-->

বিতরণে বিলম্ব, কাজে আসছে না কৃষিঋণ

জাফর আহমদ
বিতরণে বিলম্ব, কাজে আসছে না কৃষিঋণ

সরকারের বাধ্যবাধকতার কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিতরণ করলেও তা সময়মতো বিতরণ করা হচ্ছে না। বিতরণ হচ্ছে বছর শেষে। এতে কৃষিঋণ বিতরণের পরিমাণ বাড়লেও মানসম্পন্ন ঋণ বিতরণ হচ্ছে না; কৃষকের কাছে ঋণ গেলেও তা প্রয়োজনের সময় পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের জুলাই থেকে জানুয়ারি সাত মাসের প্রতিবেদনে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে।

কৃষকের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শীত মৌসুম, অর্থবছরে বছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি এই সাত মাস। এ সময় সবজি তথা অর্থকরী ফসল, আমন ধান ও চৈতালি ফসল-গম সরিষা এবং ডালজাতীয় ফসলের চাষ হয়। এ সময়ে কৃষকের টাকার প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায় ৫৬টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ৩০টি ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের হার লক্ষ্যমাত্রার ৪৫ শতাংশের নিচে। আর ১৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের হার ৩০ শতাংশের নিচে। বছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়ার কারণে এসব ব্যাংক সারা বছর ঋণ বিতরণ না করে বছর শেষে তাড়াহুড়া করে কৃষকের মাঝে ঋণ বিতরণ করে। এতে কৃষকের কাজে আসে না।

অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ইচ্ছামতো কৃষিঋণ বিতরণ করে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত গত সাত মাসে আদৌ কৃষিঋণ বিতরণ করেনি বাংলাদেশ ব্যবসারত বিদেশি কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, উরি ব্যাংক ও দেশি বেঙ্গল ব্যাংক। লক্ষ্যমাত্রার ২০ শতাংশের নিচে কৃষিঋণ বিতরণ করা ব্যাংকগুলো হলো, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এবি ব্যাংক।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশি-বিদেশি ৪৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৬১ শতাংশ বা ১৭ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এ ঋণের প্রায় ৮০ শতাংশ বিতরণ করা হয় এনজিও-এর মাধ্যমে। আর কৃষক পর্যায়ে সুদ হার ২২ শতাংশ পর্যন্ত। এ সব ব্যাংক বছরের শুরুতে কৃষিঋণ বিতরণে গুরুত্ব দেয় না। বছরের শেষের দিকে এনজিওর মাধ্যমে কৃষিঋণ বিতরণ করে থাকে। ফলে বছরের শুরুতে আমন ও রবি ফসল-শাকসবজি চাষের সময় প্রয়োজন হলেও এসব ব্যাংকের গ্রাহকরা কৃষিঋণ থেকে বঞ্চিত হন। আবার বছরের শেষের দিকে ঋণ পান। এতে এ ঋণ কৃষকের কোনো কাজে আসে না। এতে কৃষকের ঋণের বোঝা ভারি হলেও কাজে আসছে না।

কৃষিঋণ ব্যবস্থাপনায় সারা বছর ধরে সমান হারে বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা দরকার বলে মনে করেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও গবেষক ড. জায়েদ বখত।

তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, দেশি-বিদেশি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পল্লী অঞ্চলে শাখা না থাকার কারণে তারা এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করে থাকে। এ কারণে তারা বছরের যে কোনো সময়ে বিতরণ করলেই হয় এমন চিন্তা করে। ফলে কৃষকের যখন প্রয়োজন তখন ঋণ পান না, ব্যাংকগুলোর সুবিধা মতো বিতরণ করে থাকে।

তিনি বলেন, কৃষিঋণ বিতরণ না করলে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জরিমানা করে থাকে। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারের খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে সারা বছর সমান হারে কৃষিঋণ বিতরণ করলে কৃষি এবং কৃষক উপকৃত হবেন।

মন্তব্য

Beta version