-->

মোবাইল ব্যাংকিং : হাতে হাতে বেতন নিচ্ছেন শ্রমিকরা

বাণিজ্য ডেস্ক
মোবাইল ব্যাংকিং : হাতে হাতে বেতন নিচ্ছেন শ্রমিকরা

খরচ বেশি হওয়ার কারণে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন নেওয়ার ব্যবস্থা প্রত্যাহার করছে তৈরি পোশাকশিল্প খাতসহ কম আয়ের শ্রমিকরা। ফলে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা হিসেবে যা গণ্য করা হয়েছিল তা হোঁচট খাচ্ছে। আব্দুর রহমান মিরপুরের ভিশন গার্মেন্টস কারখানাতে চাকরি করেন। তার বেতন ১০ হাজার টাকা। মাস শেষ হওয়ার পরপরই তার বিকাশ নম্বরে কোম্পানি থেকে বেতনের টাকা যেত। টাকা তোলার সময় দুইশ টাকা উত্তোলন বাবদ কেটে নেওয়া হয়। এর ফলে তার মাসিক খরচে টান পড়ে। এ সমস্যা দেখা দেয় অন্যান্য শ্রমিকের ক্ষেত্রেও। এর ফলে হাতে হাতে বেতন নেওয়ার জন্য শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

শেষ পর্যন্ত কোম্পানি কর্তৃপক্ষ হাতে হাতে বেতন দেওয়া শুরু করেছে। বিকাশের মাধ্যমে দিলে টাকা তোলার সময় দুইশ টাকা খরচ হয়ে যায়। মিরপুরের ভিশন কারখানার শ্রমিক আলী হোসেন বলেন, আমরা যারা ১০-১২ হাজার টাকা বেতন পাই, আমাদের কাছে দুইশ টাকা অনেক বেশি। বিকাশের মাধ্যমে বেতন দিলে মালিকের সুবিধা হয় কিন্তু আমাদের কাছ থেকে টাকা কেটে নেয়। এই দুইশ টাকা থাকলে আমাদের একটি কাজ করা যায়। এ জন্য আমরা দাবি করেছিলাম, মালিক প্রথমে মানেনি। এরপর আমরা বিক্ষোভ করি, মালিক মেনে নিতে বাধ্য হয়। এখন আমরা হাতে হাতে বেতন নিচ্ছি।

শুধু ভিশন গার্মেন্টস কারখানাতেই নয়, পাশেই এ-ফোর ক্লথিং কারখানাসহ আশুলিয়া ও গাজীপুরের কমপক্ষে ৯টি কারখানার শ্রমিকরা জানিয়েছেন, বিকাশ বা রকেটের মাধ্যমে বেতন দেওয়ার ফলে মাস থেকে টাকা কেটে নেয়। হাতে হাতে দিলে নগদ পাওয়া যায়। এ জন্য আমরা হাতে হাতে বেতন চাই। অথবা খরচ দিতে হবে। বিকাশে বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন দিলে শ্রমিকের বাড়তি খরচ গুনতে হয়।

কোনো মালিক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন দিলে তার সঙ্গে খরচ দেওয়ার দাবি তুলেছেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুল। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন নিলে টাকা উত্তোলনের সময় শতাংশের হিসাবে খরচ নেওয়া হয় না। কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন নিলেই তাকে গুনতে হবে ২ শতাংশ হারে টাকা। এটা কাম্য নয়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন দিলে কারখানা মালিককে খরচের টাকাও দিতে হবে।

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) অন্যতম শর্ত হলো অন্তর্ভুক্তি আর্থিক সেবা। প্রান্তিক মানুষের কাছে আর্থিক সেবা সহজ ও সাধ্যের মধ্যকার খরচে পৌঁছে দেওয়া অন্যতম শর্ত। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, মোবাইল ব্যাংকিং হলো সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি, যার মাধ্যমে কম আয়ের প্রান্তিক মানুষের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে মোবাইল ফাইনান্সিংয়ে অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১০ কোটি ৯৬ লাখ ৫৩ হাজার ৯৫৫টি। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে চার কোটি ৭৯ লাখ ৪৯ হাজার ৭৬৯টি। এবং পল্লি অঞ্চলে ৬ কোটি ১৭ লাখ, চার হাজার ১৮৬টি।

ফলে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে মোবাইল ফাইনান্সিং এসব মানুষের কাছে জনপ্রিয় উঠেছে। ঢাকাতে যে শ্রমজীবী মানুষটি রিকশা চালাচ্ছে বা কোথাও কাজ করছে, সন্ধ্যা হলেই সে গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠাচ্ছে। সেই টাকা দিয়ে পরিজনরা দিনের খরচ মেটাচ্ছে। একইভাবে সন্তান বাড়ি থেকে দূরে স্কুল বা কলেজে লেখাপড়া করলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছে। পোস্ট অফিসের বিকল্প হিসাবে কাজ করছে মোবাইল ব্যাংকিং। দুই বছরের মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরিচিতি পায় গরিবের ব্যাংক হিসেবে।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পরিধি বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিল্পকারখানায় শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু কারখানা থেকে শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন মোবাইল ফাইনান্সিংয়ে পাঠানোর পর ওই টাকা উত্তোলনে বাড়তি খরচ দিতে হয়। যা ব্যাংকের টাকা উত্তোলনে বেশি খরচের কারণে কম আয়ের শ্রমজীবী মানুষ মোবাইল ফাইনান্সের মাধ্যমে বেতন নিতে চান না। বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ভোরের আকাশকে বলেন, বিক্ষোভ করেছে এটা দুর্ভাগ্য। তবে এই বিক্ষোভের যৌক্তিকতা আছে।

 

 

মন্তব্য

Beta version