-->

কৃষিঋণে বেড়েছে অকৃষি লেনদেন

১০ মাসে কৃষিঋণ বিতরণ ১৯৫৩০ কোটি টাকা

জাফর আহমদ
কৃষিঋণে বেড়েছে অকৃষি লেনদেন
ফসল ফলানো, কৃষি যন্ত্রপাতি, পশুপালন ও পোলট্র্রি ফার্ম, মৎস্য চাষ এবং ফসল সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে বিতরণ করা ঋণ সরাসরি কৃষির উন্নয়নে বিতরণ করা হয়। ছবি- সংগৃহীত

কৃষিঋণে অকৃষির লেনদেন বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি ১০ মাসে অকৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছে ৪ হাজার ১৪৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গত বছরের একই সময়ে কৃষিঋণে অকৃষি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯৯৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আগের বছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে কৃষিঋণে অকৃষির প্রভাব বেড়েছে ৩৪ শতাংশ।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট বিতরণ করা ঋণের ২ শতাংশ কৃষিঋণ হিসেবে বিতরণ করে। এ কৃষিঋণের মধ্যে ফসল ফলানো, কৃষি যন্ত্রপাতি, পশুপালন ও পোলট্র্রি ফার্ম, মৎস্য চাষ এবং ফসল সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে বিতরণ করা ঋণ সরাসরি কৃষির উন্নয়নে বিতরণ করা হয়। এর বাইরে কৃষকদের মাঝে কিছু ঋণ বিতরণ করা হয় যা কৃষককে দেওয়া হলেও তা সরাসরি কৃষি কাজের জন্য দেওয়া হয় না। কৃষি মৌসুমের বাইরে কৃষকের হাতে যখন কাজ থাকে না ওই সময়ে আয় সৃষ্টিমূলক ছোট ছোট ব্যবসার জন্য ঋণ দেওয়া হয়। যা দারিদ্র্য দূরীকরণ ও কৃষি এবং কৃষকসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ঋণ বলে বিবেচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, ১০ মাসে অকৃষি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের কৃষি ঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি ১০ মাসে বিতরণ হয়েছে ১৯ হাজার ৫৩০ কোটি ২৫৬ লাখ টাকা। যা মোট চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার ৬৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১৬ হাজার ১৮০ হাজার ৮২ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ৬১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। চলতি বছরে কৃষি ঋণের পরিমাণ ও হার দুই-ই বেড়েছে। সঙ্গে কৃষিঋণের মধ্যে অকৃষি ঋণের হার বেড়ে গেছে।

কৃষিঋণের মধ্যে এই অকৃষি ঋণ বৃদ্ধির বিষয়টি কৃষির সহায়ক যান্ত্রিকায়ন সহায়ক বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও কৃষিঋণের সংস্কারক ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, কৃষি এখন আর শুধু কৃষির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। কৃষির সঙ্গে কৃষি সম্পর্কিত অনেক কর্মকাণ্ড যুক্ত হয়েছে। বাজারজাত, পরিবহণ, দোকান, মৎস্য, পোলট্র্রি পশুপালন-সব কিছু এখন কৃষি। কৃষিকে কেন্দ্র করে অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি উৎপাদন ও বিপণন যুক্ত হয়েছে। পল্লির সর্বত্র বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ফলে কৃষির কাজের ফাঁকে ফাঁকে আয় উৎসারি কাজ করছে, তাদের দিকে দৃষ্টি রেখেই দারিদ্র্য দূরীকরণ বা অন্যান্য অপশন রাখা হয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে অকৃষি ঋণ বৃদ্ধির যে দিকনির্দেশ করে সেটা তারই ফল। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার ফলে কৃষি সম্পর্কিত অকৃষি কার্যক্রম বেড়েছে। এর ফলে অকৃষি ঋণ বেড়েছে।

অর্থবছরের ১০ মাসে কৃষি ঋণের খেলাপিতে সুখবর আছে। খেলাপি ঋণ কৃষকরা ফেরত দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। চলতি ফেব্রুয়ারি শেষে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৭৭। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৯৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের বছর একই সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। একক ব্যাংক হিসাবে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের। ব্যাংকটির ২৫ শতাংশ ঋণই খেলাপি। টাকার অঙ্কে যা ৯৪২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের কাছাকাছি রয়েছে বেসরকারির দুই ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক। ব্যাংক দুটির খেলাপি ঋণের হার যথাক্রমে ২০ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।

মন্তব্য

Beta version