নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির মাধ্যমে সারাদেশে বিক্রয় কার্যক্রম শুরু করেছে। এর মধ্যে আমদানিতে ১০ শতাংশ, উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ও ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভোজ্যতেলের ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণা ও প্রজ্ঞাপন জারি করায় ভোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরছে। অনেকে এজন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও এফবিসিসিআইকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
তবে সরকারের এই উদ্যোগের সুফল ভোক্তা কবে পাবেন, তা এখন প্রশ্ন আসছে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভোরের আকাশকে জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে ভোজ্যতেলের মূল্য সমন্বয় করা হবে।
সরকারের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটারে সর্বোচ্চ মূল্য ১৬৮ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতলের দাম ৭৯৫ টাকা। আর খোলা সয়াবিন লিটার প্রতি ১৪৩ টাকা। গত ৬ ফেব্রুয়ারি এ দাম ঠিক করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
নতুন দামে কয়েকদিন ভোজ্যতেল কেনাবেচার পরই ইউরোপ অঞ্চলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনা দেখা দেয়। যা পরবর্তীতে সংঘর্ষে রূপ নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়। ফলে বিশ্বজুড়ে নতুন সংকট দেখা দেয়। যার ফলে দেশের অভ্যন্তরে গুজব ছড়াতে থাকে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে লিটারে আরো ১২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। যা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নাকোচ করে দেয় এবং ঘোষণা করে রমজানের আগে তেলের দাম বাড়বে না।
এর পরেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ভিত্তিক সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে সয়াবিন তেলের দাম আরো বাড়বে। ফলে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। সরকার নির্ধারিত দামের তোয়াক্কা না করে খোলা সয়াবিন তেল বা পাম তেলের দাম ১৮০ বা ২০০ টাকায়ও বিক্রির খবর পাওয়া যায়। এতে সমালোচনার ঝড় উঠলে সরকারের ভোক্তা অধিদপ্তর বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পাশাপাশি পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে অভিযান চালায়। এ সময় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইও সক্রিয় ভূমিকা রাখে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে কৃত্রিম সংকট তৈরি না করার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। পাশাপাশি ভোজ্যতেল আমদানির উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট জুন পর্যন্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
এর মধ্যেও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় সরকারের অর্থমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে ভোক্তা ও উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত ২০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হবে। যা ১৪ মার্চ প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রণালয় আরার ঘোষণা দেয় আমদানি পর্যায়ে ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হবে। যা গত বুধবার অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (মূল্যসংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক) থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এসব সুবিধা আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত।
বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারে এসব উদ্যোগের ফল ভোক্তা কখন পাবেন, এ প্রশ্নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান ভোরের আকাশকে বলেন, আগামী সপ্তাহে ভ্যাট প্রত্যাহারসহ সার্বিক বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ভোজ্যতেলের দাম নতুন করে সমন্বয়ের বিষয়ে আলোচনা হবে এবং কোন্ পর্যায়ে, কিভাবে, কবে হবে তা ঠিক করা হতে পারে।
ভোজ্যতেলের দাম কমবে কি কমবে না, এই প্রশ্নে পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. গোলাম মাওলা ভোরের আকাশকে বলেন, ব্যবসায়ীরা দাম কমাবে কিভাবে। যে ভ্যাট প্রত্যাহার হয়েছে। তা ৩ মাস পরে সুবিধা পাবে।
তবে উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে যে ভ্যাট প্রত্যাহার হয়েছে, তার প্রভাব পড়বে কি? এ প্রশ্নে ব্যবসায়ীদের এই নেতা বলেন, আমি বলতে পারব না। সরকার যে দাম ঠিক করে দিয়েছে আমরা সেই দামে বিক্রি করছি। মিল মালিকরা তেল দিবে আমরা বিক্রি করব।
একই প্রসঙ্গে মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র এজিএম তাসলিম শাহরিয়ার ভোরের আকাশকে বলেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা খুবই ভালো উদ্যোগ। এরজন্য বাজারে যে প্রভাব পড়বে তাও নিশ্চিত। তবে কখন কিভাবে কতটুকু পড়বে, তা আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভর করবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে বাজারে এক থেকে দেড় টাকা করে প্রতি লিটারে দাম কমতে শুরু করেছে।
এদিকে নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখতে সরকার টিসিবির মাধ্যমে বিতরণের জন্য ১ কোটি ৭১ লাখ লিটার ভোজ্যতেল, ১৪ হাজার মেট্রিক টন চিনি এবং ১০ হাজার টন ছোলা ক্রয় করছে। অন্যদিকে আসন্ন রোজা ও ঈদ উপলক্ষে নিত্যপণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে এসব পণ্য আমদানির বিপরীতে এলসি কমিশন ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। বলা হয়েছে, এ সুবিধা ১০ মে পর্যন্ত বহাল থাকবে।
এছাড়া ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূলে পণ্য সরবরাহ করবে সরকার। আগামী ২০ মার্চ থেকে এক যোগে কার্যক্রমের প্রথম পর্ব শুরু হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য