-->

ক্রেতা সংকটে ধরাশায়ী পুঁজিবাজার

* ৮ দিনে বাজার মূলধন কমেছে ৩৬ হাজার কোটি টাকা * মনোগত কারণে পতন * যুদ্ধ ইস্যুকে কাজে লাগাতে যাচ্ছে একটি চক্র

মুস্তাফিজুর রহমমান নাহিদ
ক্রেতা সংকটে ধরাশায়ী পুঁজিবাজার
ডিএসই ও সিএসইর লোগো

পুঁজিবাজারে শেয়ার ও ইউনিটের দর পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি প্রতিনিয়তই হ্রাস পাচ্ছে লেনদেন হওয়া সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। এর জের ধরে লাগামহীনভাবে কমছে সূচক। বিনিয়োগকারীদের চোখের সামনে প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকা কমছে বাজার মূলধন। গতকাল এক দিনে সূচক কমেছে ১২ হাজার কোটি টাকা। আর গত আট কার্যদিবসে বাজার মূলধন কমেছে ৩৬ হাজার কোটি টাকা।

এই পরিস্থিতিতে ভীত হয়ে পড়ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। লোকসানে হলেও বাজার থেকে বেরিয়ে মুক্তি পেতে চাচ্ছেন তারা। কিন্তু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কাক্সিক্ষত ক্রেতা। ফলে ক্রেতার আকালে ধরাশায়ী হচ্ছে পুঁজিবাজার।

সাম্প্রতিক বাজার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ভালো-মন্দের কোনো বাছ বিচার ছাড়াই কমছে শেয়ারদর। দুর্বল কোম্পানির পাশাপাশি মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি রয়েছে এই তালিকায়। এখন এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। বড় বড় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে ক্রেতার আকাল থাকায় কমেছে তালিকাভুক্ত সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর। এর জের ধরে গত আট কার্যদিবসে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের বাজার মূলধন কমে গেছে ২৪ হাজার কোটি টাকা কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকায়।

সম্প্রতি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো কোনো উপাদান পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশে ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ধারণকৃত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সকল প্রকার শেয়ার, ডিভেঞ্চার, করপোরেট বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট এবং পুঁজিবাজারের অন্যান্য নিদর্শনপত্রের বাজার মূল্য হয়।

তবে নিজস্ব সাবসিডিয়ারি কোম্পানি বা কোম্পানিসমূহকে প্রদত্ত ইক্যুয়িটি দীর্ঘমেয়াদি ইক্যুয়িটি বিনিয়োগ, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি (বিডি) লি. স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর শেয়ার ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে না। এতে আরো বলা হয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিবরণী প্রতি ত্রৈমাস শেষ হবার পর পরবর্তী মাসের সাত কর্মদিবসের মধ্যে সংযুক্ত ছক মোতাবেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগে দাখিল করতে হবে। বিষয়টিকে বাজার পতনের জন্য দায়ী করছেন অনেকে।

এছাড়া বাজার পতনের মার্জিন ঋণ সমন্বয় করার বিষয়টিও তুলে আনছেন অনেককে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথাও বলছেন কেউ কেউ। কিন্তু সব বিষয়ে ছাপিয়ে গেছে বিনিয়োগকারীদের মনোগত কারণ। তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে শেয়ার বিক্রির কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুদ্ধ ইস্যুকে কাজে লাগাতে যাচ্ছে একটি চক্র। যুদ্ধের প্রভাবে দেশের পুঁজিবাজারে তেমন না থাকলেও তারা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এটা করছে তারা কমদরে শেয়ার কেনার জন্য। আর এই ফাঁদে পা দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা ভয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে করে ওই চক্রটিও বেশি সুবিধা পাচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ভোরের আকাশকে বলেন, আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা অল্পতেই ভেঙে পড়েন। তারা ভীত হয়ে শেয়ার ছেড়ে দেন। এতে করে পতন আর ঘনীভূত হয়। ফলে বাজার আরো পড়ে যায়। বিনিয়োগকারীদের এ ধরনের মানসিকতা পরিহার করা দরকার। তা না হলে বাজার চিত্রে পরিবর্তন আসবে না।

একই বিষয়ে ব্রোকারেজ হাউসগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মাসে শেষের দিকে মার্জিন ঋণ সমন্বয় করার জন্য অনেকে শেয়ার বিক্রি করেছেন। তখন এর প্রভাবে বাজার নিম্নমুখী হয়। কারণ মাসের শেষে মার্জিন ঋণ সমন্বয় করার চাপ থাকে। কিন্তু এখন তেমন হওয়ার কথা নয়।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর কাজ হচ্ছে যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের বাজারের সঙ্গে মানানসই করে নেওয়া। কিন্তু আমাদের দেশে হয় এর উল্টো। যেকোনো ইস্যু পেলেই বিনিয়োগকারীরা তা বুঝ না বুঝে কাজে লাগাতে শুরু করেন। দ্রুত যার প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসা জরুরি।

মন্তব্য

Beta version