, ব্যাংকিং, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সেবাগ্রহণে ঘুষ লেনদেন বেশি।

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ও ঘুষ লেনদেন বরিশাল বিভাগে। এই বিভাগের ৮২ শতাংশ পরিবার সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হয়েছে, আর ৬১.৯ শতাংশ পরিবার ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে। খুলনা বিভাগে সেবা পেতে দুর্নীতির শিকার হয়েছে ৭৭.৭ শতাংশ পরিবার এবং ৫২.৭ শতাংশ পরিবার ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত জরিপে ১৫ হাজার ৫১৫টি খানার তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সেবা খাতে ঘুষ লেনদেন ও দুর্নীতি: ২০২৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে প্রাক্কলিত মোট ঘুষের পরিমাণ ১০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। এটি দেশের মোট জিডিপির ০.২২ শতাংশ এবং সংশোধিত জাতীয় বাজেটের ১.৪৩ শতাংশ। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ বছরে সেবা খাতে প্রাক্কলিত ঘুষের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাসপোর্ট সেবা পেতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির শিকার হয়েছে ৭৪.৮ শতাংশ পরিবার। বিচারিক সেবায় গড় ঘুষের পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৯৭২ টাকা, ভূমি সেবায় ১১ হাজার ৭৭৬ টাকা, ব্যাংকিং সেবায় ৬ হাজার ৬৮১ টাকা এবং বিআরটিএর সেবায় ৬ হাজার ৬৫৪ টাকা।

খাতভিত্তিক দুর্নীতির মাত্রা: বিদ্যুৎ খাতে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে ১৮.৪ শতাংশ পরিবার। পাশাপাশি, আদিবাসী, নারী এবং প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রেও সেবাগ্রহণে দুর্নীতি এবং ঘুষের শিকার হওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। এতে তাদের আর্থ-সামাজিক সক্ষমতা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

টিআইবির সুপারিশ: টিআইবি দুর্নীতি প্রতিরোধে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • সেবাখাতে জড়িত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।

  • সেবাগ্রহীতা ও সেবাদাতার সরাসরি যোগাযোগ কমাতে ডিজিটালাইজেশন কার্যকর করা।

  • ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু এবং এর সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা।

  • জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের আলোকে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে আচরণবিধি প্রণয়ন ও প্রয়োগ।

  • সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে গণশুনানি এবং সামাজিক নিরীক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করা।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।”

এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে সেবা খাতে দুর্নীতির প্রকৃতি এবং এর আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশা করছে টিআইবি।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version