-->
শিরোনাম

বারবার স্বপ্নভঙ্গ বিনিয়োগকারীদের

যুদ্ধ ইস্যুতে পুঁজিবাজার থেকে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
বারবার স্বপ্নভঙ্গ বিনিয়োগকারীদের
ডিএসই ও সিএসইর লোগো

গত বছরের শেষ দিকে পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা দুবল হয়ে পড়ে। পতনের জের ধরে হ্রাস পেতে থাকে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর। একইসঙ্গে উল্লেখযোগ্যহারে কমে যায় বাজার মূলধন। যে পরিস্থিতি এখনো আরো নাজুক হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই চলমান পতনে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা। ফেব্রুয়ারিতে পতন আরো ভারি হয়েছে। ফলে যারা নতুন বিনিয়োগ করে মুনাফার স্বপ্ন দেখছিলেন তাদের স্বপ্ন আবারো ভঙ্গ হলো। ভুক্তভোগীরা বলছেন, পুঁজিবাজার থেকে আলো উধাও হয়ে গেছে। বারবার অন্ধকার এসে তাদের স্বপ্ন ঢেকে দিচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে গতকাল রোববার দিয়ে চলতি মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট ১৭ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১০ কার্যদিবসই সূচক নিম্নমুখী ছিল। এর মধ্যে ছয় কার্যদিবসই বড় পতনের ঘটনা ঘটেছে। চলতি মাসের প্রথম দিন সূচকের পতন ঘটে ৭১ পয়েন্ট। এরপর ১৪ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি যথাক্রমে সূচকের ৩০ এবং ৩৪ পয়েন্ট পতন হয়। এর পরের কার্যদিবস অর্থাৎ ১৬ ফেব্রুয়ারি সূচক কমে ৫২ পয়েন্ট। এছাড়া গত সপ্তাহের শেষ দিনের পতনে সূচক হ্রাস পায় ১০৯ পয়েন্ট। সর্বশেষ গতকাল পতন আরো বড় হয়। এদিন সূচকের পতন হয় ১৬৩ পয়েন্ট।

এদিকে অন্য এক হিসেবে দেখা যায় চলতি মাসে ১৭ কার্যদিবসে ২২ হাজার কোটি টাকার বাজার মূলধন কমেছে। এর মধ্যে গত দুই দিনের পতনেই ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের বাজার মূলধন হ্রাস পেয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। জানা যায়, মার্জিন ঋণ সমন্বয় করার জন্য অনেক হাউস থেকে বিনিয়োগকারীদের ফোর্সড সেল করতে বাধ্য করা হয়েছে। যার জের ধরে সূচকের পতন নেমে আসে। তবে এটাকে বড় কারণ মনে করছেন না সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ ইস্যু করে বাজার থেকে একটি চক্র ফাইয়া লুটে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর পর পার্শ্ববর্তী দেশগুলো পুঁজিবাজারে তেমন প্রভাব না পড়লেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের সঙ্গে এমন পতনের যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না বাজার সংশ্লিষ্টরা। বিনিয়োগকারীদের অযৌক্তিক ভয় ও আতঙ্কের কারণে এই পতন হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবটা কাজ করছে। একটি চক্র যুদ্ধ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে বাজার থেকে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের মাত্রাতিরিক্ত হতাশ না হওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য প্রভাব না থাকলেও মনস্তাত্ত্বিকভাবে এটি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। অনেকেই অপেক্ষায় আছে কম দামে ভালো শেয়ার কীভাবে কেনা যায়। তবে বাজার তার আপন শক্তিতে ঘুরে দাঁড়াবে ।

একই প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ভোরের আকাশকে বলেন, যুদ্ধের প্রভাব আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে তেমন একটা পড়ার কথা নয়। পরপর দুই দিন সূচকের কেন এমন পতন হলো তা দেখার বিষয়। তবে যাদের মার্জিন ঋণ রয়েছে তাদের মধ্যে বিক্রির চাপ বেশি ছিল। যে কারণে সূচকের পতন হয়েছে।

এদিকে দর পতনে হতাশ বিনিয়োগকারীরা। তারা বলেন, ‘আমরা চাই বাজারের দীর্ঘমেয়াদি ধারাবাহিকতা। হঠাৎ দু-চারদিন বাজার ভালো থাকল, আবার অস্বাভাবিক পতন নেমে এলÑএমন পুঁজিবাজার আমরা চাই না।’ তারা বলেন, ‘করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর বেশিরভাগ সময়ই ডিএসইতে লেনদেন অনেক কমে যায়। পরবর্তীকালে লেনদেনে গতি পায় কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আবারো বাজারে পতন নেমে আসে, বর্তমানে যা চলমান রয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, ‘এই পতনের বিশেষ কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না। তবে বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা কিছুটা হলেও দায়ী। তারা যে কোনো কারণে প্যানিক হয়ে শেয়ার কেনাবেচা করেন যা ঠিক নয়। বাজারের যে কোনো বৈরী পরিস্থিতিতে তাদের ধৈর্যধারণ করা উচিত। তবে আমাদের দেশে এ ধরনের বিনিয়োগকারীর সংখ্যা খুবই কম।’

এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই পরিস্থিতিতে আইসিবির মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা উচিত। তারা শেয়ার কিনে বাজারকে সার্পোট দিলে বাজারচিত্র পরিবর্তন হবে।

মন্তব্য

Beta version