-->
শিরোনাম

জলের দেশে পানির দাম!

# সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ # বোতলজাত পানির গায়েও আগুন

ইফ্ফাত শরীফ
জলের দেশে পানির দাম!
খিলগাঁও বাজারে নোয়াখালী স্টোর থেকেই পানি কিনছেন দোকানিরা

নাসিফ খান বেশ কিছুদিন আগে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কোমরে ব্যথা পান। রাজধানীর একটি থেরাপি সেন্টারে গত ২৫ মে ভর্তি হন। ডাক্তার তাকে একটানা ২৮ দিন থেরাপি দেবার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন।

বাসা অনেক দূরে তাই হাসপাতাল থেকে খাবার-দাবার এমনকি পানি পর্যন্ত কিনে খেতে হচ্ছে। বর্তমানে বাজার পরিস্থিতির অস্থিরতার কারণে সব জিনিসপত্র অতিরিক্ত দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।

নাসিফের অভিযোগ হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় প্রথম এক সপ্তাহে প্রতিদিন ৫ লিটার পানির বোতল ৭৫ টাকায় কিনে খেতেন। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন শুনতে পান সব জায়গায় ৫ লিটারের পানির দাম বেড়ে ৮০ টাকা হয়েছে।

নিরুপায় হয়ে বেশি দাম দিয়েই কিনতে হচ্ছে পানি। নাসিফ আক্ষেপ করে ভোরের আকাশকে বলেন, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাচ্ছে। পানির দেশে যদি অতিরিক্ত দাম দিয়ে পানি কিনে খেতে হয় তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।

বাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানির দাম বাড়ার সপ্তাহ খানেক আগেও বাজারে বোতলজাত পানির যথেষ্ট সরবরাহ ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এই সরবরাহ কমে যায়। পানির বিভিন্ন কোম্পানির ডিলাররা বাজারে সাপ্লাই কমিয়ে দেয়।

সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেটের মতো বড় বাজারে পানির কোম্পানিগুলো নোয়াখালী স্টোর নামের একটি মাত্র দোকানে পানি সাপ্লাই দিচ্ছে। পুরো বাজারে আর কোথাও বোতলজাত পানি দেয়া হচ্ছে না। অন্যান্য দোকানিরা এই নোয়াখালী স্টোর থেকেই পানি কিনে বিক্রি করছেন।

পানির দাম হঠাৎ কেন বাড়ল এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী স্টোরের মালিক ফখরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় ভোরের আকাশের। তিনি জানান, বোতলজাত পানির চাহিদা অনেক।

দাম বাড়ার পরও কাস্টমারের কাছে এর চাহিদা বিন্দুমাত্র কমেনি। বরং আগের থেকে বিক্রি বেড়েছে। মাঝখানে কিছুদিন আমরা সাপ্লাই পাইনি। তারপরও এসবের দাম না বাড়ানোই উচিত। বাজারে এমন অনেক পণ্য আছে যেগুলোর দাম দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

সপ্তাহ খানেক আগেও পারটেক্স বেভারেজ লিমিটেডের ‘মাম’ ব্র্যান্ডের এক লিটার পানির দাম ছিল ২০ টাকা। বর্তমানে পাঁচ টাকা বেড়ে হয়েছে ২৫ টাকা। দুই লিটার ৩০ টাকার বদলে হয়েছে ৩৫ টাকা।আর ৫ লিটারের বড় বোতল ৭৫ টাকার বদলে হয়েছে ৮০ টাকা। তবে তাদের ৩৭৫ মিলি এবং ৫০০ মিলি বোতলের দাম বাড়ানো হয়নি। এটি আগের দাম ১০ এবং ১৫ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে।

একইভাবে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ব্র্যান্ডের পানিরও দাম বাড়ানো হয়েছে। ফ্রেশ ব্র্যান্ডেরও ১ লিটার ২০ টাকা থেকে হয়েছে ২৫ টাকা, ২ লিটার ৩০ টাকা থেকে হয়েছে ৩৫ টাকা এবং ৫ লিটার ৭৫ টাকার বদলে হয়েছে ৮০ টাকা।

এ ছাড়া বাড়ানো হয়েছে একুয়াফিনা, স্পা, রিভেরা, জীবন, প্রাণ ড্রিঙ্কিং ওয়াটার, কিনলেসহ বাজারের বড় বড় সব ব্র্যান্ডের বোতলজাত পানির দাম। নাসিফের মতো এমন অনেক লোক আছে যাদের প্রয়োজনে অনেক কিছুই বাহির থেকে কিনে খেতে হচ্ছে।

মানুষের জীবনধারণের জন্য যেসব পণ্যের দরকার তার তালিকা সাধারণত বেশ লম্বাই হয়। তিন বেলা খাবার, পরনের পোশাক থেকে শুরু করে অনেক পণ্যই প্রতিদিন দরকার। দোকানে এসব পণ্য কিনতে গেলেই দেখা যাচ্ছে দাম বেড়ে গেছে।

কথায় আছে কোনো পণ্য সস্তা হয়ে গেলে উদাহরণ টেনে বলা হয়, ‘একেবারে পানির দামে বিক্রি করে দিলাম।’ সেই পানিও এখন আর ‘পানির দামে’ মিলছে না। শেষ পর্যন্ত নিত্যপণ্যের বাজারের এই আগুন পানির দামেও লেগেছে। বাজারে বোতলজাত এবং জারে বিক্রি হওয়া সব ব্র্যান্ডের পানির দাম সপ্তাখানেকের ব্যবধানে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মতো।

পানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রভাব খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ বিশেষ করে, রিকশাচালক, কুলি-মজুরসহ বিভিন্ন কাজে যারা ঘরের বাইরে থাকেন তাদের উপর পড়েছে। ফলে এ ধরনের মানুষের কষ্ট আরো বেড়ে গেছে।

এদিকে বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, পণ্যমূল্য নিয়ে মানুষের কষ্টের সীমা নেই। বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। এর মধ্যে যদি পানিরও দাম বাড়ানো হয় তাহলে মানুষ কোথায় যাবে, কী করবে। পানির দাম বাড়ানো মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। পানি যেহেতু আমদানিনির্ভর পণ্য না তাহলে পানির দাম কেন বাড়বে!

মন্তব্য

Beta version