-->
শিরোনাম

বাজেটে ব্যবসায়ীদের ২১ বিশেষ প্রস্তাব

জুনায়েদ হোসাইন
বাজেটে ব্যবসায়ীদের ২১ বিশেষ প্রস্তাব
সংসদ ভবন। ফাইল ছবি

আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়নে ব্যসায়ীদের পক্ষে শুল্ক ও কর সংক্রান্ত ২১টি বিশেষ প্রস্তাবনা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠিয়েছে এফবিসিসিআই। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীল খাতকে বৈশ্বিক সরবরাহ মাধ্যমে সুসংযুক্ত, জনবান্ধব, বিনিয়োগ বান্ধব এবং উৎপাদনশীল টেকসই রাজস্ব পরিকাঠামো নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শুল্ক ও কর বিষয়ে মৌলিক প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রস্তাবনাগুলো চিঠির মাধ্যমে এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়েছে।

এফবিসিসিআই মনে করছে, এসব প্রস্তাবনার ভিত্তিতে একটি বিনিয়োগ ও রাজস্ব সহায়ক বাজেট প্রণয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাবে- রাজস্ব বাড়াতে সব পেশার ব্যক্তিকে আয়কর ও মূসক নিবন্ধনে বিশেষ বিধান করা; রাজস্ব আহরণ বিভাগ থেকে রাজস্ব পলিসি পৃথক করা; বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার আলোকে সুনির্দিষ্ট সেবার বিপরীতে প্রশাসনিক খরচভিত্তিক হার ধার্য্য করা; আমদানিকৃত কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামালসহ যাবতীয় শিল্প উপকরণের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর এবং আগাম কর প্রত্যাহার করা; মূসক ৬ দশমিক ৩ চালানে সরবরাহকৃত সব পণ্যের ওপর থেকে উৎসে কর প্রত্যাহার করা; এনবিআরের সব অভিযোগ, বিরোধ মামলাবিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির আওতায় যথাযথভাবে সম্পন্ন করা; রপ্তানিমুখী সব শিল্পখাতে এক সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করা; অহেতুক খরচ এবং সময় কমাতে উৎস ও আগাম কর ফেরতের পরিবর্তে বিলোপ করা; বার্ষিক হিসাবকৃত আয়কর ব্যতীত জমিক্রয়, নির্মাণ এবং রপ্তানিমুখী শিল্প ও সেবা খাতের ইউটিলিটি বিলসহ অন্যান্য কার্যক্রমের সব ভ্যাট এবং কর সম্পূর্ণরূপে মওকুফ করা।

প্রস্তাবনায় আমদানি শুল্কস্তর নির্ধারণে এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাবে যেসব বলা হয়েছে তা হলো পরিবর্তন ছাড়াই ব্যবহৃত তৈরি পণ্য সর্বোচ্চ স্তর ২৫%+ আরডি+এসডি+আগাম আয়কর+মূসক+আগাম মূসক; তালিকায় অন্তর্ভুক্ত দেশে উৎপাদিত যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ এবং মধ্যবর্তী কাঁচামালের ৭ থেকে ১০%+ মূসক নির্ধারণ করা। তবে শিল্পখাতে শুল্ক প্রতিরক্ষণ ৩০% এর বেশি হবে না; মৌলিক এবং দেশে উৎপাদিত হয় না এমন মধ্যবর্তী কাঁচামাল (উদাহরণস্বরূপ সাধারণ ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব ব্লক তৈরির জন্য তিন (৩) এমএম স্টোন ইত্যাদি) ১ থেকে ৩%+মূসক নির্ধারণ; শিল্পখাতের যন্ত্রপাতি (উদাহরণস্বরূপ ড্রেজিং ইত্যাদিসহ কেবলমাত্র শিল্পখাতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি) এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিদ্যমান শর্তাবলি রহিত করে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পরিমাণ ভিত্তিক শুল্ক+মূসক (ভোজ্যতৈল, ক্লিংকার, লৌহ ও ইস্পাত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, লুব্রিকেন্ট ইত্যাদি) নির্ধারণ; আরডি এবং এসডি অব্যাহত থাকতে পারে যা কেবলমাত্র দ্বিপাক্ষিক বিরোধ নিষ্পত্তির পরিপ্রেক্ষিতে যখন যেভাবে প্রয়োজন হয় সংশোধন করা, একতরফা পদক্ষেপ না নেওয়া; বাংলাদেশ কর্তৃক গৃহীত বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার শুল্ক মূল্য নির্ধারণ চুক্তির বিধান অনুযায়ী শুল্ককর, এজন্য সংশ্লিষ্ট এসআরও নং-৫৭-আইন/২০০০/১৮২১/শুল্ক,তাং ৩/০২/২০০০ শুল্ক আইনে অন্তর্ভুক্ত করে যথাযথভাবে কার্যকর করা; বন্ড ও শিল্পায়ন সহায়ক যাবতীয় সুযোগ সুবিধা কয়েকটি খাতের মধ্যে সীমিত না করে সব উৎপাদনমুখী খাতের জন্য অবারিত করে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পখাতসহ গ্রামীণ ও নারী উদ্যোগ, ডিজিটাল ট্রেড এবং রপ্তানিমুখী সেবা ইত্যাদি খাতগুলোকে (দেশের মোট ৮০ শতাংশ উদ্যোগ) বন্ডের ওয়্যারহাউজ সুবিধা উন্মুুক্ত করে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার নীতিমালার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ প্রণোদনা ২০২৬ এর মধ্যে ক্রমান্বয়ে বিলোপ করে সংগতিপূর্ণ শুল্ক ও কর বিষয়ক অন্যবিধ সহায়ক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

বিক্রয় বা প্রাপ্তির ওপর আরোপিত আয়কর রহিত করা; বেতন, ফি, সুদ, লভ্যাংশ (ডিভিডেন্ড), ব্যতিত অন্যান্য লেনদেন বা প্রাপ্তির ওপর উৎসে আয়করসহ আমদানিকালে আরোপিত অগ্রিম আয়কর রহিত করা; সুনির্দিষ্ট বিধান এবং তফসিল প্রদান করে অনুমোদিত ব্যয় হিসাব নির্ধারণের স্বেচ্ছাধীন প্রক্রিয়া পরিহার করা।

করদাতা হয়রানি কমাতে এবং কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী আয়কর রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে জিপি নির্ধারণের হার রপ্তানি খাতের ন্যায় সর্বোচ্চ ১০শতাংশের মধ্যে সীমিত করা।

ব্যক্তি শ্রেণির আয়করের সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৪ লাখ টাকায় নির্ধারণ করা। এফবিসিসিআই’র প্রস্তাবনা বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসা ও রাজস্ববান্ধব এবং হয়রানিমুক্ত রাজস্ব আহরণের উদ্দেশ্যে গ্রহণযোগ্য আয়কর আইন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন কর।

এ ছাড়া মূসক এবং টার্নওভার কর হারের ক্ষেত্রে ভোক্তা ও দেশের ৮৫ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের স্বার্থ ও সামর্থ্য অনুযায়ী সকল পণ্য এবং সেবাখাতের জন্য প্রযোজ্য ভোক্তাবান্ধব, ব্যবসাবান্ধব এবং রাজস্ববান্ধব সুনির্দিষ্ট স্তরভিত্তিক মূসক হারের মৌলিক বিধান মূল মূসক আইনের মাধ্যমে বলবৎ করা জাতীয় স্বার্থে অপরিহার্য বলে এফবিসিসিআই মনে করে।

প্রস্তাবে আগাম ও উৎসে কর বিষয়ক জটিলতা নিরসনের বিষয়ে নিম্ন আয় এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ব্যবহার্য পণ্য, সাধারণ পণ্য পরিবহণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রি-সাইক্লিং, টেন্ডার বহির্ভূত সরাসরি পণ্য মেরামত বা সার্ভিসিং খাত ইত্যাদি ক্ষেত্রে মূসক ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই।

মূসক আইনের ১২১(২) এবং ১২২(২) ধারার অধীনে আপিল দায়েরকালে করদাতা কর্তৃক কেবলমাত্র হিসাবকৃত কর, যদি থাকে জমা প্রদানপূর্বক উল্লিখিত আদেশে দাবিকৃত অবশিষ্ট করের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করিতে হইবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট করদাতাকে নিজস্ব হিসাব নিকাশ পুনঃপরীক্ষার জন্য মূসক ১২ দশমিক ৫ ফরমে উল্লেখিত জব্দকৃত দলিলপত্র, রেকর্ড ইত্যাদি আবশ্যিকভাবে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে করদাতাকে ফেরত প্রদানের নিশ্চয়তা বিধান করা এবং শিল্পায়ন সহায়ক কর ও শুল্ক সুবিধা বিষয়ে সুনিদিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে এফবিসিসিআই।

মন্তব্য

Beta version