-->
শিরোনাম

সক্রিয় নন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
সক্রিয় নন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা
মো. শাকিল রিজভী।

মো. শাকিল রিজভী ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রেসিডেন্ট। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ডিএসইর পরিচালক হিসেবে। একই সঙ্গে নিজ প্রতিষ্ঠান শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও নিয়জিত রয়েছেন। পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হিসেবেও তার খ্যাতি রয়েছে। সম্প্রতি পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা ভোরের আকাশের। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ।

ভোরের আকাশ আকাশ: বর্তমানে বিশ্বের আলোচিত বিষয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে তথা পুঁজিবাজারে যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে। এই ইস্যুতে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও পতন দেখা গেছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

শাকিল রিজভী: সরাসরি তেমন প্রভাব নেই। তবে পরোক্ষ বলতে গেলে কিছু প্রভাব রয়েছে। যেহেতু আমাদের পুঁজিবাজারে রাশিয়া বা ইউক্রেনের কোনো বিনিয়োগ নেই। সেহেতু আমাদের পুঁজিবাজারে এর প্রভাব পড়ার কথা নয়। তবে এখানে আমদানি-রপ্তানির বিষয়টি রয়েছে। ওখান থেকে কিছু আমদানি করে থাকলে তার প্রভাব পড়বে। আমি মনে করি, বাংলাদেশ এই ইস্যুতে যে অবস্থানে রয়েছে তাতে আগামীতে আরো সুবিধাই পেতে পারে। কারণ সরকার ভালো পলিসিতে রয়েছে। এটা আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো।

ভোরের আকাশ: তাহলে কী যুদ্ধ ইস্যুতে বাজারের পতনের বিষয়টি গুজব বা মানসিক কারণ হিসেবে ধরে নিতে পারি?

শাকিল রিজভী: গুজব আসলেই গুজব। এটা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া। তারা যদি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং বাছ-বিচার ছাড়া শেয়ার বিক্রি করতে থাকেন তাহলে বাজার স্বাভাবিকভাবে নিম্নমুখী হবে। যে কোনো পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধারণ করা উচিত।

ভোরের আকাশ: ২০১০ সালের পর পুঁজিবাজার আর সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বর্তমানে বাজারের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ক্রয়যোগ্য অবস্থানে রয়েছে। এরপরও বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরছে না। এর প্রধান কারণ কী হতে পারে ?

শাকিল রিজভী: পতনের জের ধরে সূচক কিন্তু চার হাজারে চলে গিয়েছিল। যার কারণে শেষ পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়া হয়। সেখানে থেকে বাজার কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সূচক এখন ৬ থেকে ৭ হাজারের মধ্যে রয়েছে। তবে বিনিয়োগকারীদের আস্থার জন্য বাজারে ভালো ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে হবে।

ভোরের আকাশ: নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর তারা কিন্তু অনেকগুলো কোম্পানি পুঁজিবাজারে এনছেন। তাহলে কী এসব প্রতিষ্ঠানকে ভালো কোম্পানি বলব না?

শাকিল রিজভী: না না বিষয়টি আসলে তা নয়। ভালো কোম্পানি আসেনি তা বলব না, কোম্পানি এসেছে। তবে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার যেমন, সেই তুলনায় কোম্পানি কম আসছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি যেভাবে হচ্ছে সেই তুলনায় পুঁজিবাজারে কোম্পানি কম আসছে। এর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে ব্যাংক থেকে সহজে ঋণ পাওয়া। এখান থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পাওয়া যায়।

ভোরের আকাশ: বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেশের পুঁজিবাজারে আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশনের (বিএসইসি) রোডশো অব্যাহত রয়েছে। তবে এখান থেকে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো সুফল দেখা যায়নি। উল্টো বিদেশিরা পুঁজিবাজার ছেড়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

শাকিল রিজভী: রোডশোতে আমাদের দেশের অর্থনীতি কোন অবস্থায় রয়েছে তা জানান দেওয়া হয়। আমাদের পুঁজিবাজারের কী অবস্থা আছে তার জানান দেওয়া হয়। সবাই তো মনে করে বাংলাদেশের অর্থনীতি মানে অভাব, দরিদ্র একটি দেশ। রোডশোর মাধ্যমে আমাদের দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে তারা জানতে পারছেন। এই দিক দিয়ে রোডশো অবশ্যই সফল। তবে কোনো কিছুই হুট করে হয় না। সব কিছুর জন্য সময়ের দরকার। বিদেশিদের বার বার জানান দিতে হবে।

ভোরের আকাশ: সামনে আর একটি বাজেট আসছে। প্রতি বছর বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য বিভিন্ন ধরনের চাওয়া থাকে। এ বছর পুঁজিবাজারের জন্য আপনার চাওয়া কী?

শাকিল রিজভী: প্রথমেই ট্যাক্সের বিষয়টি চলে আসে। পুঁজিবাজারে লেনদেনের ওপর অনেক বেশি ট্যাক্স দিতে হয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যা দেখা যায় না। এমন কী আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এমনটি দেখা যায় না। লেনদেনের ওপর ট্যাক্স কমাতে হবে। আমাদের এখানে ১ লাখ লেনদেনের ওপর ৫০ টাকা ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে। যেখানে ভারতে নেওয়া হয় পাঁচ রুপি।

ভোরের আকাশ: আমাদের দেশে তো ট্যাক্স এক লাখে পাঁচ টাকা করা সম্ভব না। সংখ্যা কত হলে আপনারা তুষ্ট?

শাকিল রিজভী: না না পাঁচ টাকা তো সম্ভব না। আমার মনে হয়, ১ লাখে ২৫ টাকা নিলে ভালো হয়। এটা হলে সবাই খুশি হবে। ট্যাক্সের পলিসি হওয়া উচিত আগে ব্যবসাটা বড় করতে দেওয়া। ব্যবসা বড় করেই বড় ট্যাক্স ধরা উচিত। ব্যবসা বড় হলে ট্যাক্স কম নিলেও অ্যামাউন্টা বড় হবে।

ভোরের আকাশ: আমাদের দেশে বাজারে যতগুলো কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে বেশির ভাগই দুর্বল কোম্পানি বলে অনেকে অ্যাখায়িত করেন। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখবেন? এখানে মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির সংখ্যা কেমন?

শাকিল রিজভী: আমার মনে হয় ৩০ শতাংশের বেশি না। খুব ভালো মানের কোম্পানি ৩০ শতাংশের বেশি নেই। আমাদের যদি হাজার খানিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত থাকত তাহলে মৌরভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি আরো বেশি হতো।

ভোরের আকাশ: ব্যাংককে বলা হয় পুঁজিবাজারের সবচেয়ে শক্তিশালী খাত। কিন্তু ২০১০ সালের পর এ খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তেমন নেই। ব্যাংক শেয়ারের এই পরিস্থিতি কেন?

শাকিল রিজভী: আমি মনে করি, এর মূল কারণ বোনাস শেয়ার। ২০১০ সালের আগে বা পরে এই খাত থেকে সবচেয়ে বেশি বোনাস শেয়ার এসেছে। যে কারণে শেয়ার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ২০১০ সালে যার ১০০ শেয়ার ছিল এখন তা বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে গেছে। ফলে যার যার শেয়ার দর ৪০ টাকা ছিল তা এখন চার টাকায় চলে এসেছে।

ভোরের আকাশ: বিএসইসিতে নতুন কমিশন আসার পর পুঁজিবাজার আমূল বদলে গেছে বিভিন্ন মহল থেকে এমনটি শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

শাকিল রিজভী: আমি মনে করি, বিএসইসি কর্তৃপক্ষ ভালো কাজ করছেন। তারা সবসময় পুঁজিবাজারে নজরদারি রাখছেন। চেষ্টা করছেন ভালো ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার। শুধু বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন নয় ডিএসই, সিএসইসহ এই সংশ্লিষ্ট সবাই মিলে চেষ্টা করছে পুঁজিবাজারকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার। আসলে সবার প্রচেষ্টা ছাড়া এটা সম্ভব না।

ভোরের আকাশ: পুঁজিবাজারের উত্থান-পতনের সঙ্গে সবসময়ই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নাম জড়িয়ে থাকে। অভিযোগ রয়েছে তারা বাজারের বৈরী পরিস্থিতিতে নিজেদের আসল কাজটি করেন। অভিযোগের ব্যাখ্যাটি কীভাবে দেবেন?

শাকিল রিজভী: আমি এভাবে দেখতে চাই না। একটু ভিন্নভাবে দেখতে চাই। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী তো আসলে একজন নন, অনেক। এখানে কেউ বিক্রি করবেন, কেউ কিনবেন এটাই নিয়ম। সবাই তো নিয়মের মধ্যে থেকে মুনাফা করতে চাইবে। তারা এই কাজটি ঠিকমতো করছে কিনা এটাই প্রশ্ন। একটি কথা প্রায় শোনা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারকে সাপোর্ট দিচ্ছে না। আসলে এখানে সাপোর্ট দেওয়া বিষয় না। আমি বলব, তারা সক্রিয় না। সবাই যদি একযোগে শেয়ার কেনাবেচা বন্ধ করে দেয় তাহলে ভলিয়ম কমে যায়। এই জায়গাটাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় হওয়া দরকার।

ভোরের আকাশ: সম্প্রতি বিএসইসি ক্যাশ লেনদেন যে বন্ধ করেছে। পুঁজিবাজারে এর প্রভাব কী?

শাকিল রিজভী: এটাতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। ছোট ছোট বিনিয়োগকারী যারা বিভিন্ন খরচ মেটাতে ক্যাশ বা নগদ টাকা চান। কিন্তু এখন সেটা বন্ধ। এটাতে বাজারের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে বিনিয়োকারীরা শঙ্কিত এবং অনেকে বিমুখ হচ্ছেন। ক্যাশ লেনদেন বিনিয়োগকারীদের বড় সুবিধা।

ভোরের আকাশ: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

শাকিল রিজভী: ভোরের আকাশকেও অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য

Beta version