কর্দ বা সুদমুক্ত ধার দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ গ্রুপকে সুযোগ দিয়েছে ফার্স্ট সিকিউরটি ইসলামী ব্যাংক। শরিয়াভিত্তিক চালিত বাণিজ্যিক ব্যাংকটির ২৪১তম বোর্ড সভায় ১৫টি প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ৯৪৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ থেকে এক হাজার ৩৮২ কোটি টাকা কর্দে স্থানান্তর অনুমোদন দেওয়া হয়। কর্দে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে যেসব অত্যাবশীয় শর্ত পালনীয় আছে তা মানা হয়নি।
ইসলামী ব্যাংকিংয়ে কোনো ঋণকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ধার বা কর্জ দেওয়া হলো কর্দ। কর্দ কালীন সময়ের জন্য কোনো সুদ বা মুনাফা কার্যকর হবে না। এবং কর্দ বা ধার দেওয়া টাকার বিপরীতে আমানত থাকতে হবে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কর্দ বা ধার দেওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো আমানত সংরক্ষণ করা হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ ধরনের কর্জ কত সময়ের জন্য দেওয়া হয়েছে তাও উল্লেখ করা হয়নি। কাকে বা কোনো প্রতিষ্ঠানকে কর্দ দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করে ব্যাংকের শরিয়া কাউন্সিল। পরবর্তীতে এ ঋণ বোর্ড অনুমোদন দেয়।
বোর্ড সভা সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ দিনের অনাদায়ী অর্থ প্রস্তাবনা গ্রাহক ও ব্যাংকের সঙ্গে আপসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে ঋণ অনাদায়ী থাকলেও বিনিয়োগকৃত ঋণের শ্রেণিমানের বিষয়ে কোনো উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ ঋণটি খেলাপি না পারফর্মিং ঋণ তা উল্লেখ করা হয়নি। এসব ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি গ্রহণ সাপেক্ষে কার্যকর হবে মর্মে বোর্ডে উল্লেখ করা হয়েছে।
চলতি বছরে ২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২৪১তম বোর্ডসভায় ১৫টি গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ৩৮২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ঋণ কর্দে স্থানান্তর করে। এর মধ্যে শিকদার গ্রুপেরই পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মেসার্স পারভীন হক সিকাদার, পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারা জামালপুর পাওয়ার প্লান্ট, মেসার্স হক এন্টারপ্রইজ, মেসার্স জয়নুল হক সিকদার, পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারা কেরানীগঞ্জ পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেড, নাসিম হক শিকদার, শিকদার রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড এবং এসকিউ ট্রের্ডাস এন্ড ডেভেলপার লিমিটেড।
তথ্য অনুযায়ী, মেসার্স পারভীন হক সিকাদারের ৭৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকার ঋণ স্থিতির মধ্যে ৫৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা কর্দে স্থানান্তর করা হয়। পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারা জামালপুর পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেডের ১৮৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকার মধ্যে ১২১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা কর্দে স্থানান্তর করা হয়। মেসার্স হক এন্টারপ্রাইজের ঋণ স্থিতি ১৫৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা; কর্দে স্থানান্তর করা হয়েছে ১৩৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। মেসার্স জয়নুল হক সিকদারের ৪১ কোটি ৬১ লাখ ঋণ স্থিতির মধ্যে কর্দে স্থানান্তর করা হয়েছে ৪১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারা কেরানীগঞ্জ পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেডের ১০৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ঋণ স্থিতির মধ্যে কর্দে স্থানান্তর করা হয়েছে ৭৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। নাসিম হক শিকদারের ৯২ কোটি ৫২ লাখ টাকার মধ্যে ৭৩ কোটি ১ লাখ টাকা কর্দে স্থানান্তর করা হয়। শিকদার রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড ৩৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ঋণ স্থিতির মধ্যে ২৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা কর্দে স্থানান্তর করা হয়। শিকদার গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এসকিউ ট্রের্ডাস এন্ড ডেভেলপার লিমিটেডের ১৫১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার ঋণে স্থিতির মধ্যে ৪১ কোটি ২৪ লাখ টাকা কর্দে স্থানান্তর করা হয়।
এ ছাড়াও মেসার্স সালাউদ্দিন খানের ৮১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, মাম ইমপেক্ট ১০৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা, মেসার্স আর এন্ড আর হোল্ডিংস ১৫০ কোটি ১৭ লাখ টাকা, দি রিভার ১৭৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, লিসা ফাতিমা হক ১১৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা, বেঙ্গল ও এন্ড এম সার্ভিসেস ৫৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং মেসার্স মমতাজুল হক ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা কর্দে স্থানান্তর করা হয়।
মন্তব্য