-->
শিরোনাম
অর্থনৈতিক কমিটির প্রস্তাব অনুমোদন

রোজার আগে চার পণ্য পাবে কোটি পরিবার

* কমছে পেঁয়াজের দাম, অপরিবর্তিত ভোজ্যতেল * সরবরাহ এখনো স্বাভাবিক হয়নি * বেশি দামে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা খুচরা ব্যবসায়ীদের

জুনায়েদ হোসাইন
রোজার আগে চার পণ্য পাবে কোটি পরিবার
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এক কোটি পরিবারের হাতে তেল, চিনি, ডাল ও ছোলা পৌঁছাতে ছয়টি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। ছবি- সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এক কোটি পরিবারের হাতে তেল, চিনি, ডাল ও ছোলা পৌঁছাতে ছয়টি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। ইতোমধ্যে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও অর্থনৈতিক বিষয়কসংক্রান্ত কমিটি কেনাকাটার এ প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কোম্পানি জানিয়েছে, আগামী ২০ মার্চ বা টিসিবির চাহিদার ভিত্তিতে তারও আগে পণ্য সরবরাহ করা হবে। এ জন্য তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও টিসিবি জানিয়েছে, শবেবরাতের পরে রোজার আগে এসব পণ্য সারা দেশে এক কোটি পরিবারের হাতে পৌঁছানো হবে। এদিকে নিত্যপণ্যের দাম কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হলেও খুচরা বাজারে পুরোপুরি সুফল মেলেনি। তবে পোঁয়াজের দাম কমেছে। বাড়তি দামে পাড়া-মহল্লার দোকানে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল।

এদিকে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানামুখী উদ্যোগে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। সপ্তাহ খানেক আগে বাজারে ৭০ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতি কেজি পেঁয়াজ গতকাল রোববার বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এ ছাড়া, কৃত্রিম সংকটে বেড়ে যাওয়া ভোজ্যতেলের দামও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

তবে ভোক্তারা অভিযোগ করছেন, তেলের বোতলে নির্ধারিত মূল্যের সিল মুছে ফেলে পাড়া-মহল্লার দোকানিরা অবৈধ সুবিধা নিচ্ছে। কোথাও কোথাও এক লিটার সয়াবিন তেল ১৮০ টাকায় বিক্রির খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে, রাজধানীর সুপারসপে সরকার নির্ধারিত দামে ১৬৮ টাকায় তেল পাওয়া যাচ্ছে বলে অনেকে জানিয়েছন। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে দুই লিটার ও পাঁচ টিলারের বোতলজাত সয়াবিন তেল দেখা মিললেও গলির দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না।

দোকানিরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি অস্থির হয়ে ওঠা তেলের বাজারে, বোতলজাত সয়াবিনের থেকে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই বোতল খুলে খোলা সয়াবিন বিক্রি করেছেন। এতে বোতলজাত সয়াবিনের সংকট তৈরি হয়েছে। তবে চলতি সপ্তাহে কোম্পানি এবং ডিলার পর্যায়ে সরকারের তদারকির ফলে পণ্য সরবরাহ বাড়লেও এখনো স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি।

যোগাযোগ করা হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান ভোরের আকাশকে বলেন, ‘বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া রমজান উপলক্ষে উচ্চপর্যায়ের পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ফলে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।’

রোজা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এক কোটি পরিবারকে যেসব পণ্য দেওয়ার কথা তা’ রমজানের আগেই দেওয়া শুরু হবে। এজন্য টিসিবি সব প্রস্তুতি শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সরবরাহকারী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেছে। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যে কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য সরবরাহ করতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয় মাথায় রেখে সরকার দুই ভাগে এবার টিসিবির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সরকারের ক্রয় কমিটির মাধ্যমে যে পণ্যের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত এক কোটি পরিবারকে স্বল্পমূল্যে পণ্য সহায়তা করার ক্ষেত্রে বিতরণ করা হবে।’ সফিকুজ্জামান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা গেছে, সরকার সেনা ভোজ্যতেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সুপার অয়েল রিফাইনড লিমিটেড, মেঘনা ভোজ্যতেল শোধনাগার লিমিটেড, সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড, বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড এবং শুন শিং এডিবল অয়েল লিমিটেড থেকে ভোজ্যতেল ক্রয় করবে।

প্রস্তুতির বিষয়ে মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র এজিএম তাসলিম শাহরিয়ার ভোরের আকাশকে বলেন, এর আগে শুধু টিসিবির ১২টি শাখায় পণ্য সরবরাহ করা হয়েছিল। কিন্তু এ বছর সারা দেশে টিসিবির চাহিদার ভিত্তিতে সরবরাহ করতে হবে। সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। আশা করছি ২০ মার্চ বা তারও আগে কার্যক্রম শুরু করা যাবে। টিসিবির চাহিদার ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় আমরা পণ্য পৌঁছাব।

উল্লেখ্য, সরকারের ক্রয় করা চারটি পণ্যের মধ্যে এক কোটি ৭১ লাখ ১৫ হাজার ৬৫২ লিটার সয়াবিন তেল, ১৪ হাজার টন চিনি, ১০ হাজার টন ছোলা এবং ১৯ হাজার ৫০০ টন মসুর ডাল। এতে সরকারের মোট ব্যয় ৬৯১ কোটি ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৫৩৬ টাকা।

মন্তব্য

Beta version