-->

কমেছে করোনা, বেড়েছে কৃষিঋণ বিতরণ

* ৯ মাসে বিতরণ ২১ হাজার কোটি টাকা

জাফর আহমদ
কমেছে করোনা, বেড়েছে কৃষিঋণ বিতরণ
প্রতীকী ছবি

করোনায় বাধাগ্রস্ত হয়েছে কৃষি কার্যক্রম। থমকে গিয়েছিল কৃষি প্রক্রিয়াকরণ ব্যবসা বাণিজ্য। এর প্রভাব পড়েছিল কৃষি ঋণে। তবে করোনা মহামারি থেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষি সম্পর্কিত কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ঋণে। বেড়ে গেছে কৃষি ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হাল নাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ- নয় মাসে ২১ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। যা ৯ মাসের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ। আগের বছর একই সময়ে বিতরণ হয়েছিল ৯৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ৮ বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের বিতরণ করার কথা ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। আর দেশি-বিদেশি ৪৮ বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ করার কথা। জুলাই-মার্চ ৯ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৯ হাজার ৯৪ কোটি টাকা। যা পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রার ৮২ শতাংশ। বা ৯ মাসের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও দশ ভাগ বেশি।

কৃষিঋণের শস্যে ঋণ বিতরণ সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শস্যে কৃষিঋণ বিতরণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বেশি বিতরণ হয়েছে। শস্য ছাড়াও সেচ, কৃষি যন্ত্রপাতি, পশুপালন, মৎস্য চাষ, পল্লি দারিদ্র্য দূরীকরণ ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাতের ঋণ কৃষিঋণ হিসেবে বিবেচিত। এর মধ্যে করোনা মহামারিকালীন সময়ের জন্য শস্যের সুদহার নির্ধারিত হয়েছে ৫ শতাংশ। কৃষির বাকি উপখাতগুলোতে ৯ শতাংশ সুদ নির্ধারিত রয়েছে। ৯ মাসে শস্যে কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছে ৯ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। কৃষক পর্যায়ে যার সুদহার ৫ শতাংশ। করোনা মহামারি প্রতিরোধে শস্য বিতরণে সরকার ৪ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কৃষকের মাঝে ঋণ বিতরণের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ঋণ বিতরণ সম্পর্কিত তথ্য উপস্থাপন করলেই ৪ শতাংশ হারে অপারেটিং চার্জ হিসাবে পাচ্ছে। এর ফলে কৃষকরা ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা পেলেও তা সরকারের কোষাগার থেকে যাচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ বিতরণ করে যথারীতি মুনাফা করছে।

দেশি-বিদেশি ব্যংকগুলোর কাছ থেকে কৃষি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কৃষককে বেশি সুদহারে ঋণ নিতে হয়। একই ঋণ রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে থেকে নিচ্ছে ৯ শতাংশ হারে। কিন্তু যখন বেসরকারি ব্যাংকের তহবিল থেকে এনজিওর মাধ্যমে নিচ্ছে তখন সুদ গুনতে হচ্ছে ২০ থেকে ২৪ শতাংশ হারে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ ৯ মাসে এসব ব্যাংকের বিতরণ করা ১২ হাজার ৪১০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে দশ হাজার কোটি টাকার সুদ গুনতে হচ্ছে ২০ থেকে ২৪ শতাংশ। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ ৯ মাসে বিতরণ করা হয়েছিল ১০ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা।

এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করা কৃষিঋণের সুদহার বেশি হলেও এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। যেসব ব্যাংকের পল্লি অঞ্চলে শাখা নেই, বিশেষ করে দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পল্লি অঞ্চলে শাখা নেই। এসব ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের ২ শতাংশ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করার বিধান জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পল্লি অঞ্চলে এসব ব্যাংকের নিজস্ব শাখা না থাকায় এমআরএ নির্ধারিত ২৪ শতাংশ হারে এনজিওর মাধ্যমে কৃষিঋণ বিতরণের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তৎকালীন গর্ভনর ড. আতিউর রহমান ২০১০ সালে কৃষকের কাছে অর্থ পাঠানোর লক্ষ্য নিয়ে এ ব্যবস্থা চালু করেন।

এ বিষয়ে ড. আতিউর রহমানের বক্তব্য হলো, কৃষকের কাছে টাকা পাঠানো এই ঋণের প্রধান উদ্দেশ্য। পল্লি অঞ্চলে যেসব ব্যাংকের শাখা নেই তারা যদি এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ না করে তাহলে বেসরকারি ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ বিতরণ করবে না। আর কৃষি ঋণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো কৃষকের কাছে টাকা পাঠানো। এক্ষেত্রে সুদহার কিছুটা বেশি হলেও কৃষককে জামানত দিতে হচ্ছে না; কাল ক্ষেপণ হচ্ছে না, সময়মতো পেয়ে যাচ্ছেন এবং মধ্যম ব্যক্তির প্রয়োজন হচ্ছে না। এতে কৃষকের কাছে টাকা পৌঁছাচ্ছে। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে এ কথাও বলা হয়েছে, তারা ক্রমান্বয়ে এনজিওনির্ভরতা কমিয়ে আনবে। এবং নিজেদের শাখার মাধ্যমে বিতরণ করবে।

মন্তব্য

Beta version