-->
শিরোনাম

আগামী ১৫ দিন ৪ ঘণ্টা করে গ্যাস বন্ধ

জুনায়েদ হোসাইন ও ইফ্ফাত শরীফ
আগামী ১৫ দিন ৪ ঘণ্টা করে গ্যাস বন্ধ

রমজান মাসের প্রথম ১০ দিন পার হলেও নতুন করে আজ থেকে পরবর্তী ১৫ দিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা করে দেশের সব শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানালেও সিদ্ধান্ত মেনে নিতে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের নির্দেশনা দিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) জনসংযোগ দপ্তর থেকে তারিকুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘পবিত্র রমজান উপলক্ষে আগামী ১২ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী ১৫ দিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত (৪ ঘণ্টা) সব শিল্প শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ভিজিল্যান্স টিম বিষয়টি নিয়মিত মনিটরিং করবে।’ তবে সাময়িক এ অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে পেট্রোবাংলা।

কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ভারের আকাশকে বলেন, ‘আমাদের ডাইং ইউনিট, কিন্তু ২৪ ঘণ্টায় চলে। বর্তামনে দেশের যে ডাইং সক্ষমতা তাতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। যে পরিমাণ ফেব্রিক্স লাগে, সে পরিমাণ ডাইং কিন্তু নেই। ফলে ২৪ ঘণ্টা চালানোর পরও আমরা সঠিক পরিমাণ ফেব্রিক্স পাই না। যার কারণে অনেকের রপ্তানিতে সমস্যা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪ ঘণ্টা যদি (গ্যাস) বন্ধ থাকে, তাহলে এটাও আমাদের জন্য বড় সমস্যা হবে। এ কথাগুলো আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভায় তুলে ধরেছি। একটি হলে, উৎপাদন ব্যাহত হবে, আরেকটি হলো উইংসে যখন মাল থাকে, তখন কোনোটি ৭ ঘণ্টা বা ৮ ঘণ্টা রাখতে হয়। এক্ষেত্রে যদি একটি মাল ১২টার সময় ডাইংয়ে ওঠাই, তাহলে তা নামাতে ৭টা বাজবে। তাহলে ৫টার সময় যদি গ্যাস বন্ধ করা হয়, তাহলে উইংসের মধ্যে যে মাল থাকবে তা নষ্ট হবে। ফলে উৎপাদন কম হবে এবং মাল নষ্ট হবে। এতে আমাদের যে রপ্তানি সময় সূচি (অর্ডার) তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এগুলো আমরা নীতিনির্ধারণীদের কাছে তুলে ধরেছি।’

‘দ্বিতীয় বিষয় হলো- চায়না, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং মিয়ানমারসহ আমাদের যারা প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ সবাই, কিন্তু একটা অসুবিধার মধ্যে আছে। চায়নায় এখন লকডাউন চলছে। এর কারণে চায়নার ওপর যারা নির্ভরশীল ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলো এখন সমস্যার মধ্যে আছে। ফলে ক্রেতারা কিন্তু তাদের কাছ থেকে মাল নিতে পারছে না। শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি সবার জানা, পাকিস্তানের পরিস্থিতি নতুন করে ঘোলাটে অবস্থা। এসব কারণে ক্রেতারা আমাদের কাছে আসছেন। বিশ্ব পরিস্থিতিতে বর্তমানে ক্রেতাদের জন্য নিরাপদ বাণিজ্য কেন্দ্র হচ্ছে এখন বাংলাদেশ। ঠিক এ সময়ে যদি আমরা তাদের চাহিদা পূরণ করতে না পারি, পণ্য রপ্তানির সময় (রপ্তানি চুক্তি) রক্ষা করতে না পারি, তাহলে যেসব নতুন ক্রয়াদেশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা আমাদের হাতছাড়া হবে’, বলছিলেন মোহাম্মদ হাতেম।

তিনি বলেন, ‘তবে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সরকার যদি মনে করে, তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে- এটি আরো ভালো উদ্যোগ। তাহলে আমাদের নিজেদের স্বার্থ, ব্যবসাকে জলাঞ্জলি দিয়ে, বলি দিয়ে হলেও সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। ইতোমধ্যে খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের এ বিষয়ে জানিয়ে দিয়েছে। যদিও এ সিদ্ধান্ত মেনে নিলে ব্যবসায় বিশাল ধরনের অসুবিধা তৈরি হবে। তারপরও রোজার মাসের এ ১৫ দিন আমরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে অনুরোধ জানিয়েছি।’

এ সিদ্ধান্তের কারণে শ্রমিকের ঈদ ছুটি বা বেতন বোনাস নিয়ে সমস্যা তৈরি হতে পারে- এ প্রশ্নে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘অবশ্যই হবে! অবশ্যই হবে! কারণ আমি (উদ্যোক্তা) এ মাসে এত (লক্ষ্যমাত্রা) রপ্তানি করব। সেই পরিমাণ রপ্তানি করে, সেই তথ্য-উপাত্ত ব্যাংকে দিলে ব্যাংক আমাদের যে টাকা দেয়, তা দিয়ে শ্রমিকের বেতন-বোনাসসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার চাহিদা মিটিয়ে থাকি। এখন যখন উৎপাদন কম হবে, রপ্তানি কম হবে, ব্যাংকও সেভাবে তথ্য যাবে এবং তার ভিত্তিতে টাকা আসবে।’

‘এখন আমাদের দাবি হচ্ছে- দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান করা। দ্বিতীয় হলো- ৪ ঘণ্টা ব্যতীত যে সময়টায় গ্যাস থাকবে, সেই সময়টা যাতে পর্যপ্ত প্রেসারে (চাপে) গ্যাস সরবরাহ পাই। এটি যাতে নিশ্চিত করা হয়’, যুক্ত করেন তৈরি পোশাক খাতের এ ব্যবসায়ী নেতা।

পরিস্থিতির বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান ভোরের আকাশকে বলেন, শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। তা পণ্যের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি করে দিতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদিত পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস পাবে। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্প, বয়লার ব্যবহার করতে হয়- এমন শিল্প বা প্লাস্টিক শিল্প ইত্যাদি শিল্পে গ্যাস সরবরাহ করা না হলে উৎপাদন হ্রাস পাবে। ফলে অনুৎপাদনশীল শ্রমিকদের মজুরি ও অব্যবরিত উৎপাদন উপকরণের অপচয় ব্যবসায়ীরা বহনে সক্ষম হবে না, যা সামগ্রিকভাবে দেশ ও অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর নয় বলে আমি মনে করি।’

মন্তব্য

Beta version