-->

পণ্য নয়, যন্ত্রপাতি আমদানির পরামর্শ এনবিআরের

নিজস্ব প্রতিবেদক
পণ্য নয়, যন্ত্রপাতি আমদানির পরামর্শ এনবিআরের
এনবিআর সম্মেলন কক্ষে বুধবার মেট্রপলিটন চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ঢাকার সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা। ছবি- ভোরের আকাশ

অভ্যন্তরীণ বা স্থানীয় বাজার চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি না করে সংশ্লিষ্ট পণ্য উৎপাদনের যন্ত্রপাতি আমদানির পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) এনবিআর সম্মেলন কক্ষে মেট্রপলিটন চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ঢাকার সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় (২০২২-২০২৩) সভাপতির বক্তব্যে এই পরামর্শ দেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

সভায় এনবিআরের করনীতি, শুল্ক ও মূসক শাখার কর্মকর্তা এবং এমসিসিআই সভাপতি সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নিহাদ কবিরসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এমসিসিআইর ট্যারিফ এন্ড ট্যাক্সেশন কমিটির চেয়ারম্যান আদিব এইচ খান সভায় বিস্তারিত প্রস্তাবনা পেশ করেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা পণ্য আমদানি না করে মেশিনারিজ আমদানি করব। উদ্যোক্তাদের এই সক্ষমতা আছে, দেশে এসব পণ্য উৎপাদন করার। সেই জায়গাটাকে আমরা ঠিক করব। এতে অভ্যন্তরীণ যে বাজার আছে, তার ওপর আমাদের অর্থনীতি শক্তভাবে দাড়িয়ে থাকতে পারবে।

‘সেজন্য রপ্তানির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ উৎপাদননির্ভর ভোক্তা পণ্যের গুরুত্ব দিয়ে আমদানি করব। গৃহস্থালী পণ্যের যে উদীয়মান বাজার তৈরি হয়েছে, এই যে দুই, তিন ও চার চাকার গাড়ির চাহিদা তৈরি হয়েছে, এইটিকে ধরে রাখতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে কীভাবে সহযোগিতা করা লাগবে তা করব।’

‘এটিকে গুরুত্ব দিয়ে গতবার এনেছিলাম মেড ইন বাংলাদেশ’ একথা উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘সামনের দিনগুলেতে এটা আমাদের মাথায় থাকবে। এজন্য এক বছর, দুই বছরের জন্য সুবিধা দেয়া হয়নি। আমরা বলে দিয়েছি নির্দিষ্ট করে, এত সালের মধ্যে আপনি এই অবস্থায় আসবেন। আমরা বলেছি, আপনাদের পরিকল্পনা কী হবে, এত সালের মধ্যে কী হবে, এত বছরের মধ্যে আসতে হবে। এবারও শিল্পকে সহায়তা করার জন্য এই সহায়তা থাকবে। সেজন্য যে বিষয়গুলো করা দরকার তা আমরা করব।’

তিনি বলেন, ‘আপনাদের (এমসিসিআই) যে চাহিদা, রাজস্ব ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা- এটা আমাদেরও চাহিদা। রাজস্ব প্রদানে যে সমস্যাগুলো আছে তা দূর করে, রাজস্ব প্রদান সহজীকরণ করা- এটাই আমরা চাই।’

শিল্পকে সহায়তা করাই এনবিআরের উদ্দেশ্য জানিয়ে আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘অটোমেশনের (স্বয়ংক্রিয় ও দ্রুত ব্যবসা পরিচালনায় রাস্তা) মাধ্যমে এই বিষয়গুলোর সমাধান হতে পারে, এটা আমরাও বিশ্বাস করি। সেই অটোমেশনের জন্য নানাবিধ কার্যক্রম করে যাচ্ছি।

‘অবশ্যই অটমেশনের দক্ষতা একবারে একটি সংস্থায় আসবে না। এনবিআর ও তার আওতায় শুল্ক ও ভ্যাটের যে শাখা রয়েছে, যেখানে এতটা দক্ষতা ছিল না। আস্তে আস্তে দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি, এজন্য একের পর এক অটোমেশন প্রকল্প হাতে নিচ্ছি এবং নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করছি।’

নতুন অর্থবছরের জন্য এমসিসিআই ছয়টি প্রস্তাব দিয়েছে এনবিআরকে।

এমসিসিআই বলছে, দেশে কার্যকর কর্পোরেট করহার অনেক বেশি। এখানে অননুমোদিত ব্যয় এবং উৎসে কর কর্তন এতো বেশি যে আমরা ব্যবসায়ীরা এই কর্পোরেট করহারের ৫ শতাংশ কমানোর সুবিধা ভোগ করতে পারছি না।

বাস্তবে এই কর্পোরেট করহার পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ আর থাকে না। তা ক্ষেত্র বিশেষে ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে যায় ।

বিষয়টি আবারও ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করেছে সংগঠনটি।

কোম্পানিসমূহ আয়কর বিভাগে আয়কর বিবরণী নিষ্পত্তি সত্ত্বেও উক্ত অধিদপ্তর কর্তৃক পূনরায় নিরীক্ষা কার্যক্রমের জন্য বিবেচিত হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের অর্থ ও সময়ের অপচয়সহ ব্যবসায়িক ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সমাধান চেয়েছে এমসিসিআই।

কর নির্ধারণ, আপিল, ট্রাইব্যুনাল, বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি (এডিআর) পর্যায়ে অনলাইনে শুনানি গ্রহণের বিধান বর্তমান আইনে প্রবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে এমসিসিআই।

এমসিসিআই অর্থ আইনের যে কোনো পরিবর্তন পরবর্তী বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার বিধান রাখার সুপারিশ করে বলেছে, তাহলে বার্ষিক সাধারণ সভা ও শেয়ারধারকদের অনুমোদিত আর্থিক বিবরণী বিষয়ে অনেক ঝামেলা এড়ানো সম্ভব হবে।

সংগঠনটি বলছে, সর্বসাধারণের ব্যবহার্য পণ্য, অবকাঠামো ও শিল্প যন্ত্রপাতি সুরক্ষা করে এমন পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক আরোপ ন্যায় নীতির পরিপন্থী। স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তারা স্থানীয় পর্যায়ে আন্তর্জাতিক মানের পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করছে, অন্যদিকে ব্যবহার বৃদ্ধির নানা কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে মোট বাজার বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজার বৃদ্ধি সম্ভব হচ্ছে না। ফলে একদিকে স্থানীয় উদ্যোক্তারা এর প্রবৃদ্ধি না হওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের মোট রাজস্ব (মূসক, আয়কর ও লভ্যাংশ) প্রবৃদ্ধিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

বিষয়টি সমাধান চেয়েছে এমসিসিআই।

ভ্যাট ব্যবস্থাপনায় অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) চালু করারও পরামর্শ দিয়েছে এমসিসিআই। এর যুক্তি হিসেবে সংগঠনটি বলছে, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাসিক ভ্যাট বিবরণী আপলোড করা যাবে। এতে কোম্পানির সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। এই ব্যবস্থায় ঝামেলামুক্তভাবে ভ্যাট ব্যবস্থাপনার কলেবর বৃদ্ধি পাবে এবং রাজস্ব সংগ্রহও বৃদ্ধি পাবে।

মন্তব্য

Beta version