অর্থপাচার, ঋণ অনিয়ম, অতিরিক্ত ব্যয় এবং নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের কারণে বার বার শিরোনাম হয়েছে বেসরকারি খাতের এনআরবিসি ব্যাংক। এসব কারণে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ তিনজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবার ব্যাংকটির ৬ বিভাগীয় প্রধানের অ্যাকাউন্টের তথ্য তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। আগামী পাঁচদিনের মধ্যে এদের লেনদেন বিবরণীসহ যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
যেসব কর্মকর্তার তথ্য চাওয়া হয়েছে তারা হলেন, হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স মোহাম্মদ কামরুল হাসান, হেড অব আইটি দিদারুল হক মিয়া, হেড অব এমআইএস মো. রাজিদুল ইসলাম, চিফ ডিলার মুহাম্মদ জমির উদ্দিন, হেড অব সিকিউরিটি ফোর্সেস ফরহাদ সরকার এবং সিএফও মো. জাফর ইকবাল হাওলাদার। এদের প্রত্যেকের অ্যাকাউন্ট খোলার ফরম, হালনাগাদ লেনদেন বিবরণীসহ সব ধরনের তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে।
গত ১৪ নভেম্বর বিভিন্ন অনিয়ম-জালিয়াতিতে আলোচিত এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যানের পদ হারানো মোহাম্মদ আদনান ইমাম এবং ব্যাংকটির সিএফও মো. জাফর ইকবাল হাওলাদারের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে বিএফআইইউ। এখন আবার জাফর ইকবাল হাওলাদারের অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
বিগত সরকারের আমলে দেশের পুঁজিবাজারে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। এসব অনিয়মের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ে এনআরবিসির চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল, সাকিব আল হাসান, জাভেদ এ মতিন, ফরচুন শুজের মিজানুর রহমান ও আদনান ইমামরা ছিলেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত ইসলামের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে গড়ে ওঠা চক্র। কারসাজির মাধ্যমে তাঁরা বিভিন্ন শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ভোরের আকাশকে জানান, সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে আমরা তারল্য সহায়তা দিচ্ছি। এই সহয়তার পরিমাণ হয়তো আরো বাড়াতে পারি। আমরা আস্থা ফেরাতে চাই। একই সঙ্গে ব্যাংকের টাকা নিয়ে গ্রাহকদের আতঙ্কিত না হতে বলেন তিনি। তিনি বলেন, পাচার করা অর্থ ফরমাল চ্যানেলে হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করবে। কিন্তু হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার হলে সেটা তদন্ত করা কঠিন। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এ বিষয় নিয়ে কাজ করছে। তবে এসব বিষয়ে বিএফআইইউ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কোনো তথ্য শেয়ার করে না। ঋন অনিয়ম নিয়ে কাজের অগ্রগতি বিষয়ে তিনি বলেন, আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ ইতোমধ্যে অনেক ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। এ বিষয়েও তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে কোনো তথ্য দেয়নি।
এর আগে ৭০০ কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৭ সালে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া ও তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান মুজিবুর রহমানকে অপসারণে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংককে। তৎকালীন চেয়ারম্যান ফরাসত আলীকে বোর্ড থেকে পদত্যাগ করতে হয়। মুজিব ও ফরাসতকে পরিচালক পদ থেকে দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নিষিদ্ধ করে এবং পরবর্তীকালে বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়।
কিন্তু নতুন পর্ষদে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়া এসএম পারভেজ তমালের বিরুদ্ধে আগেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল এবং ব্যাংকটিতে এখনো অনিয়ম অব্যাহত আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংকটির সভার কার্যবিবরণী এবং অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন ও সুপ্রিম কোর্টের নথির শত শত পৃষ্ঠা গত ছয় মাস ধরে বিশ্লেষণ করে ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ অসংখ্য অনিয়ম, এমনকি অস্ত্র দিয়ে ভীতি সৃষ্টির করার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
ব্যাংকটির উত্তরা শাখার ছয়জন গ্রাহকের অন্তত ৩৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার রপ্তানি আয় দেশে ফেরত আসেনি এবং শাখাটি এই তথ্য আড়াল করেছে বলে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও মামলার নথি থেকে জানা গেছে। এছাড়াও এদের মধ্যে পাঁচটি কোম্পানি ৯০ কোটি টাকার এলসির বিপরীতে কোনো ধরনের রপ্তানি করেনি। যার ফলে ব্যাংকটির ডলারের খরচ হলেও তা আর ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না।
২০২১ সালের ১৯ আগস্টে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে, উত্তরা শাখা গত চার বছরে এই অর্থ ফোর্সড লোন হিসেবে দেখায়। তথ্য আড়াল করার সুবিধার্থে এরপর সেটিকে সাধারণ ঋণে রূপান্তরিত করে বারবার পুনঃতফশিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে ব্যাংকের সভার কার্যবিবরণী থেকে। রপ্তানির অর্থ না আসার পরও রপ্তানি নথি জমা না দিয়েই অর্থ তুলে নেওয়া এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটির সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত আছেন ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আদনান ইমাম।
গত বছরের ১১ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ব্যাংকটির ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অভিযোগ করা হয়েছে, প্রতারণামূলকভাবে তারা ব্যাংক থেকে ৭৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এবং ইক্সোরা অ্যাপারেলস নামে একটি সোয়েটার ফ্যাক্টরির নাম ব্যবহার করে পাঁচ কোটি ৯৭ লাখ টাকা পাচার করেছে। রপ্তানি আয় দেশে না আনা ছয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি হলো এই ইক্সোরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এনআরবিসি ব্যাংকে অডিটের পর অডিট করেছে। কিন্তু কোনো ধরনের বিচারিক বা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ইক্সোরার নিবন্ধন সংক্রান্ত নথির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত আছেন আদনান ইমাম। এর আগে বেনামি ঋণের মাধ্যমে অর্থপাচারের অভিযোগ তদন্ত চলাকালীন এনআরবিসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান পারভেজ তমালের সঙ্গে তাকেও ব্যাংকের বোর্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ইক্সোরার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও অস্বীকার করেন আদনান।
তবে দুদকের তদন্ত অনুসারে, ইক্সোরা অ্যাপারেলস ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে পাঁচ কোটি ৯৭ লাখ টাকার পোশাকের ১২টি চালান যুক্তরাজ্যে পাঠিয়েছে। কিন্তু এ বাবদ রপ্তানি আয় দেশে আনেনি। ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর এনআরবিসি ব্যাংকের ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন থেকে তৈরি করা নথি অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকটির বৃহত্তম ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে ইক্সোরা ১৯তম। কোম্পানিটি এর মোট ঋণের মধ্যে ১১৯ কোটি টাকা ২০২৭ ও ২০২৮ সাল পর্যন্ত পুনঃতফশিল করিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এরপরও সময়মতো কিস্তি পরিশোধ না করায় কোম্পানিটির অতিরিক্ত বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ছয় কোটি টাকায়।
কোম্পানিটি ২০১৬ সালের আগস্টে এনআরবিসির সঙ্গে ব্যাংকিং শুরু করে। ওই বছরই কোম্পানিটি যখন প্রথম ঋণ নেয়, তখন এর মালিকদের মধ্যে রুহুল আমিন ভূঁইয়া ও মাসুদ রানার কাছে ছিল ৪০ শতাংশ করে শেয়ার। এছাড়া, তাদের স্ত্রীদের প্রত্যেকের নামে ছিল ১০ শতাংশ করে মালিকানা। দুদকের মামলায় রুহুল আমিন ভূঁইয়া ও মাসুদ রানাকে আসামি করা হয়েছে।
২০২৩ সালে এনআরবিসি ব্যাংকের সবচেয়ে বড় খেলাপি ঋণগ্রহীতা পলিগণের মোট বকেয়া ঋণ গত নভেম্বরে দাঁড়িয়েছিল ৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকায় এবং ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই টাকা আদায়ে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করা হয়েছে। ২০২১ সালে কোম্পানিটির ৮৩ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় ভাইব্রানিয়াম নামে আরেকটি কোম্পানি। ভাইব্রানিয়ামের নিবন্ধন নথি অনুযায়ী, এর চেয়ারম্যান বদরুল হাসান পাটোয়ারী। তিনি জেনেক্স ইনফোসিস নামে একটি কোম্পানির সেক্রেটারি। সেই জেনেক্স ইনফোসিসের চেয়ারম্যান আদনান ইমাম।
এনআরবিসি ব্যাংক কোম্পানিটির ঋণসীমা অন্তত আটবার নবায়ন করেছে এবং তিনবারই হয়েছে বদরুল হাসান পাটোয়ারী মালিকানা নেওয়ার পর। দুদকের মামলায় বদরুল হাসান পাটোয়ারীকে আসামি করা হয়নি। অথচ, দুদকের তদন্তে দেখা গেছে, একের পর এক ঋণ নিয়েও কোম্পানিটি পরিশোধ করেননি। দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রাহকের লেনদেন সন্তোষজনক না হওয়ার পরও ঋণ দেওয়া হয়েছিল। ২০২৩ সালের জুনে বাংলাদেশ ব্যাংক কোম্পানিটিকে ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পাঁচটি আদেশের বিপরীতে তিন লাখ ৫৮ হাজার ২৭৩ মার্কিন ডলার মূল্যের রপ্তানি আয় সামঞ্জস্য করার জন্য ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়।
এনআরবিসি ব্যাংকের ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কম্প্লায়েন্স ডিভিশনের (আইসিসিডি) ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পলিগণ ফ্যাশন লিমিটেড নামে আরেকটি কোম্পানি আট লাখ ৩৩ হাজার ৯২৮ মার্কিন ডলার বা নয় কোটি ১০ লাখ টাকার রপ্তানি আয় দেশে আনেনি। কোম্পানিটি পোশাকের চালান পাঠাতেও ব্যর্থ হয় এবং তিন দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের এলসি নিষ্পত্তি করতে পারেনি, যা খোলা হয়েছিল উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল আমদানির জন্য। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির সবচেয়ে বড় খেলাপি ঋণগ্রহীতা ছিল পলিগণ। গত বছরের নভেম্বরে কোম্পানিটির মোট বকেয়া ঋণ দাঁড়িয়েছিল ৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকায় এবং ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই টাকা আদায়ে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করা হয়েছে। এরপর ব্যাংকটির উত্তরা শাখা গাজীপুরভিত্তিক কোম্পানির দায় ৭৪টি ফোর্সড লোনে পরিণত করে।
২০২২ সালের আইসিসিডি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাংকটির ২০তম বৃহত্তম ঋণগ্রহীতা ছিল ব্লেসিং নিটওয়্যার লিমিটেড। কোম্পানিটির ছয় লাখ ৬১ হাজার ৮৫ ডলার (সাত কোটি ২০ লাখ টাকা) মূল্যের রপ্তানি আয় ব্যাংকে জমা করা হয়নি। আরও কয়েকটি এলসির বিপরীতে চালান করতে না পারায় ব্যাংককে আরও দুই দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলার (২৫ কোটি টাকা) পরিশোধেও ব্যর্থ হয়েছে কোম্পানিটি।
এসব ঘটনায় এমনটিই বোঝা যায় যে, ব্যাংকটি আমানতকারীদের স্বার্থের দিকে নজর দেয় না।
২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর এনআরবিসি ব্যাংকের ক্রেডিট রিস্ক ডিভিশনের সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ব্যাংকের মূলধনের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে নতুন গ্রাহক গ্রহণ সক্ষমতা এবং সুনাম বাড়াতে এসব ঋণ পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংক। আইসিসিডি বলছে, রপ্তানি নীতি লঙ্ঘন করে রপ্তানি এলসির মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অতএব, রপ্তানি আয় ব্যাক-টু-ব্যাক বাধ্যবাধকতা নিষ্পত্তির জন্য পর্যাপ্ত হবে না।
২০২৪ সালে এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকে গ্রাহকের সঞ্চয়ী হিসাবে সন্দেহজনক লেনদেন, উদ্যোক্তা পরিচালকের জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান এবং নিয়মের বাইরে গিয়ে অনিবাসী উদ্যোক্তাদের বেশি শেয়ার ধারণ করাসহ বেশ কিছু গুরুতর অনিয়ম খুঁজে পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি পরিচালিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অনিয়মের বিষয়ে ব্যাংকটিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই সঙ্গে এর সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে না, সে জন্য কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রবিউল ইসলামের মোবাইলে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরেও কল করা যায়নি। তবে ব্যাংকটির কমিউনিকেশন সেকশনের এক কর্মকর্তা জানান, আপাতত বিভাগীয় প্রধানদের তথ্য দেওয়া হবে। এর পর কি করা হবে তা নিয়ে আলোচনা করবেন তারা।
বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, প্রবাসী আয় আনাসহ বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়ে ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল প্রবাসী উদ্যোক্তাদের জন্য তিনটি ব্যাংক অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে অন্যতম এআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। ২০১৩ সালে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করা ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার ফরাছত আলী। তার মেয়াদে পরিচালকদের স্বাক্ষর জাল করে ঋণ অনুমোদন, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মিথ্যা তথ্য প্রদান, বেনামি শেয়ার ধারণের সুযোগ দেওয়াসহ নানা অভিযোগ ওঠে। এর ফলে ফরাছত আলীকে সরিয়ে ২০১৭ এর পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়। তখন ব্যাংকটির পরিচালনার দায়িত্বে আসেন পারভেজ তমাল। তার সময়েও ব্যাংকটিতে নানা অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট মিথ্যা তথ্য প্রদান করার কারণে কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০২৩ সাল পর্যন্ত সংশোধিত) এর ধারা ১০৯ (২) এর আওতায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০২৩ সাল পর্যন্ত সংশোধিত) এর ধারা-৩১ উপধারা (৫) (খ) এর আওতায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, দেশে ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনার লক্ষ্যে লাইসেন্সের ৪ নম্বর শর্ত পালনেও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে এনআরবিসি ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে তাদের অদক্ষতা ও দায়িত্বে অবহেলার দায়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য