প্রথমবারের মতো ব্যাংকারদের জন্য সর্বনিম্ন বেতন ২৮ হাজার টাকা বেঁধে দিয়ে নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
একইসঙ্গে লক্ষ্য অর্জন করতে না পারা বা অদক্ষতার অজুহাতে চাকরি থেকে কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না বলেও জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি বছরের মার্চ থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।
গতকাল ২০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একনিষ্ঠতা, নৈতিকতা, মনোবল ও কর্মস্পৃহা অটুট রাখার লক্ষ্যে তাদের যথাযথ বেতন-ভাতা দেওয়া আবশ্যক।
তবে সম্প্রতি লক্ষ করা গেছে, কতিপয় ব্যাংক-কোম্পানির এন্ট্রি লেভেলের কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা যথাযথভাবে নির্ধারণ না করে ইচ্ছামাফিক নির্ধারণ করা হচ্ছে, যা একই ব্যাংকের অন্য উচ্চপর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের বিদ্যমান বেতন-ভাতার তুলনায় খুবই কম।
উচ্চ এবং নিম্নপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির মধ্যে এত অস্বাভাবিক ব্যবধান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার বা ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার বা ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্যাশ অফিসার অথবা সমপর্যায়ের কর্মকর্তা- যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, ব্যাংকের এন্ট্রি লেভেলে এরূপ নিযুক্ত কর্মকর্তাদের শিক্ষানবিশকালে ন্যূনতম বেতন-ভাতাদি হবে ২৮ হাজার টাকা।
শিক্ষানবিশকাল শেষে কর্মকর্তাদের প্রারম্ভিক মূল বেতনসহ ন্যূনতম মোট বেতন-ভাতাদি হবে ৩৯ হাজার টাকা। নতুন নির্ধারিত বেতন-ভাতাদি কার্যকর করার পর একই পদে আগে থেকে কর্মরত কর্মকর্তার বেতন-ভাতাদি আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি করতে হবে।
এছাড়া প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিম্ন পদে কর্মরত কর্মকর্তার বেতন-ভাতাদির সঙ্গে ব্যাংকে সর্বনিম্ন পদে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির পার্থক্য যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করতে হবে।
অনুরূপভাবে সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের জন্যও আনুপাতিক হারে বেতন-ভাতাদি নির্ধারণ করতে হবে। কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বেতন-ভাতাদি কোনো অবস্থায়ই বর্তমান বেতন-ভাতাদির চেয়ে কম হবে না।
এরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ইনক্রিমেন্ট দিয়ে বেতন-ভাতাদি নির্ধারণ করতে হবে। ব্যাংকের সার্ভিস রুলস অনুযায়ী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্যান্য ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা যথানিয়মে পাবেন।
ব্যাংক-কোম্পানি কর্তৃক নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ বা বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির জন্য আমানত সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জনের শর্তারোপ করা যাবে না। শুধু নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারা বা অদক্ষতার অজুহাতে ব্যাংক-কোম্পানির কর্মকর্তাদের প্রাপ্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
অনুরূপ অজুহাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা যাবে না। অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা বা পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নিরাপত্তাকর্মী, অফিস সহায়ক অথবা সমজাতীয় পদে বা সর্বনিম্ন যেকোনো পদে নিয়োগকৃত কর্মচারীদের ন্যূনতম প্রারম্ভিক বেতন-ভাতাদি হবে ২৪ হাজার টাকা।
কর্মচারীদের কাজ যদি চুক্তিভিত্তিক বা দৈনিক ভিত্তিতে বা আউটসোর্সিং বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে নিয়োগকৃত কর্মচারীদের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়, সেক্ষেত্রে কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এরূপ কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি নির্ধারণ করতে হবে।
তবে ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং বা মোবাইল ব্যাংকিং বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় ব্যাংকিংসেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন আউটলেটে নিযুক্ত ব্যাংকের এজেন্ট বা এজেন্টের মাধ্যমে নিযুক্ত ব্যক্তিদের বেতন-ভাতাদি-পারিশ্রমিক চুক্তি নিজ নিজ এজেন্ট কর্তৃক নির্ধারিত হয়, বিধায় তাদের ক্ষেত্রে ওপরে বর্ণিত এ নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে না।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের বেতনকাঠামো সরকার কর্তৃক জারি করা জাতীয় বেতনস্কেলের আওতাভুক্ত বা অনুসরণে নির্ধারিত হওয়ায় উক্ত ব্যাংকগুলোর জন্য ওপরে বর্ণিত নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে না।
এতে আরো বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ সার্কুলারে বর্ণিত নির্দেশনা বলবৎ থাকবে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা, সুশাসন ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যাংক-কোম্পানি আইন-১৯৯১-এর ধারা ৪৫-এর উপ-ধারা (ঘ) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হলো।
বর্ণিত নির্দেশনাগুলো পরিপালন নিশ্চিতকল্পে ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা নিজ নিজ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করে এসব নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনবেন।
মন্তব্য