‘একবার বাধা এসেছে, বাধা অতিক্রম করেছি। সবসময় মনে রাখতে হবে আর যেন বাধা কেউ না দিতে পারে, সেভাবে এগিয়ে যেতে হবে।’ আট বছর আগে ২০১৪ সালে ৬ জুলাই যোগাযোগ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘোষণা দিয়েছিলেন। আগামী ২৫ জুন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হওয়া স্বপ্নের সেই ‘পদ্মা সেতু’ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে। দুই প্রান্তের মানুষ সড়কপথে যোগাযোগ শুরু করবে।
প্রধামন্ত্রী পদ্মা সেতু নির্মাণের পাশাপাশি দুই পারে অবহেলিত গ্রামীণ জনপদকে দক্ষিণ চীন সাগর তীরবর্তী ‘হংকং’ শহরের মতো পরিকল্পিত সুসজ্জিত নগরীর আদলে গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে মুন্সিগঞ্জ ও মাদারীপুর দুই পারে অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ নতুন দ্বারও উন্মোচন করছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আধুনিক গ্রাম, বিদ্যুৎকেন্দ্র, নৌ-বন্দর, অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল, নৌ-যোগাযোগসহ বহুমুখী যোগাযোগব্যবস্থা ব্যাপক কর্মসংস্থানের হাতছানি দিচ্ছে।
এ ছাড়া ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরের পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে পর্যটনকেন্দ্র, বিশ্বমানের অত্যাধুনিক হাসপাতাল, নির্মাণ করা হবে জাদুঘর, পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চল, হিমাগার, হোটেল-রেস্তোরাঁ। এসব কারণে অঞ্চলভেদে ২০ থেকে ৩০ গুণ বেড়েছে জমির দাম। আবাসন ব্যবসায়ীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে জমি কেনার জন্য।
এদিকে যতই সময় যাচ্ছে, ততই উদ্বোধনের ক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। দেশজুড়ে সর্বস্তরে চলছে এক আনন্দঘন উত্তেজনা। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ২১টি জেলার জনগণের আনন্দের আর সীমা নেই। পথে-ঘাটে, অফিস-আদালতে, পাড়ায়-মহল্লায়, ঘরে-বাহিরে সবখানে চলছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আলোচনা।
মাদারীপুরের একটি বেসরকারি কলেজ শিক্ষিকা ইসমত আরা (রিয়া) ভোরের আকাশকে জানান, স্বামী ঢাকায় চাকরি করেন, যেজন্য সপ্তাহে বা মাসে ঢাকায় আসতে হয়। ফেরি চলাচলের কারণে ইচ্ছা থাকলেও আসা হয় না। আবার ঢাকা থেকে জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি যেতে হলে অনেক হিসাব-নিকাশ করতে হয়। সেতু চালু হলে সেইসব আর করতে হবে না। দিনে এসে দিনেই বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন বলে তিনি জানান। এমন অভিমত লক্ষ, কোটি মানুষের।
পদ্মা সেতু ঘিরে আবাসন ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেমন আলেচনা চলছে, এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সংগঠনটির মুখপাত্র, জনসংযোগ কর্মকর্তা রশিদ বাবু ভোরের আকাশকে জানান- এটি ইতিবাচক দিক। দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে আবাসন ভূমির পরিমাণ অনেক কম। পদ্মার দুই পারে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করেছেন। এখন জমি কেনা-বেচার পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে অনেক দাম বেড়ে গেছে। পরবর্তীতে যোগাযোগ ব্যবস্থাও আবাসন চাহিদার বিষয় বিবেচনায় ফ্লাট ব্যবসায় নামবে এ খাতের ব্যবসায়ীরা। তবে- নির্মাণসামগ্রী এবং জমির উচ্চ মূল্যের কারণে প্লট বা ফ্লাটের দাম কমার আশঙ্কা দেখছেন না তিনি।
মন্তব্য