ঈদের আগ থেকে শুরু হওয়া ভোজ্যতেলের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে এখনো চলছে দায় চাপানোর পদ্ধতি। আর বাজার পর্যবেক্ষণে প্রতিদিনই কয়েকজন সাধারণ ব্যবসায়ীর গুদাম বা দোকানে মজুত করা তেল উদ্ধার করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতির সমাধান খুঁজতে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা করেছে ব্যবসায়ীদের প্রধান সংগঠন এফবিসিসিআই।
এতে সব পক্ষ একমত হয়েছেন যে- পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী ঠিক কত দিন ভোজ্যতেল মজুদ করতে পারবেন, তা’ সুনিদিষ্ট নীতিমালা সরকারকে করে দেওয়ার জন্য। চলতি পরিস্থিতির সমাধান না হলে এটি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক (মইনউদ্দিন, ফখরুদ্দিন) আমলে রূপ নিবে বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করা না গেলে ব্যবসায়ীরা ভোক্তা অধিদপ্তরের হয়রানি (অভিযান বা পর্যবেক্ষ) কারনে সম্মাণ রক্ষায় ব্যবসায় আগ্রহ হারাবেন বলেও দাবি করছেন তারা। এছাড়া সভায় স্থীতিশীল বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য সুনিদিষ্ট ৫টি প্রস্তাবে একমত হয়েছেন নেতারা।
এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবুর সঞ্চালনায় সভায় সংগঠনের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনসহ, ভোজ্যতেলের আমদানিকারক ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবাসয়ী এবং ঢাকা মহানগরির বিভিন্ন এলাকার দেকান মালিক সমিতির নেতার অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া দেশের ভিন্ন অঞ্চলের চেম্বারের নেতৃবৃন্দ অনলাইনে অংশগ্রহণ করেন।
সভায় দোকান মালিক সমিতির নেতারা জানান, দেশে ৫৪ লাখ খুচরা ব্যবসায়ী (নিত্যপণ্যের) রয়েছেন। প্রতিযোগিতার বাজারে গ্রাহক ধরে রাখতে এক সপ্তাহ থেকে ১৫ দিনের পণ্য মজুদ করে থাকেন। কিন্তু চলমান ভোজ্যতেলের বাজার পরিস্থিতিতে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে শুধুমাত্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করা হচ্ছে। তাদের সম্মান হানি করা হচ্ছে। এথেকে পরিত্রান হিসেবে সরকারকে নিদিষ্ট করে দিতে হবে একজন ব্যবসায়ী ঠিক কত দিন চাহিদার পণ্য মজুদ রাখতে পারবেন।
এর প্রেক্ষিতে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন- তেল নিয়ে যেসব কথা হচ্ছে, তা’ কিন্তু সব ব্যবসায়ীদের উপর এসে পড়ছে। আমি ব্যবসায়ী হিসেবে খারপ কথা শুনতে চাইনা। ভোক্তা অভিযান দিচ্ছে আর কয়েকটি দোকানে মজুদ তেল পাওয়া যাচ্ছে। সব দোকানে কিন্তু পাওয়া যাচ্ছেনা। আর এ জন্য সব ব্যবসায়ীকে খারপ কথা (অসাধু ব্যবসায়ী) শুনতে হচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে সারাবিশ্বে জ্বালানি তেলসহ অন্যন্যা পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে ৭১৫ ডলারের টন এখন ২ হাজার ডলারে পৌঁছেছে। এজন্য ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে দাম বাড়ানো হয়েছে। এনিয়ে কারো কোন কথা নেই, আপত্তি নেই। তবে হুট করে এত টাকা বেড়ে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। এজন্য বলবো, অন্তত ১৫দিনে একবার দাম সমন্বয় করা হোক। এতে দাম বাড়লে পর্যায় ক্রমে বাড়বে। আর কমলে তাও একইভাবে কমবে। মাঝখানে দাম বাড়ার সুবিধা যে ১ শতাংশ ব্যবসায়ী নিতে চায়, তারা সব ব্যবসায়ীদের সুনাম নষ্ট করছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এ কাজটি প্রশাসন করতে পারবেনা। এজন্য ব্যবসায়ী সমিতিকেই দায়িত্ব নিতে হবে। যে নেতা যে সমিতির দায়িত্বে রছেন, তাকে তার ব্যবসায়ীদের নিয়ে (অসাধু) চিহ্নিত করে সবার সম্মান রক্ষা করতে হবে।
ভোজ্যতেলের বাজার ব্যবস্থাপনায় টিসিবির দায় রয়েছে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, রমজান ও সাধারণ মানুষের জন্য সরকারি সংস্থা টিসিবি যে ২ কোটি লিটার তেল নিয়েছে, তাতো এই বাজার থেকে নিয়েছে। এতে সরবরাহ ঘাটতি হয়েছে। যা বাজারে প্রভাব ফেলছে। টিসিবি’র প্রয়োজন মেটাতে তারা নিজেরা আমদানি করা দরকার। আমার কথা হচ্ছে, অন্তত সরকারি কার্যক্রমের জন্য যেসব নিত্য পণ্য দরকার হয় তা’ যেন টিসিবি’র মাধ্যমে আমদানি করা হয়। এতে সমস্যা অনেক কমে যাবে।
ব্যবসায়ীদের ৫ দাবিসভায় আমদানিকারকদের পক্ষে টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল তাছলিম ৫টি সুনিদিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
এর মধ্যে- নিত্যপণ্যের বাজার বিশেষকরে ভোজ্যতেলের বাজারকে নিজ গতিতে চলতে দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক ও অভ্যান্তরিন বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় সমন্বয় করতে হবে; একে অপরকে দায় চাপানোর প্রবণতা থেকে সরে আসতে হবে।
এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে এবং আস্থার সংকট দেখা দিবে; টিসিবি যেসব পণ্য আমদানিকারকদের থেকে নিয়ে থাকে, তা’ এবং মোট জাতীয় চাহিদার ২০ শতাংশ নিজেরা আমদানি করে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কারখানায় পাঠালে তা’ চাহিদার ভিত্তিতে প্রক্রিয়াজাত করে দিবে; নিত্যপণ্যের মজুদের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের পর্যায় (খুচরা, পাইকারি, ডিলার ও আমদানিকারক) চিহ্নিত করে সুনিদিষ্ট দিন ঠিক করে দিতে হবে।
এফবিসিসিআইয়ের মাধ্যমে বিষয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে। না হলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ও আস্থাহীনতা তৈরি হবে; ভোজ্যতেলের চলমান পরিস্থিতি সমাধানে (ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধ) দুই দেশের সরকারের মধ্যে জি টু জি বাণিজ্য সুবিধার মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে ৪ থেকে ৫ লাখ মেট্রিক টন পাম তেল আমদানি করে, ব্যবসায়ীদের সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এসময় উপস্থিত সব ব্যবসায়ী এ প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এসব প্রস্তাবনার সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকে অনলাইনে অংশগ্রহণ করে একাত্ততা প্রকাশ করেছেন, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম। প্রস্তাবগুলো লিখিত আকারে সরকারের নিতিনির্ধারনি পর্যায়ে জমা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এসময় এফবিসিসিআই সভাপতি দাবিগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে লিখিত আকারে এফসিসিআই’তে জামা দেয়ার অনুরোধ জানান।
মন্তব্য