-->
শিরোনাম

জনপ্রতি লবণ গ্রহণের পরিমাণ কমেছে

* দিনে ১৪ গ্রাম * উৎপাদনে ব্যবহার হবে পলিথিন পদ্ধতি * ২০২৫-২৬ সালে পরিশোধিত লবণের চাহিদা হবে ২৫.৩০২ লাখ টন * বর্তমানে ১৭ কোটি ৩৮ লাখ জনগণের ভোজ্য লবণের চাহিদা ৮.৮৮ লাখ টন * ২০২৫-২৬ সালে ১৮ কোটি জনগণের লবণের চাহিদা হবে ৯.২৪ লাখ টন

জুনায়েদ হোসাইন
জনপ্রতি লবণ গ্রহণের পরিমাণ কমেছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) পরামর্শের ভিত্তিতে দেশে প্রতিজন মানুষের দৈনিক ভোজ্য লবণ গ্রহণের পরিমাণ দশমিক ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে। ছবি- সংগৃহীত

লবণ একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। এর প্রধান উপাদান সোডিয়াম ক্লোরাইড সোডিয়াম ও ক্লোরিনের সমন্বয়ে গঠিত একটি আয়নিক যৌগ। উল্লেখ্য, যৌগ হলো এক ধরনের পদার্থ, যা দুই বা ততোধিক ভিন্ন মৌলিক উপাদানের মধ্যে রাসায়নিক বন্ধনের মাধ্যমে গঠিত উপাদান। দৈনন্দিন খাদ্যদ্রব্যে ছাড়াও শিল্প, মৎস ও প্রাণিসম্পদ খাতে লবণের ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই লবণের কোনো বিকল্প নেই। সার্বিক বিবেচনায় ২০১৬ সালের জাতীয় লবণনীতি রহিত করে নতুন ‘জাতীয় লবণনীতি-২০২২’ প্রণয়ন করেছে সরকার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) পরামর্শের ভিত্তিতে দেশে প্রতিজন মানুষের দৈনিক ভোজ্য লবণ গ্রহণের পরিমাণ দশমিক ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে। ফলে প্রতিদিন একজন মানুষ ১৪ গ্রাম লবণ গ্রহণ করা স্বাভাবিক হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতীয় লবণনীতি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গত বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের স্বশাসিত সংস্থা-বিসিক শাখা থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। এর আগে ২০১৬ সালের লবণনীতিতে জনপ্রতি ভোজ্য লবণ গ্রহণের পরিমাণ নির্ধারণ ছিল ১৪.৫০ গ্রাম।

বিসিক ও মাঠপর্যায়ের তথ্য মতে, প্রতি বছর দেশে ১৬ থেকে ১৮ লাখ টন লবণ উৎপাদন হয়। লবণ সংরক্ষণে দেশে ছোট-বড় ২৭০টি মিল রয়েছে। তবে সব মিল চালু নেই। সংরক্ষণের অভাবে এবং কৃষকের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনক সময় লবণ নষ্ট হয়। ফলে চাহিদার বিপরীতে ঘাটতির সম্ভাবনায় বছরে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টন আমদানি হয়ে থাকে। বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে বা উৎপাদন পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁচা লবণ বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা কেজি দরে। আর বাজারে সেই লবণ পরিশোধিত হয়ে বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। নতুন নীতিমালায় লবণ উৎপাদনে পরিবেশবান্ধব বা জৈব পচনশীল পলিথিন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে অল্প জমিতে গুণগতমানসম্পন্ন লবণ উৎপাদন সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় লবণ চাষযোগ্য জমি রক্ষায় প্রয়োজনীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ, সংরক্ষণ ও মেরামতের ব্যাপারে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপন ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় স্থানীয় প্রশাসন এবং বিসিক প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে।

এর আগে চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি জাতীয় লবণ নীতিমালা-২০২২ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। সেই সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ‘এখন লবণ চাষের ক্ষেত্রে দক্ষিণাঞ্চল; বিশেষ করে উপকূলীয় জেলাগুলোর অনেকগুলোয় ট্র্যাডিশনাল সিস্টেমে হচ্ছে, সেটার একটা মডিফিকেশন দরকার। মাতারবাড়ী, কক্সবাজার, পায়রাসহ বেশকিছু জায়গা ডেভেলপমেন্ট কাজে নিয়েছি। সেজন্য নতুন নতুন জায়গায় উদ্বোধন করা, উদ্ভাবন করা এবং নতুন টেকনোলজির মাধ্যমে আরো প্রোডাক্টটিভিটি ইফেকক্টিভ এবং বড় করার জন্য নীতিমালা নেওয়া হয়েছে।’

এদিকে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছর পর্যন্ত জনসংখ্যা হিসাবে করা হয়েছে। জাতীয় লবণনীতি ২০১৬-এ জনপ্রতি প্রতিদিন ভোজ্য লবণ গ্রহণের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ১৪.৫০ গ্রাম। যেহেতু বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা দিন দিন লবণ গ্রহণের পরিমাণ কমানোর বিষয়ে সুপারিশ করেছে, সেহেতু জনপ্রতি প্রতিদিন ভোজ্য লবণ গ্রহণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ গ্রাম।’

চাহিদার হিসাবে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৫-২৬ পর্যন্ত জনপ্রতি ভোজ্য লবণ গ্রহণের পরিমাণ একই পর্যায়ে অর্থাৎ ১৪ গ্রাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে জনসংখ্যা হিসাবে ১৭ কোটি ৩৮ লাখ ১ হাজার ৯৫৩ জনের মোট চাহিদা ০.১২ শতাংশ বাড়িয়ে ৮.৮৮ লাখ টন করা হয়েছে। একইভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৭ কোটি ৬১ লাখ ১২ হাজার ২১০ জনের চাহিদা ৯ লাখ টন, ২০২৪-২৫ সালে ১৭ কোটি ৮৪ লাখ ৫৯ হাজার ৫৯১ জনের চাহিদা ৯.১২ লাখ এবং ২০২৫-২৬ সালে ১৮ কোটি ৮ লাখ ৩১ হাজার ৭৬০ জনের জন্য ভোজ্য লবণের চাহিদা দাঁড়াবে ৯.২৪ লাখ টন।

এছাড়া ২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য শিল্প খাতে লবণের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯-২০ সালের ৫.৯৯ লাখ টন চাহিদাকে ভিত্তি ধরে ২০২০-২১ বছরে শিল্প খাতে ৫ শতাংশ, ২০২১-২২ বছরে ১০ এবং পরবর্তীতে ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে ২০২৫-২৬ পর্যন্ত শিল্প খাতে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি (বৃদ্ধি করে) ধরে ১২.১০ লাখ টন নির্ধারণ করা হয়।

একইভাবে প্রজ্ঞাপনে প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাতে লবণের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১-২২ সালে প্রাণিসম্পদ খাতে ৩.৩৬ লাখ ও মৎস্য খাতে ০.৩৪ লাখ টন। যথাক্রমে ২০২২-২৩ সালে ৩.৪১ লাখ এবং ০.৩৬ টন। ২০২৩-২৪ সালে ৩.৪৫ এবং ০.৩৮ লাখ টন; ২০২৪-২৫ সালে ৩.৪৫ লাখ এবং ০.৩৯ লাখ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রাণিসম্পদ খাতে ৩.৫৫ লাখ টন এবং মৎস্য খাতে ০.৪১ লাখ টন চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ হিসাবে খাতটিতে ২০২১-২২ সালের মোট চাহিদা ৩.৭০ লাখ টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৫-২৬ সালে ৩.৯৬ লাখ টনে পৌঁছাবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেশে পরিশোধিত লবণের মোট চাহিদা হবে ২৫.৩০২ লাখ টন এবং একই সময়ে অপরিশোধিত লবণের চাহিদা হবে (১৭ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত করণ ক্ষতি ধরে) ৩০.৪৮ লাখ টন। উল্লেখ্য, ২০১৬ নীতিমালার আওতায় গৃহীত সব কার্যক্রম নতুন নীতিতে গৃহীত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে বলে নতুন নীতিমালা বলা হয়েছে।

মন্তব্য

Beta version