-->
শিরোনাম

তরমুজের উৎপাদন বাড়লেও দাম কমেনি

জুনায়েদ হোসাইন
তরমুজের উৎপাদন বাড়লেও দাম কমেনি
জানা গেছে, গত বছর কৃষক ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে তরমুজের ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর তরমুজের চাষ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ছবি- ভোরের আকাশ

চৈত্রের দাবদাহের সঙ্গে এ বছর রমজান মাস শুরু হওয়ায় মৌসুমি ফল তরমুজের চাহিদা অনেক বেড়েছে। আর এ সুযোগে কেজি দরে বা পিস হিসেবে ফলটি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কৃষকপর্যায় থেকে ৫০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। আর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা চলছে। গেল বছর তরমুজের কেজি দর নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে রাস্তায় নামতে হয়েছে। অনেককে জরিমানাও করা হয়েছে। আর এ বছর দোকানিরা নিজেরা আগে থেকেই ওজন ঠিক করে পিস বা কেজি দরে বিক্রি করছেন। রাজধানীতে গতকাল মঙ্গলবার প্রতি কেজি তরমুজ আকারভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, গত বছর কৃষক ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে তরমুজের ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর তরমুজের চাষ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। ইতোমধ্যে ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও বরিশাল থেকে তরমুজ ঢাকায় আসতে শুরু করেছে। এ ছাড়া নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ উত্তরাঞ্চলের তরমুজ আসতে শুরু করেছে।

ঢাকার সদরঘাট, কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর আগাম জাতের তরমুজের ভালো উৎপাদন হয়েছে। কৃষকরা ইতোমধ্যে ফসল তুলতে শুরু করেছেন। বাজারে পর্যাপ্ত তরমুজ আসছে। তবে, এই সময়ে দাম কমার লক্ষণ নেই। দোকানিরা বলছেন, আড়তে দাম বাড়ায় তাদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে সদরঘাটের একজন আড়তদার মো. হোসেন (মূল নাম প্রকাশ হয়নি) ভোরের আকাশকে জানান, মৌসুমি ফলের মধ্যে তরমুজ দ্রুত পচনশীল। তাই আড়তে এই ফল বেশি সময় রাখা সম্ভব নয়। সেজন্য গড়ে ১০ শতাংশ লাভে কিক্রি করতে হয়। খুচরা বিক্রেতারা আড়তের দোহাই দিয়ে দাম বাড়ানোর কথা শোনা যায়। মূল তথ্য হলো- তারা বেশির ভাগ সময় বাকিতে ফল কিনে বিক্রির পর টাকা পরিশোধ করে থাকেন। এতে তাদের ক্ষতির পরিমাণ কম হলেও বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি করেন।

পাইকারি এ ব্যবসায়ী জানান, কেজি দরে তরমুজ বিক্রি হলে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।

এদিকে সচেতন মহল মনে করেন, ব্যবসায়ীদের অতি লোভের কারণে নিত্যপণ্যসহ ফলমূলের দাম বেড়ে থাকে। আর এ নিয়ে বাজার তদারকি কমিটিকে আড়ত এবং মাঠপর্যায়ে পর্যবেক্ষণ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা। যদিও সরকারের অধিদপ্তরগুলো বলছে, অনৈতিকতা আর সুযোগসন্ধানীদের কারণে বাজার অস্থির হয়ে থাকে। অসাধু এই চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে ভোক্তার সচেতনতা জরুরি।

এদিকে সরকারি কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এক হিসাব থেকে জানা গেছে, গত বছর ৪৩ হাজার ৩৪৭ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল তরমুজ। ভালো দাম পেয়ে এ বছর ৬৭ হাজার ৯৫২ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষাবাদ হয়েছে।গত বছর ফল উৎপাদন হয়েছিল ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৯৮৯ টন। ২০২০ সালে ৩৮ হাজার ৮২৪ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টন তরমুজ।

মঙ্গলবার রাজধানীর মালিবাগ থেকে শুরু করে, মৌচাক, শান্তিনগর, ফকিরাপোল, মতিঝিল, গুলিস্তান, সদরঘাট এলকায় অস্থায়ী যতগুলো তরমুজের দোকান রয়েছে তার সবগুলোতে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। যদি কোনো ক্রেতা পিস হিসেবে কিনতে চান তারা পিস হিসেবেও বিক্রি করছেন। এতে একই দামে বিক্রি করছেন।

মূলত পিস হিসেবে বিক্রির ক্ষেত্রে দোকানিরা আগে থেকেই ওজন দিয়ে থাকেন প্রতিটি তরমুজের। আর ওই আন্দাজে কেজি দরের ভিত্তিতে দাম চেয়ে থাকেন তারা। আর এটি একটি সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে। প্রায় সব দোকানে একই দামে বিক্রি করা হচ্ছে এই মৌসুমি ফল।

মন্তব্য

Beta version