-->

করোনা সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় নিরাময় অযোগ্য রোগের সমাহার: আবুল বারকাত

জাফর আহমদ
করোনা সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় নিরাময় অযোগ্য রোগের সমাহার: আবুল বারকাত
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত ও তার ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র : ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ বইয়ের প্রচ্ছদ

করোনা মহামারি সৃষ্ঠ অর্থনৈতিক বিপর্যয়কে ‘নিরাময় অযোগ্য শরীরে অনেক রোগের সমাহার’ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। তিনি বলেছেন, করোনাকালে পুরো বিশ্ব দুই মহাবিপর্যয়ে পতিত হয়েছে। তার একটি হলো অর্থনৈতিক-সামাজিক, অন্যটি হলো প্রাকৃতিক-ভাইরাস থেকে সৃষ্ট।

‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র : ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ বইয়ে এ মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আবুল বারকাত।

বইটিতে তিনি তুলে ধরেছেন, শোষণভিত্তিক, লোভ-লালসাভিত্তিক যে কোনো কিছুর বিনিময়ে মুনাফা সর্বোচ্চকরণ, বৈষম্য বৃদ্ধিভিত্তিক, নিরন্তর বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টিভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হলো পুঁজিবাদী মুক্তবাজার অর্থনীতি, যে অর্থনীতিতে মন্দা-মহামন্দা অনিবার্য, যা ওই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অন্তর্গত বাণিজ্যচক্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

তিনি বলেছেন, করোনাকালে সারা বিশ্বের অর্থনীতি প্রতি মুহূর্তে ডেউয়ের মতো দোল খাচ্ছে। একবার উঠছে, তো আরেকবার নামছে। সর্বোপরি অভিঘাত গিয়ে পড়ছে কম আয়ের সাধারণ মানুষের ওপর। তারা সবার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অন্যদিকে বৈষম্য সৃষ্টিকারী যে কোনো কিছুর বিনিময়ে অর্জনমুখী অনৈতিক ব্যবস্থা কিছু মানুষকে ফুলে-ফেঁপে বড় করছে। করোনাকালে এ ব্যবস্থা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের দেশে দেশে দৃশ্যমান হয়েছে। তাই তো করোনাকালে দেখা গেছে দারিদ্র্য হার বেড়েছে। আর মধ্যবৃত্তের সর্বনাশ হয়েছে। উল্টোদিকে কিছু মানুষের কাছে সম্পদের পাহাড় জমা হয়েছে।

বৈষম্য ও শোষণমূলক ব্যবস্থা থেকে স্থায়ীভাবে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তার মতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোভিড-১৯ থেকে উদ্ভূত যে বিপর্যয় ঘটেছে তার উত্তরণ ঘটবে এবং তা সাময়িক। চক্রটি যেহেতু ওই ব্যবস্থারই অঙ্গ, সেহেতু চক্র চলতেই থাকবে।

‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ বইয়ে তিনি বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি ঋণচক্রের হিসেবপত্তর বলে প্রতি ৪৭ বছর পরপর মন্দা রোগ অনিবার্য। আর রোগটি যদি ৪৭ বছরের বেশি সময় পরে ঘটে ধরে নিতে হবে রোগের জীবাণু অর্থনীতির দেহে ঘনীভূত হচ্ছে। যা পরে মন্দা রোগ থেকে মহামন্দা রোগ হিসাবে অবির্ভূত হবে।

‘এই মহামন্দা রোগ নিরাময়ের কোনো ভ্যাকসিন বা ওষুধপত্তর নেই। যতদিন পুঁজিবাদী ব্যবস্থা থাকবে, যা ওই রোগের মূল কারণ ততদিন মহামন্দা নামক রোগটি যাওয়া-আসা করবে।’

অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত মনে করেন, করোনাভাইরাস থেকে উদ্ভূত প্রাকৃতিক মহারোগ কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করা যাবে না। তবে নিরাময়ে ভ্যাকসিন আবিষ্কারসহ ওষুধপত্তর আবিষ্কার হলে তার প্রয়োগে এ রোগ থেকে হয়তো বা নিস্তার পাওয়া যাবে। আর তা নাহলে হয়তো মানুষের শরীরে ‘হার্ড ইম্যুইনিটি’ হয়ে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। আর ততক্ষণে কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে।

বইটিতে তিনি বলেছেন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উদ্ভূত মহারোগ মহামন্দা আর প্রকৃতিপ্রাপ্ত মহারোগ কোভিড-১৯- এই দুইয়ের মহামিলনে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও সমাজে যে অভূতপূর্ব মহারোগের সৃষ্টি হয়েছে এ রোগ থেকে উত্তরণে প্রথমত যে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রোগটি হচ্ছে ওই ব্যবস্থাটিই পাল্টে ফেলতে হবে।

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে স্বাধীনতার স্বপ্ন শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষার কথা বইয়ে তুলে ধরেছেন তিনি। বলেছেন, ‘প্রকৃতির প্রতি পূর্ণ আনুগত্য ভিত্তিক বৈষম্যহ্রাসকারী আর্থসামাজিক উন্নয়ন দর্শন সর্বশ্রেয় উন্নয়ন-প্রগতি তত্ত্ব।’

বৈশ্বিক অর্থনীতি ও সমাজে যে অভূতপূর্ব মহারোগ হয়েছে তা থেকে উত্তরণের দ্বিতীয় উপায় নিয়ে অধ্যাপক আবুল বারকাত বইয়ে বলেছেন, ‘প্রকৃতির প্রতি অবিচার-অন্যায্য আচরণ-উদ্ভূত মহরোগ কোভিড-১৯ থেকে মুক্তির জন্য আবিষ্কার হওয়া ভ্যাকসিন এবং তার সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা। যদি এখানে মুনাফাভিত্তিক মানসিকতা চালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তাহলে তৈরি হবে আরেক বৈষম্য-মহারোগ।’

মন্তব্য

Beta version