-->
শিরোনাম
বহুজাতিক কোম্পানি হিসেবে ব্যর্থ

শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যাশায় জল ঢালল রবি

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যাশায় জল ঢালল রবি
শেয়ারহোল্ডারদের অভিযোগ ‘বি’ ক্যাটাগরি টিকিয়ে রাখার জন্য এ ধরনের লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবসময়ই তুঙ্গে। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং বছর শেষে অধিকাংশ সময় ভালো লভ্যাংশ পাওয়া যায়। এ কারণে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। পুঁজিবাজারে সর্বশেষ তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি রবির বেলায়ও তেমনই আগ্রহ ছিল বিনিয়োগকারীদের। তারা ভেবেছিলেন এ কোম্পানি থেকে ভালো লভ্যাংশ পাবেন। কিন্তু বছর শেষে শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যায় জল ঢেলে দিয়েছে কোম্পানিটি। এতে বিনিয়োগকারীদের হতাশা বেড়েছে।

সম্প্রতি টেলিযোগাযোগ খাতের বহুজাতিক কোম্পানি রবি আজিয়াটা লিমিটেড ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২১ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২ শতাংশ নগদ চূড়ান্ত লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে। এর আগে সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ৩ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল রবি। সেই হিসেবে ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদন পেলে সমাপ্ত হিসাব বছরে মোট ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পাবেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা।

সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩৪ পয়সা। যেখানে আগের হিসাব বছরে আয় ছিল ৩৩ পয়সা। একইভাবে ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৬৪ পয়সায়। আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ১৩ টাকা ৯০ পয়সা। সমাপ্ত হিসাব বছরের ঘোষিত নগদ চূড়ান্ত লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য আগামী ২৮ এপ্রিল ভার্চুয়াল মাধ্যমে এজিএম আহ্বান করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট ধরা হয়েছে ৬ এপ্রিল।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির নামমাত্র লভ্যাংশ প্রস্তাব করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হতাশ শেয়ারহোল্ডাররা। তারা বলছেন, বহুজাতিক এ কোম্পানিটি তাদের সঙ্গে প্রত্যারণা করেছে। তারা যে প্রত্যাশা নিয়ে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলেন, এখন পুরোই তার উল্টো অবস্থা দেখা যাচ্ছে। কোম্পানিটির ভিত্তি এত দুর্বল, তা মানতে পারছেন না শেয়ারহোল্ডাররা। এমনকি কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এর শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। জানান, কাসাজির মাধ্যমে এ কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়। যারা বেশি দরে শেয়ার কিনেছিলেন, এখন তারাই মাশুল দিচ্ছেন। শেয়ারহোল্ডারদের অভিযোগ ‘বি’ ক্যাটাগরি টিকিয়ে রাখার জন্য এ ধরনের লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় বিনিয়োগকারী লুৎফর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা যে প্রত্যাশা নিয়ে এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলাম, প্রতিষ্ঠানটি সেই প্রত্যাশার সামান্যও পূরণ করতে পারিনি। বহুজাতিক কোম্পানি হিসাবে সবাই এখান থেকে ভালো লভ্যাংশ পাবেন বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নামমাত্র লভ্যাংশ প্রস্তাব করেছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এ ধরনের লভ্যাংশ দিলে আগামীতে বহুজাতিক কোম্পানির প্রতি আমরা আস্থা হারাব।

এদিকে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, পুঁজিবাজারে আসার আগে এ কোম্পানিটির অনেক ক্ষয়ক্ষতি ছিল। ধীরে ধীরে কোম্পানিটি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আগামীতে হয়তো তারা ভালোমানের লভ্যাংশ দিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে।

জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী ভোরের আকাশকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি বাজারে নতুন এসেছে। বিভিন্ন কারণে হয়তো প্রতিষ্ঠানটি সন্তোষজনক লভ্যাংশ দিতে পারেনি। তাছাড়া এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলদনও বেশি। সবকিছু মিলে তারা শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। এ কথা ঠিক যে বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকে সবাই ভালো কিছু আশা করে। আমার মনে হয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রবিও ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে। এদিকে বিষয়টি জানতে প্রতিষ্ঠানের সচীব মোহাম্মদ শাহেদুল আলমের মুটোফোনে একাধিরবার চেষ্টা করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

বহুজাতিক কোম্পানি রবি আজিয়াটা ২০২০ সালে ২৪ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। শুরুর দিন থেকেই ১০ টাকা অভিহিত দরের এ শেয়ারটি দর বৃদ্ধির ঝলক দেখাতে থাকে। টানা ১৫ কার্যদিবস দর বেড়ে শেয়ারদর চলে যায় ৭০ টাকা ১০ পয়সায়। এ সময় বাজারে গুজব ছিল- বহুজাতিক এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় চলে যাবে। মূলত সে কারণেই অধিকাংশ আইপিও বিজয়ীরা শেয়ারদরে রাখেন। ১৫ কার্যদিবসে দর বেড়ে (ক্লোজ প্রাইস) ৭০ টাকা ১০ পয়সা হলেও এক দিন শেয়ারটির দর সর্বোচ্চ ৭৭ টাকায় কেনাবেচা হয়। এ হিসাবে আইপিও বিজয়ীদের এক লট শেয়ারদর হয়েছিল ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে লাভ ছিল ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা। এখন সেই শেয়ারদর এসে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭০০ টাকায়।

পুঁজিবাজার থেকে ৫২৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে কোম্পানিটি। রবি আজিয়াটার আর্থিক বিবরণীতে দেখা যায়, সর্বশেষ পাঁচ বছরের মধ্যে দুই বছর লোকসানে ছিল কোম্পানিটি। এর মধ্যে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে লোকসানে ছিল। ২০১৬ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি লোকসান করে ৬৯৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। পরের বছর লোকসান কমে দাঁড়ায় ১০ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়। পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়িকভাবে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়ে লাভে ফিরে আসে কোম্পানিটি।

মন্তব্য

Beta version