-->

বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা চরমে, লোকসানে হাবুডুবু খাচ্ছে ফাস ফাইন্যান্স

শেয়ারদর নেমে গেছে ৬ টাকার নিচে

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা চরমে, লোকসানে হাবুডুবু খাচ্ছে ফাস ফাইন্যান্স
তথ্য মতে, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (এফএএস) থেকে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

ক্রমেই লোকসানের বোঝা ভারি হচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি ফাস ফাইন্যান্সের। বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি। যে কারণে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে পারছে না। এই অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের চরম অনাস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন খুব শিগগির ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা রয়েছে তাদের।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ঝুঁকির তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এফএএস বা ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড একটি। দীর্ঘদিন আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এই প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণের ৮৪ শতাংশের বেশি খেলাপি হয়ে পড়েছে। ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় সঞ্চিতি বা প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণও ৩০০ কোটি টাকার বেশি। এমন পরিস্থিতিতেও প্রতিষ্ঠানটিকে মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদ।

জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সচিব মো. জাহিদ মাহমুদ ভোরের আকাশকে বলেন, আমাদের কোম্পানির আগের বোর্ড পরিবর্তন হয়েছে। কীভাবে প্রতিষ্ঠানটি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে তারা এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। আশা করছি, আমরা খুব শিগগির একটি ভালো খবর দিতে পারব। কোম্পানিতে যাদের বিনিয়োগ রয়েছে তারাও ভালো খবর পাবেন।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০২০ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানটির ১ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ১ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণের ৮৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এসব ঋণের মধ্যে বেশির ভাগ আবার আদায়-অযোগ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, মোট খেলাপির মধ্যে ৪০৬ কোটি টাকাই মন্দ মানের খেলাপি, হিসাব অনুযায়ী যা মোট খেলাপি ৪৩ শতাংশ। ব্যাংকারদের মতে, মন্দ মানের খেলাপির এই টাকা আদায়ের সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।

জানা যায়, এসব ঋণের বেশির ভাগ টাকাই গেছে পিকে হালদারের পকেটে। পিকে হালদারের বেনামি ৯ কোম্পানির নামে নেওয়া হয়েছে মোট ঋণের ৫৮ শতাংশ, যার পরিমাণ ১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। এসব ঋণ আদায় হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। হালদার কাণ্ড প্রকাশের পর থেকে আমানত ফেরত নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন সাধারণ গ্রাহক। কিন্তু এখন সেসব টাকা ফেরত দেওয়ার সামর্থ্য নেই প্রতিষ্ঠানটির।

২০০৮ সালে পুঁজিবাজারে আসা কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২১০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১৪৯ কোটি ৭৭ হাজার টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারসংখ্যা ১৪ কোটি ৯০ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪। মোট শেয়ারের মধ্যে ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের হাতে, ৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক এবং ৭৭ দশমিক ২৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে।

এদিকে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা করুণ হওয়ার কারণে এর শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই বললেই চলে। যার জের ধরে প্রতিদিন লেনদেনের শুরুতে এই কোম্পানির শেয়ারের বিপরীতে অসংখ্য বিক্রেতা দেখা যায়। পক্ষান্তরে প্রতিদিনই থাকে ক্রেতার আকাল। এরই জের ধরে শেয়ারদর তালানিতে নেমে গেছে। বর্তমানে এই শেয়ার ৫ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৫০ পয়সায় কেনাবেচা হচ্ছে। গত এক বছরের বাজারচিত্র পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এই সময়ের মধ্যে শেয়ারটি সর্বনিম্ন ৪ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়। একইভাবে এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার ১১ টাকা ৭০ পয়সায় কেনাবেচা হতে দেখা যায়।

প্রতিষ্ঠানটির দ্যোক্তাদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার না থাকাসহ নানা অনিয়ম ঠেকাতে ফাস ফাইন্যান্সের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত পর্ষদের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয় সাবেক ব্যাংকার, এনসিসি ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিনকে।

পর্ষদের স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন খান, অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে থাকা সেনা কর্মকর্তা আবু সৈয়দ মোহাম্মদ আলী, ঋণমান যাচাইকারী সংস্থা ক্রেডিট রেটিং ইনফরমেশন অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (সিআরআইএসএল) উপ-প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আবদুল্লাহ আল মামুন ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের ফ্যাকাল্টি মেম্বার মো. সেলিম।

তথ্য মতে, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (এফএএস) থেকে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এছাড়া পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড থেকে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সরায় পিকে হালদার চক্র।

মন্তব্য

Beta version