-->
শিরোনাম
প্রকট হচ্ছে ক্রেতা সংকট

সস্তা শেয়ারে সয়লাব পুঁজিবাজার

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
সস্তা শেয়ারে সয়লাব পুঁজিবাজার
ডিএসই ও সিএসইর লোগো

অবিরাম পতনে ধরাশায়ী হয়ে পড়ছে পুঁজিবাজার। কিছুতেই পতনের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। উল্টো প্রতিনিয়তই কমছে লেনদেন হওয়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর। একই সঙ্গে সূচকের পাশাপাশি হ্রাস পাচ্ছে বাজার মূলধনও। এর জের ধরে দিন যত যাচ্ছে ততই পুঁজিবাজারে সস্তা শেয়ার সংখ্যা বাড়ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ক্রেতা সংকট। বর্তমানে পুঁজিবাজারে ক্রেতা সংকট চরমে। এতে বাজার নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বাজার সংশ্লিষ্ট সকলেই।

বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের দুইটি শেয়ার পাওয়া যাচ্ছে ১০ টাকা কমে। চার থেকে পাঁচ টাকার মধ্যে এই শেয়ার হাত বদল হচ্ছে। সর্বশেষ এ কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার চার টাকা ৮০ পয়সা।

একইভাবে ১১ টাকায় কেনা যাচ্ছে ফাস্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ডের দুইটি ইউনিট। বর্তমানে এই ফান্ডের প্রতিটি ইউনিট কেনা বেচা হচ্ছে পাঁচ টাকা ৩০ পয়সা করে। এছাড়া আইএফআইসি ব্যাংক ফাস্ট মিউচুয়াল ফান্ডের দুইটি ইউনিট ১১ টাকায় মিলছে। বর্তমানে এ ইউনিট কেনা বেচা হচ্ছে পাঁচ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৫০ পয়সায়। একইভাবে ১১ টাকা খরচা করলে দুইটি করে শেয়ার পাওয়া যাচ্ছে ফাস্ট ফাইন্যান্স, ফাস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনালের। এই পরিস্থিতির জন্য চলমান বাজারের পতনকে দায়ী করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বাজার পরিস্থিতি এমন না হলে শেয়ার ও ইউনিটদর এতে নিচে নামত না।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, পতনের জের ধরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আটটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার মিলছে ১০ টাকা কমে। একই দরে মিলছে তালিকাভুক্ত ২৯টি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। অনেক আগে এসব শেয়ার ও ইউনিটের দর অভিহিত দরের নিচে নেমে যায়। কিন্তু সম্প্রতি এসব শেয়ারের দর আরও নিচে নেমে গেছে। যে কারণে এসব শেয়ার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীরা।

বর্তমানে ১০ টাকা কমে লেনদেন হওয়া ছয় প্রতিষ্ঠান হচ্ছেÑআইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলস, ফ্যামিলি টেক্স, ঢাকা ডায়িং ও পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স। এ তালিকায় রয়েছে এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড, ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড, এক্সিম ব্যাংক ফাস্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ফার্স্ট জনতা মিউচুয়াল ফান্ড, আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, পিএইচপি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড মোট ২৯টি ফান্ড। এছাড়া তালিকাভুক্ত অ্যাপোলো ইস্পাত, বেক্সিমরকা সিনথেটিক, কেয়া কসমেটিকস, নূরানি ডায়িং, রিজেন্ট টেক্সটাইল, আরএন স্পিনিং, তুংহাই নিটিং এবং জানিহ টেক্সটাইলের শেয়ার ১০ টাকা কমে লেনদেন হচ্ছে।

এদিকে দিন যত যাচ্ছে পুঁজিবাজারে ক্রেতা সংকট তত প্রকট হচ্ছে। শেয়ার সস্তা হলেও পাওয়া যাচ্ছে না ক্রেতা। মূলত বাজার পরিস্থিতি খারাপ থাকায় কেউ ঝুঁকি নিতে যাচ্ছেন না। আগামীতে বাজার পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে এই শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ার প্রধান কারণ, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি এবং কোম্পানির আর্থিক অবস্থা। প্রতিষ্ঠানগুলো যখন পুঁজিবাজারে আসে, সে তুলনায় এখন আর্থিক অবস্থা করুণ। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান শেয়ারহোল্ডারদের কোনো রিটার্ন দিতে পারছে না। অন্যদিকে ভারি হচ্ছে লোকসানের বোঝা। যে কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই, যার জেরে এসব কোম্পানির শেয়ারদর কমে গেছে। আর চলমান পতন এই পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করেছে। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর অবস্থাও করুণ। পুঁজিবাজার ভালো ফান্ডগুলোর অবস্থাও ভালো নেই। কারণ ফান্ডগুলোর মূল আয় আসে পুঁজিবাজার থেকে। মার্কেট ভালো না থাকলে ফান্ডগুলোর অবস্থাও ভালো থাকে না। যে কারণে এসব ফান্ডের ইউনিটের দর কমে গেছে অস্বাভাবিক হারে।

এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বিনিয়োগকারীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তারা পুঁজি বিনিয়োগের আগে অনেক ভাবনা-চিন্তা করেন। কারণ সবাই তার পুঁজির নিরাপত্তা খোঁজেন। বিনিয়োগকারীদের এই সচেতনতার জন্যই দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর অনেক কমে গেছে।

একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এ কথা সত্যি যে এসব কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালো নয় কিন্তু অস্বাভাবিকভাবে দরপতন হওয়ার জন্য দায়ী বাজার পরিস্থিতি। কারণ যেসব কোম্পানির শেয়ার পাঁচ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে এর মধ্যে এ ক্যাটেগরির কোম্পানিও রয়েছে। তবে দুর্বল কোম্পানির শেয়ারদর কমার জন্য বিএসইসিকেও দায়ী করেন তিনি। তিনি বলেন, বিএসইসি যদি কোম্পানি অনুমোদন করার ক্ষেত্রে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে, তাহলে কোম্পানিগুলোর এমন অবস্থা হয় না। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও অনেক উপকৃত হন। বিএসইসি যদি দ্রুত বাইব্যাক আইন প্রণয়ন করে, তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোর টনক নড়বে। আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তারা পুঁজিবাজারে আসবেন না।

মন্তব্য

Beta version