রাজশাহীর মনিগ্রাম বাজারের আমচাষি মো. জিল্লুর রহমান বাদামতলীতে ২০০ ক্যারেট আম নিয়ে এসেছেন। তার সঙ্গে আরো অনেক ব্যবসায়ী এক হয়ে একই গাড়িতে ঢাকায় আসেন। জিল্লুর রহমানের প্রতি ক্যারেটে ২০ কেজি করে আম আছে। প্রান্তিক পর্যায়ের এ আমচাষি ভোরের আকাশকে বলেন, ‘ঢাকায় আমের চাহিদা অনেক, ট্রাক থেকে আম আড়তে নেবার পর ঘণ্টা খানেকের মধ্যে প্রায় সব আম বিক্রি হয়ে গেছে। এখন আর অল্প কিছু আম আছে। তবে এবার আম খড়ার কারণে অনেকটা ঝড়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত দাম উঠবে কিনা বলা মুশকিল। আম বিক্রি করে বাদামতলীর আড়তদারদের ৫ শতাংশ টাকা দেওয়ার কথা জানান তিনি।’
বৈশাখ শেষ। পহেলা জ্যৈষ্ঠ মানেই মধুমাস শুরু। বাজারে ফলের সমাহার। ইতোমধ্যে আম আসতে শুরু করেছে। বছরের প্রথম আমের চালান ঢাকায় এসেছে ২৫ বৈশাখ থেকেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার তারা খামারিদের কাছ থেকে কোনো অপরিপক্ব আম নেবেনও না এবং বিক্রিও করবে না। অর্থাৎ ভেজালের ভিড়ে এবার রাজধানীর মানুষের ফরমালিনমুক্ত ভালো আম খাওয়ার সূবর্ণ সুযোগ।
এদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসন জানায়, নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ যাতে অপোক্ত আম বাজারজাত করতে না পারে, সে বিষয়ে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নজর রাখবে। আম কৃষি ক্যালেন্ডারের পদ্ধতি অনুযায়ী সাতক্ষীরায়, নওগাঁ, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম গাছ থেকে পাড়া গোবিন্দভোগ এবং গোপালভোগ জাতের আম এখন প্রবেশ করছে বাজারে। ঢাকার বাদামতলী ফলের আড়তে বিভিন্ন জেলার বাগানিরা ‘গোবিন্দভোগ’ আম প্রতি কেজি পাইকারি বিক্রি করছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আকারভেদে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর ‘গোপালভোগ’ আম বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়।
মোহাম্মদ জনি ভাষানটেকের ফল ব্যবসায়ী। কাস্টমারের আমের প্রতি চাহিদা বেশি থাকায় বাদামতলী এসেছেন আম কিনতে। বাদামতলী থেকে আম কিনে কত করে বিক্রি করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ‘সাতক্ষীরা থেকে আসা গোবিন্দভোগ প্রতি কেজি ৫০ টাকা ৪ হাজার টাকার ২ মণ আম কিনলাম। এটাকে এলাকায় নিয়ে খুব সহযেই ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করতে পারব।’ তবে দুই সপ্তাহ পর বাগান থেকে পাড়ার নির্দেশ দেওয়া হিমসাগর আম এখনি বাজারে দেখা যাচ্ছে।
বিক্রেতারা এ হিমসাগর আম পাইকারি বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১০৫ টাকায়। যদিও হিমসাগর আমের বেশিরভাগই এখনো অপরিপক্ব। এ আম পুরোপুরি পাকতে আরো এক থেকে দুই সপ্তাহ লাগতে পারে বলে জানান রাজশাহী এবং নওগাঁর বাগানিরা। হাঁড়িভাঙা, আম্রপালি, ল্যাংড়া আম বাজারে আসতে আরো সময় লাগবে এক মাসের মতো। ব্যবসায়ীরা জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে পাইকারি দরে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙা আম পাওয়া যাবে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আম্রপালি পাওয়া যাবে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। ল্যাংড়া পাওয়া যাবে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।
সর্বশেষ বাজারে আসবে ফজলি আম, যা বাজারে আসতে আরো এক থেকে দেড় মাসের মতো সময় লাগতে পারে। আবহাওয়া, ফলনসহ সবকিছু ঠিক থাকলে ফজলি আমের সম্ভাব্য মূল্য হতে পারে প্রতি কেজি হতে পারে ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। বাগান থেকে কার্টন করা পর্যন্ত কোথাও কোনো অনিয়ম যাতে না হয়, তার জন্য রয়েছে কৃষি বিভাগ, জেলা প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকে বলে জানান ঢাকা মহানগর ফল আমদানি ও রপ্তানি কারক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল করিম।
তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আম যখনি পরিপূর্ণ পরিপক্ব হবে, তখনই যেন বিক্রির উদ্দেশ্যে আনা হয়। তাহলেই ক্রেতার চাহিদা বাড়বে। যদি সময়ের আগেই আম পেড়ে বিক্রি করা হয়, তাহলে ব্যাবসায়ীরা তরমুজের মতো আমেও ক্রেতা হারাবে। আর সময়ের আগে যদি বাজারে কেউ আম আনে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে বাদামতলীর এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের দেশে ক্রেতাদের আকর্ষণ থাকে চকচক করা জিনিসে। ক্রেতারা শুধু চাকচিক্য না দেখে ভালো জিনিস যেন দেখে শুনে কিনে। কারণ চকচক করলেই সোনা হয় না।’
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ১৩ মে থেকে শুরু হয়ে মৌসুম চলবে ২০ আগস্ট পর্যন্ত। কৃষি অফিস ও প্রশাসনের পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, ক্ষীরশাপাতি, গোলাপখাস ও বৈশাখীসহ অন্যান্য স্থানীয় জাতের আম ৫ মে থেকে পাড়া শুরু হয়ে গেছে। এছাড়া ১৬ মে হিমসাগর, ২৪ মে ন্যাংড়া ও ১ জুন আম্রপালি আম ভেঙে বাজারে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়। গত বছর আমের উৎপাদন ভালো হলেও এ বছর উৎপাদন অতটা ভালো হবে না বলে মনে করছেন বাগানিরা। বাগানিরা বলছেন, এবার প্রয় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ আম নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর মধ্যে কিছুদিন আগে খড়ার কারণে ২৫ শতাংশ আম ঝরে গেছে। আর ২০ শতাংশ আম পরিবহণের সময় নষ্ট হতে পারে।
মন্তব্য