-->
শিরোনাম

সরকারি ঘোষণার প্রতিফলন নেই বাজারে

মো. রেজাউর রহিম
সরকারি ঘোষণার প্রতিফলন নেই বাজারে

ঢাকা: সরকার নির্ধারণ করে দেয়ার পরও বাজারে কমছে না ভোজ্যতেল ও চিনির দাম। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, একবার বাড়ালে আর পণ্যের দাম কমাতে চান না ব্যবসায়ীরা। অথচ দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ উল্টো। আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধির ঘোষণা আসার পরপরই পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারের ঘোষণার অনেক পরে সেই দামে পণ্য দেশে আসে। সেই সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা আগের কম মূল্যে কেনা পণ্য ক্রেতাদের কাছে বাড়তি দামে বিক্রি করে অতিরিক্ত মুনাফা করেন- এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এদিকে নতুন নির্ধারিত দাম কার্যকরে শিগগিরই বাজারে অভিযান শুরু করা হবে। এছাড়া শিগগিরই অন্য কয়েকটি পণ্যের দাম নির্ধারণের কাজ চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

 

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার নতুন দাম নির্ধারণ করলেও এখনো আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে পণ্য দুটি। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সেই পুরোনো অজুুহাত- বাড়তি দামে কেনা পণ্য এবং সরবরাহ সংকট। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল থেকে বেশি দামে কিনছেন তারা। অন্যদিকে মিলারদের দাবি, সরকারের নির্ধারিত দামেই তারা পণ্য বিক্রি করছেন। মৌলভীবাজারের এক পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী জানান, দাম না কমার জন্য দায়ী মিলগুলো।

এদিকে মিলগেটে বাড়তি দামের বিষয় অস্বীকার করে সিটি গ্রুপের এক পরিচালক বলেন, আমরা বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করছি না। কী দামে প্রতিদিন তেল ও চিনি বিক্রি হচ্ছে, সেটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকারে তথ্য দেয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। উল্লেখ্য, বাজারে মূল্য স্বাভাবিক রাখতে গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাম তেল ও চিনি দাম নির্ধারণ করে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়; যা গত রোববার থেকে কার্যকরের কথা জানানো হয়।

 

সরকার নির্ধারিত নতুন মূল্য অনুযায়ী, পাম সুপার তেল প্রতি লিটার খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৩৩ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা, যা দাম নির্ধারণের আগে ছিল ১৪৫ টাকা। আর মিলগেটে পাম তেল প্রতি লিটার ১২৮ টাকা এবং পরিবেশক পর্যায়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া পরিশোধিত খোলা চিনি প্রতি কেজি ৮৪ এবং প্যাকেট চিনি প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৮৯ টাকায় নির্ধারণ করা হয়। অথচ বাজারে এখনো আগের দামেই খোলা চিনি ৯০ এবং প্যাকেট চিনি ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী মিলগেটে খোলা চিনি প্রতি কেজি ৭৯ এবং পরিবেশক পর্যায়ে ৮১ টাকা নির্ধারণ করা হয় গত বৃহস্পতিবার। একইভাবে প্যাকেটজাত চিনি মিলগেটে ৮২ এবং পরিবেশক পর্যায়ে ৮৪ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত নতুন দর অনুযায়ী, খুচরা পর্যায়ে চিনির দাম কেজিতে ৬ এবং পাম তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা কমানো হয়।

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আমদানিনির্ভির পণ্য হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে বিভিন্ন সময় তেল ও চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়। আর সর্বশেষ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ভোক্তাদের স্বার্থে চিনি ও পাম তেলের দাম কমিয়ে ঠিক করে দেয়া হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, খুব শিগগির অন্য কয়েকটি পণ্যের দামও নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে। দাম বেঁধে দেয়ার পরও ব্যাবসায়ীরা পণ্যের দাম কমাচ্ছেন না, বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকরে শিগগিরই বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হবে এবং বিভিন্ন বাজারে জোরালো অভিযান শুরু করা হবে। এদিকে চাল, ডাল, লবণসহ অত্যাবশ্যকীয় ৯টি পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া হবে বলে চলতি মাসের শুরু থেকেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল। তবে কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা এবং আইনগত কিছু জটিলতার কারণে অন্য পণ্যগুলোর দাম নির্ধারণের বিষয়টা কিছুটা দেরি হচ্ছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

 

তিনি বলেন, আমদানির পাশাপাশি দেশে উৎপাদন হয় এমন পণ্যের দাম নির্ধারণে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এসব পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হবে। আর দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে দেশের উৎপাদক ও কৃষকের স্বার্থের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণে শুধু আমদানির ওপর নির্ভরশীল না থেকে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ওপরও জোর দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন পণ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

উল্লেখ্য, দেশের বাজারে নিত্যপণ্য মূল্যের লাগামছাড়া দাম বৃদ্ধিতে অসহায় অবস্থায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং দেশে জালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে প্রায় সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগতায় লিপ্ত হয়েছেন। কে কার চেয়ে বেশি দামে পণ্য বেচবেন-দেশের ব্যবসায়ীরা এমন প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ; বিশেষ করে দরিদ্র ও নিম্নবিত্তের মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগে শুধু ভোজ্যতেল ও চিনির মূল্য নির্ধারণ করত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অভ্যন্তরীণ বাজারে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে দেশের বাজারে অনিয়ন্ত্রিতভাবে এ পণ্যগুলোর দাম অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম নিয়ন্ত্রণ ও নির্ধারণের কাজ করছে সরকার।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version