বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সময়মতো ফেরত দেননি অনলাইন প্রপার্টিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান মো. আক্তারুজ্জামান। খেলাপি হয়েছেন। একবার নবায়ন ও একবার পুনঃতপসিলি করার সুযোগ নিয়েছেন। তারপর আবার অনিয়মিত এবং খেলাপি হয়েছে অনলাইন প্রপার্টিজ।
প্রতিষ্ঠানটির হালনাগাদ খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১৮ কোটি ৩৩ লাখ ৮৩ হাজার ২১৯ টাকা। এ টাকা আদায় করতে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার জোয়ারসাহারা ও মিরপুরের মাটিকাটায় জমিসহ বাড়ি ও ফ্ল্যাট এবং ঢাকার বাইরে মুন্সিগঞ্জে অবকাঠামোসহ জমি বিক্রির জন্য নিলামে তুলেছে বেসিক ব্যাংক। গত ২৩ জানুয়ারি নিলাম ডাকা হয়।
২০১২ সালে অনলাইন প্রপার্টিজ বেসিক ব্যাংকের কাছে থেকে ঋণ নেয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৯ কোটি ১৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। এ সময়ের মধ্যে ২০১৩ সালের জুলাই মাসে একবার নবায়ন ও ২০১৫ সালের মার্চ মাসে আরো একবার পুনঃতপসিলিকরণের সুযোগ নেয় অনলাইন প্রপার্টিজ।
২০১৪ সালে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে ২ শতাংশ সুদ হারে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেয় সরকার। এ সুযোগ নিয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়া ৬৯ কোটি ১৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকার এ ঋণ আবারও পুনঃতপসিলি করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এরপর আবারও অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
বেসিক ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, ঋণ নিয়মিত করার জন্য তাগাদা দেওয়ার পরও প্রতিষ্ঠানটি ঋণ ফেরত দেয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে টাকা আদায়ের ঋণের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির মর্টগেজ হওয়া সম্পত্তি নিলামে তুলতে বাধ্য হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে দেওয়া বেসিক ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আক্তারুজ্জামানের ৩,৫০০টি শেয়ারের বিপরীতে ৫৮ শতাংশ মালিকানা রয়েছে। অপর দুই পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সাকিল আহমেদ খানের ১,৫০০ শেয়ারের বিপরীতে ২৫ শতাংশ এবং সাজেদা আক্তার পপির ১,০০০টি শেয়ারের বিপরীতে ১৭ শতাংশ মালিকানা রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি ঋণ নেওয়ার অব্যবহতির পর ঋণের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ করে দেয়। ফলে অল্পদিনের মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়। ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির বেসিক ব্যাংকের কাছে বকেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১৮ কোটি ৩৩ লাখ ৮৩ হাজার ২১৬ টাকা এবং পুরোটাই অনিয়মিত ঋণ।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে পাওয়া যায়নি অনলাইন প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান মো. আক্তারুজ্জামানকে। অফিসে যোগযোগ করা হলে তিনি নেই বলে জানানো হয়। মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে হোয়াটস অ্যাপে ও ইমেইলে চিঠি পাঠালেও কোনো জবাব দেননি।
নিলাম নোটিশের তথ্য অনুযায়ী এক নম্বরে রয়েছে রাজধানীর ঢাকার জোহারসাহারাতে সিএস খতিয়ান ৩২৫ নম্বরে অবস্থিত ১৫ দশমিক ২৫ ডিসিমল বা ৯ দশমিক ২৪ কাঠা জমি। অনলাইন প্রপার্টিজ ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঋণের বিপরীতে বেসিক ব্যাংকের কাছে মর্টগেজ রাখে।
নিলামে তোলা দ্বিতীয় সম্পত্তি জোহারসাহারাতে অবস্থিত। অবকাঠামোসহ জমির পরিমাণ ১৫ দশমিক ২০ ডিসিমল বা ৯ দশমিক ২১ কাঠা। জমি বেসিক ব্যাংকে বন্ধক দেওয়ার তারিখ ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। নিলামের তৃতীয় অবকাঠামোসহ জমিটিও জোহারসাহারাতে অবস্থিত।
জমির পরিমাণ ২ দশমিক ১৮৬ কাঠা বা ৩ দশমিক ৬০৭ ডিসিমল। গুলশানের জোয়ারসাহারা মৌজার দাগ নম্বর সিএস ৬০৯আর এস ৭৮৮। এ জমিটি বেসিক ব্যাংকের নামে নিবন্ধিত হয় ২০১২ সালের মে মাসে।
নিলামে তোলা চতুর্থ জমিও গুলশানের জোয়ারসাহারাতে অবস্থিত। জমির পরিমাণ ৪ দশমিক ৫০ কাঠা। খতিয়ান নম্বর সিএস ২৪৭, এসএ ৬১১। এ জমির উপরও অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। নিলামে পঞ্চম জমির ওপরও অবকাঠামো উল্লেখ করা হয়েছে। জোয়ারসাহারা মৌজাতে অবস্থিত এ জমির পরিমাণ ৪.৫ কাঠা। ষষ্ঠ জমিও জোয়ারসাহারাতে অবস্থিত। এখানে জমির পরিমাণ ২.৪২৪ কাঠা।
অবকাঠামোসহ জমির পাশাপাশি ৯টি ফ্লাট ও ও নিলামে তুলেছে বেসিক ব্যাংক। অনলাইন প্রপার্টিজ লিমিটেড-এর এসব ফ্ল্যাট রাজধানীর মিরপুরের মাটিকাটায় অবস্থিত।
সরেজমিনে মিরপুরের মাটিকাটায় তিনটি ফ্ল্যাটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে গেছে এবং ফ্ল্যাট ক্রয়কারীরা বসবাসও করছেন।
কীভাবে বিক্রি হয়ে গেছে, কোন প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন হলো-এ বিষয়ে বসবাসকারীদের একজন আলাপকালে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা টাকা দিয়েছি নিবন্ধন হয়েছে, দখল পেয়েছি, বসবাস করছি। এর বেশি আর আমাদের জানার বিষয় নয়।’
ঢাকার পাশাপাপাশি রাজধানীর বাইরে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় অবকাঠামোসহ ৮টি জমি রয়েছে বেসিক ব্যাংকের এই নিলামের তালিকায়। অনলাইন প্রপার্টিজের খেলাপি ঋণ ১১৩ কোটি টাকার আদায়ের জন্য এ জমিও নিলামে তুলে বেসিক ব্যাংক।
জমিগুলো হলো, শ্রীনগর মৌজায় সিএস ৪২৯ নম্বরে ২৮১০ একর। মধ্য বাউসিয়ায় অবস্থিত আরএস ৩৭৬ ও ৩৮০ নম্বর খতিয়ানে.২০ একর। বাউসিয়া ও পোরের চাক মৌজাতে দুটি জমিসহ ৫২.৭৬ ডিসিমল ও ১৬.৭৮ ডিসিমল। গজারিয়ায় বাউসিয়া মৌজার আরএস খতিয়ানে রয়েছে ১৮.৫০ ডিসিমল।
ছোট্ট আলিপুরের সিএ ৩২৯ খতিয়ানে রয়েছে ২৫ ডিসিমল। চর সাহেরবানী ২৯৬ ডিসিমল এবং নাস্তি মৌজার সিএম ২২২ খতিয়ানে রয়েছে ১০৪.৫০ ডিসিমল। এসব জমিতেও বিভিন্ন রকমের অবকাঠামো রয়েছে।
মন্তব্য