-->
শিরোনাম

ঈদের কারণে বৈশাখী পোশাকের বাজারে ভাটা

শিপংকর শীল
ঈদের কারণে বৈশাখী পোশাকের বাজারে ভাটা
রাজধানীর একটি দোকানে বৈশাখী পোষাক

পহেলা বৈশাখকে ঘিরে পোশাকের বাজারে প্রতিবছর যে রকম জমজমাট প্রস্তুতি থাকে, এবারো সে চিত্র দেখা যায়। এবারের বর্ষবরণ হচ্ছে রোজার মধ্যে। এরই মধ্যে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো বৈশাখ উপলক্ষে এনেছে নতুন নকশার পোশাক।

পোশাকের ক্ষেত্রে আমেজের কমতি নেই। একেক ফ্যাশন হাউস একেক থিমে করেছে পোশাকের নকশা। সেই সঙ্গে বাড়তি আয়োজন হিসাবে অনেক হাউসেই রয়েছে পরিবারের সবার জন্য বা যুগলদের জন্য একই রং ও নকশার পোশাক, যা উৎসবে বাড়তি আনন্দ দেবে বলে মনে করছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা।

বৈশাখ উপলক্ষে ছেলেদের শার্ট, টি-শার্ট, ফতুয়া, মেয়েদের কামিজ, থ্রিপিস, ওয়ান পিচ, টপস, বৈশাখের শাড়ি, শিশুদের সব ধরনের পোশাক প্রস্তুত করে দেশি ফ্যাশন হাউসগুলো।

রঙ ও নকশার দিক থেকে তা বছরের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভিন্ন হয়ে থাকে। ফলে কেবল বৈশাখী উৎসবকে কেন্দ্র করেই বৈশাখের পোশাকগুলো বিক্রি হয়।এবারের উৎসবে বাড়তি আনন্দ থাকলেও বিক্রি নিয়ে হতাশ ফ্যাশন হাউসগুলো।

বৈশাখের পোশাকের বাজারের আমেজ নিয়ে কথা হয় নিউ যোগী ফ্যাশনের কর্ণধার মো. রাসেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবারের বৈশাখে এখন পর্যন্ত ২০ ভাগও পোশাক বিক্রি হয়নি। এটার প্রধান কারণ হলো সামনে রমজানের ঈদ।

প্রতিবছর বৈশাখে মানুষ কেনাকাটা করে কিন্তু ক্রেতারা এবার দ্বিধাদ্বন্দে আছে। বেশির ভাগ ক্রেতা ঈদে কেনা-কাটা নিয়ে চিন্তা করছে। তাই বৈশাখের বাজারে ক্রেতা তেমন দেখা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে মো. রাসেল বলেন, গত দুই বছর বৈশাখ ভালোভাবে পালিত হয়নি। যার ফলে দুই বছর আমরা লোকসানে ছিলাম। আবার এখন বৈশাখ ও রমজান একসঙ্গে হওয়ায় মানুষ বৈশাখের পোশাক আলাদাভাবে কিনছেন না।

শুধুমাত্র দেখা যায়, যারা সেলিব্রেটি, শিল্পকলার সঙ্গে যুক্ত যেমন- কলাকুশলী, সংগীতশিল্পী ও কিছু এলিট শ্রেণি বৈশাখের পোশাক কিনছে। যারা সাধারণ মানুষ তারা ঈদের দিকে থাকিয়ে এখন কিনছেন না। যে পরিমাণ মজুত সে তুলনায় মজুত থাকা কাপড়ের ১৫ ভাগ বিক্রি হয়নি।

নতুন সংগ্রহ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে ফ্যাশন আল বোরকা। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মো. জুয়েল বলেন, আমাদের এবারের বৈশাখে মূল প্রেরণা হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে টি-শার্ট। মূল রং হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে লাল, সাদা, ব্লু, ক্রিম ও অলিভ। সহকারী রং হিসাবে আছে প্যারোট গ্রিন, লাইট অলিভ, পিংক, লাইট পেস্ট, ব্রাউন ও গোল্ডেন হলুদ।

বিভিন্ন ধরনের কটন, লিনেন ও হাফসিল্ক কাপড় দিয়ে পোশাকগুলো করা হয়েছে। পোশাকের নকশাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানা ভ্যালু অ্যাডেড মিডিয়ার ব্যবহারে। এর মধ্যে রয়েছে স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, হাতের কাজ ইত্যাদি। কেবল বড়দের নয়, প্রতিটি উপলক্ষে ছোটদের পোশাককে সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকি আমরা।

সে জন্য বাচ্চাদের সংগ্রহও হয় বিশেষভাবে। রয়েছে পরিবারের সবার জন্য একই ধরনের ম্যাচিং পোশাক। বাবা-মা, মা-মেয়ে, বাবা-ছেলে এমনকি পরিবারের সবাই একই থিমের পোশাক পরে উদযাপন করতে পারবেন এবারের রোজার আমেজের বৈশাখী উৎসব।

বিক্রি কম হওয়ায় আমরা খুবই হতাশ। ক্রেতা অনেক আসে তবে সে পরিমাণে কেউ কিনে না। সবাই দেখে চলে যায়।

এ বিষয়ে ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সিনথিয়া ইসলাম বলেন, আগামী কালই পহেলা বৈশাখ। সব বাঙালির কাছেই ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিনটি। এবার পহেলা বৈশাখ ও রমজান একসঙ্গে।

আমি বৈশাখের একটি শাড়ি কিনেছি মাত্র। সামনে ঈদ, তাই বৈশাখে আরো কিনতে চাইলেও পারছি না। কারণ, বাজেটের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। তা ছাড়া একসঙ্গে দুইটা উৎসব হওয়ায় কেনাকাটার ক্ষেত্রে দুইটাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটের নোঙর ফ্যাশন হাউসে বৈশাখের কাপড় দেখছেন সাদিয়া ইসলাম। বৈশাখের কেনাকাটা কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে সাদিয়া ইসলাম বলেন, এবারের উৎসবে মেয়েদের জন্য সুন্দর সুন্দর, থ্রি-পিস, ওয়ান পিচ, টপস, বৈশাখের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, সিঙ্গেল কামিজ বাজারে এসেছে।

কিন্তু এগুলোর দাম অনেক বেশি। পছন্দ হলেও কিনতে পারছি না। ইচ্ছা ছিল সব আইটেম থেকে একটা করে কেনার কিন্তু বাজেট না থাকায় কিনতে পারছি না। এ ছাড়া বৈশাখের জন্য যেগুলো কিনব সেগুলো যেন ঈদের সময়ও ব্যবহার করতে পারি সেভাবে কিনতে চাচ্ছি।

বিক্রি কম হলেও আড়ংসহ অন্যান্য দেশীয় ফ্যাশন হাউসও এরই মধ্যে এনেছে বৈশাখের পোশাক। এসব পোশাকের মধ্যে আছে মেয়েদের শাড়ি, থ্রি-পিস, সিঙ্গেল কামিজ, কুর্তি, ওড়না, রেডি ব্লাউজ,ব্লাউজ পিস, আনস্টিচড থ্রি-পিস।

ছেলেদের পোশাকের মধ্যে আছে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, টি-শার্ট, উত্তরীয়। ছোটদের পোশাকের মধ্যে আছে শাড়ি, থ্রি-পিস, সিঙ্গেল কামিজ, ফ্রক, স্কার্ট টপস, পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, কাপল ও ফ্যামিলি ড্রেস।

বৈশাখের পরই আসছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। আর এ উপলক্ষে এরই মধ্যে বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ড তাদের শো-রুম সাজিয়েছে নতুন নকশার পোশাক দিয়ে।

আড়ংসহ অন্যান্য ফ্যাশন হাউসও এনেছে ঈদের কালেকশন। দেশি দশের প্রতিষ্ঠান সাদাকালো, কে-ক্র্যাফট, নগরদোলা, বিবিয়ানা, রঙ বাংলাদেশ, বাংলার মেলা, দেশাল, অঞ্জন’সসহ দেশীয় অন্য হাউসও ঈদের জন্য সব বয়সিদের নতুন নকশার পোশাক এনেছে।

শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের মেঘ, আর্টিজ্যান, বালুচর, পলো প্লাসসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসও এনেছে ঈদের পোশাক। এসব পোশাকের মধ্যে আছে পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া, টি-শার্ট, পলো শার্ট, সালোয়ার-কামিজ, টপস, সিঙ্গেল কামিজ ইত্যাদি।

 

মন্তব্য

Beta version