-->
শিরোনাম
ঈদের কেনাকাটা

শপিংমল ও শোরুমে বাড়ছে ভিড়

তৌহিদুজ্জামান জিহাদ
শপিংমল ও শোরুমে বাড়ছে ভিড়
এ বছর করোনার ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠে বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্সে জড়ো হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

ঈদকে ঘিরে নতুন পোশাক কিনতে ভিড় বাড়ছে শপিংমলসহ নামিদামি শোরুমে। কয়েক হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে পাঞ্জাবি-পায়জামা, শার্ট-প্যান্ট, শাড়িসহ নতুন ডিজাইনের পোশাক। দেশের বড় বড় শপিংমল দেশি-বিদেশি নানা রকমের নামিদামি পোশাকে সাজানো হয়েছে।

করোনার কারণে গেল দুই বছরে শপিং কমপ্লেক্সগুলোয় তেমন ভিড় হতে দেখা যায়নি। কিন্তু এ বছর করোনার ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠে বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্সে জড়ো হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রঙ বাংলাদেশ, সৃষ্টি, নিপুণ, সাদাকালো, নগরদোলা, কে ক্রাফ্ট, দেশাল, বাংলার মেলা, অঞ্জনস, বিবিয়ানা নামের এই ১০টি দেশীয় নামিদামি ব্র্যান্ডের সমন্বয়ে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের সপ্তম তলায় অবস্থিত দেশি দশ। ঈদ উপলক্ষে এখানে নতুন ডিজাইনের পোশাকের কালেকশন রাখা হয়েছে। বিশাল এই শোরুমে ক্রেতাদেরও উপচেপড়া ভিড়।

রঙ বাংলাদেশের ম্যানেজার তৌসিফ আহাম্মেদ জানান, করোনায় গেল দুই বছরে ক্রেতাদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি, তবে এই বছর প্রথম রোজা থেকেই ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। তবে ইফতারির আগমুহূর্তে এই ভিড় ধীরে ধীরে কমতে থাকে। রাত ৭টার পর থেকে আবারো বাড়তে থাকে ক্রেতাদের ভিড়। রমজান মাস উপলক্ষে রাত ১২টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখা হয়। তবে এবার শপিংয়ে পণ্যের দামের ৭.৫% ভ্যাটের আওতায় আনা হয়েছে। প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে এই ভ্যাট যোগ করে পণ্যের দাম ধরা হবে।

ঈদের কথা মাথায় রেখে এবার কালেকশনে পাঞ্জাবি, কোর্তা, ধুতি, টি-শার্ট, ফুল হাতা শার্ট, ফতুয়া, গোল গলা গেঞ্জি, ভি গলা গেঞ্জি, পায়জামা, থ্রি-পিস, শাড়ি, কামিজ, জুতা, মোজা চশমাসহ সব ধরনের ফ্যাশানেবল পোশাক ডিসপ্লে করে রাখা হয়েছে।

রঙ বাংলাদেশের স্টলে এবার রাখা হয়েছে নানা রঙের ও বাহারি ডিজাইনের পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে সেখানে কর্মরত স্টাফ জেনিফা জানান, গ্রাহকদের রুচিশীল পাঞ্জাবি উপহার দিতে এবার বেশ কিছু সুন্দর পাঞ্জাবি কালেকশনে রাখা হয়েছে। ছেলেদের জন্য এবার বুনন কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পাঞ্জাবি, যা সর্বনিম্ন ১ হাজার ৬৭৫ টাকা থেকে শুরু করে ৮ হাজার ৫৪৫ টাকা দামেরও রয়েছে। এ ছাড়া সুতি শাড়ি ও কাতান শাড়ির দাম ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। মেয়েদের জন্য সর্বনিম্ন লেডিস ব্লু ফতুয়া ১ হাজার ৯০০ টাকা এবং সালোয়ার-কামিজ ৩ হাজার ৬শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

দেশীয় ব্র্যান্ড ‘দর্জিবাড়ি’ প্রতি বছরই গ্রাহকদের কথা চিন্তা করে তাদের নতুন নতুন পাঞ্জাবি নিয়ে বাজারে হাজির হয়। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি। দর্জিবাড়ির প্রতিটি পাঞ্জাবির ডিজাইনে আছে প্রিন্টের কাজ, হাতের কাজ, বুনন কাপড়ের মধ্যে আবছা ডিজাইন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন মডেলের পাঞ্জাবি।

পাঞ্জাবির দাম ডিজাইন ও গ্রাহক চাহিদা সম্পর্কে জানতে চাইলে শোরুমের হিসাবরক্ষক ইফতেখার জানান, কোম্পানিটির তৈরীকৃত প্রতিটি পাঞ্জাবির মান ও ডিজাইনে কখনো আপস করা হয় না। অন্যদিকে গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে অন্যান্য শোরুম থেকে অনেকটা কম দামে আমরা বিক্রি করি। এবারের পাঞ্জাবি কালেকশনে সেমি ফিট পাঞ্জাবি ২ হাজার ৪৯০ টাকা থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম ধার্য করা হয়েছে। এবার ঈদ কালেকশনের প্রতিটি পাঞ্জাবির ডিজাইন ওসান ব্লু, ওসান গ্রীন, গ্রে হোয়াইটসহ লাল-নীলের বিভিন্ন রঙের ব্যবহার করা হয়েছে। এতে পাঞ্জাবিগুলোর প্রতি গ্রাহকদের আকর্ষণ আরো বেড়েছে।

ক্যাটস আই বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত একটি কাপড়ের শোরুম। বিশেষ করে ছেলেদের ফরমাল শার্ট, কোর্ট, ফরমাল প্যান্টের জন্য সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এই কোম্পানিটি। কাপড়ের মান যেমন ভালো, তেমনি দামও অনেক বেশি। প্রতিটি শোরুমের মতো এই শোরুমেও ঈদকে সামনে রেখে নানা আয়োজন করা হয়েছে।

ঈদের পোশাক সম্পর্কে জানতে চাইলে ইয়াসিন সোবহান জানান, এবার ঈদ উপলক্ষে দোকানে নতুন করে মাল্টি কালারের পাঞ্জাবির সঙ্গে থাকছে এক কালারের কালো কাবলি পাঞ্জাবি। আরো পাওয়া যাবে এক কালারের ফরমাল শার্ট ও টি-শার্ট। এবারের এক কালারের কালো নীল হলুদ বেগুনি গ্রীন ও অফ হোয়াইট শার্টের প্রাইজ ২ হাজার ৮৯০ টাকা ও প্রিন্টের শার্টের দাম ৩ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

অন্যদিকে কোর্টের দাম ৭ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার এবং তার চেয়ে বেশি মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে।

টপ টেন দেশের সবচেয়ে সুপরিচিত একটি শোরুম। কাঁটাবন শান্তিনগর এলিফ্যান্ট রোড ওয়ারীসহ শহরের বিভিন্ন মার্কেটে এদের শোরুম আছে। ঈদে এবার শাড়ি, শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, ম্যান ফতুয়া, লেডিস ফতুয়া। ঈদের জন্য কোনো নতুন কালেকশন আছে কিনা তা জানতে চাইলে রাহতিম জানান, নতুন কালেকশন বলতে এবার শুধু এক্সক্লুসিভ কিছু টি-শার্ট রাখা হয়েছে, যা দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। আমাদের নিজস্ব কারখানায় তৈরি এই টি-শার্টগুলো এবার ভলো গ্রাহক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। প্রতিটি টি-শার্টের নান্দনিক ডিজাইনের কারণে এবার টি-শার্টের বিক্রিও ভালো। কাপড়ের ওপর ভিত্তি করে এর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

শোরুম ছাড়া বিভিন্ন ধরনের লোকাল মার্কেটে বিক্রি করা হচ্ছে নানা ধরনের ভারতীয় সিনেমার পোশাক। এবার পুষ্পা ছবির বেশকিছু পোশাকের ডিসপ্লে করা হয়েছে মার্কেটে। এ ছাড়া ত্রিপল আর সিনেমার বেশকিছু পোশাক দেখা গেছে ঈদের বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে। করোনার ভয়াবহতা কাটিয়ে ঈদকে ঘিরে ধীরে ধীরে জমে উঠছে আশপাশের দোকানগুলো। সবাই তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে পছন্দসই জামাকাপড় কিনতে ভিড় করছেন মার্কেটগুলোতে।

মন্তব্য

Beta version