শঙ্কার কারন পলাতক ৭০ জঙ্গি-সন্ত্রাসী

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
শঙ্কার কারন পলাতক ৭০ জঙ্গি-সন্ত্রাসী

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানের মুখে কারাগার থেকে পালানো বন্দিদের মধ্যে এখনো ৭০০ পলাতক রয়েছেন। পাশাপাশি, জঙ্গি সংশ্লিষ্ট মামলায় এবং শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে ৭০ জন ঝুঁকিপূর্ণ আসামি পলাতক রয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর পুরান ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানিয়েছেন কারা মহাপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন।

সম্প্রতি শাহবাগের পিজি হাসপাতালে গ্রেপ্তার অবস্থায় চিকিৎসাধীন সাবেক এক সংসদ সদস্যের ওপর হামলার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আইজি প্রিজন্স বলেন, “আমাদের অনেক সময় বন্দিদের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতে হয়। পিজি হাসপাতালে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায় আমরা এড়াতে পারি না, কারণ সেখানে আমাদের কারারক্ষীরা ছিলেন। তবে আমাদের দায়িত্বরত কারারক্ষীদের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার কারণে বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু সেখানে নিরাপত্তার অভাব ছিল। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমরা কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। তখন আর বন্দিদের সরকারি হাসপাতালে পাঠাতে হবে না।”

কারা মহাপরিদর্শক বলেন, “বর্তমানে দেশে মোট ৬৯টি কারাগার রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি কারাগার অনেক পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ। সরকার বিষয়গুলো জানেন, এগুলো অতিদ্রুত সংস্কার, মেরামত ও পুনর্নির্মাণ দরকার।” বর্তমানে কারাগারে বন্দির সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, আগের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কারণে অনেক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই সময়ে বন্দি সংখ্যা বেড়েছিল। পরবর্তীতে সেটি কমে আসে। আমাদের সব সময় ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দি থাকে। আমাদের ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার। ৫ আগস্টের আগে বন্দি ছিল ৫৫ হাজার। যদিও কোনো অবস্থানে পর সেই সংখ্যা কমে গিয়েছিল। এখন আবার বন্দির সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে এ সংখ্যা ৬৫ হাজার।”

কারা অধিদপ্তরের লোগো পরিবর্তনের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, কারা অধিদপ্তরের লোগোতে নৌকা ও অন্যান্য বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। অনেকেই আমাদের প্রশ্ন করেন, কারা অধিদপ্তরের লোগোর সঙ্গে নৌকা সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা। তখন আমরা এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারি না, কারণ এ উত্তরের কোনো নথি বা জবাব আমাদের কাছে নেই। তাই এই প্রশ্নের সম্মুখীন না হতে আমরা কারা অধিদপ্তরের লোগো পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

কারাগার ভেঙে পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের বিষয় জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের প্রধান বলেন, “গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশব্যাপী সহিংসতা ও সরকার পতনের উদ্ভূত পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে দেশের কয়েকটি কারাগারে বিশৃঙ্খলা-বিদ্রোহ করেন বন্দিরা। বাইরে থেকে কিছু কারাগারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই পরিস্থিতিতে কারাগারগুলো থেকে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন, বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত বন্দি, ও বিচারাধীন মামলার ২ হাজার ২০০ বন্দি পালিয়ে যায়। যার মধ্যে ১ হাজার ৫০০ জনকে গ্রেপ্তারের পর ফের কারাবন্দি করা হলেও এখনো ৭০০ বন্দি পলাতক রয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে ১১ জন, ৭০ জন জঙ্গি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছে। এছাড়া, আন্দোলনের পর ১১ জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্তি পেয়েছে।”

কারাগারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “৫ আগস্টের ঘটনার দেশের যে সকল কারাগার থেকে বন্দি পালিয়েছেন, তার প্রতিটি ঘটনা আমরা তদন্ত করেছি। সেখানে আমাদের অবকাঠামোগত নিরাপত্তা, কারাগারের বাইরে নিরাপত্তা, এবং প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তায় ত্রুটি পাওয়া গেছে। আমরা প্রতিটি বিষয়ই গুরুত্ব সহকারে প্রস্তাবনা আকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।”

জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে প্রথম বন্দি পালানোর ঘটনা ঘটে নরসিংদীর কারাগারে। এই ঘটনার সর্বশেষ অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এই ঘটনায় জেল সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। যদি অবহেলা পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে।” এই ঘটনায় ২০১ জন কারারক্ষী আহত হয়েছিল। পাশাপাশি, কারারক্ষী ও কারা কর্মকর্তাদের বাসভবনেও হামলা ও লুটপাট করা হয়েছে। “আমরা তাদের সহযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছি।”

কারাগারে কতজন ডিভিশন পেয়েছেন এবং রাজনৈতিক বন্দিদের ডিভিশন দেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আইজি প্রিজন্স বলেন, “কারাগারে দুই ধরনের ডিভিশন দেওয়া হয়। একটি হলো প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা ও একটি হলো যারা সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি। তাদের বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্ধান্ত দেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে অনেকেই পেয়েছেন। আবার অনেকের আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য