-->

নতুন বিনিয়োগকারী টানতে পারছে না পুঁজিবাজার

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
নতুন বিনিয়োগকারী টানতে পারছে না পুঁজিবাজার

ঢাকা: পুঁজিবাজারের প্রতি নতুন বিনিয়োগকারীর তেমন সাড়া নেই। আগে বাজারে আইপিওর প্রস্তাব থাকলে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার ধুম পড়ে যেত। আসতেন নতুন বিনিয়োগকারী। কিন্তু এখন তেমন সাড়া নেই। বিনিয়োগকারীর ক্রমেই বাজারবিমুখ হচ্ছেন। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে পুঁজিবাজারে নতুন মুখ যুক্ত হয়েছে মাত্র সাড়ে ৫ হাজার। অথচ এ সময়ে বাজারে দুটি কোম্পানির আইপিরও আবেদন চলছিল।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো না থাকায় এ অবস্থা হয়েছে। এ কারণে নতুন বিনিয়োগকারী টানতে পারছে না পুঁজিবাজার। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য মতে, সেপ্টেম্বরে বিনিয়োগকারীরা নতুন বিও খুলেছেন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। আগস্টের শেষে হিসাবধারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ৩৪১। সেপ্টেম্বর শেষে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৮১৮। অথাৎ এ সময়ে বিও হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ৫ হাজার ৪৬৭৮টি। অথচ বছরের শুরুতে প্রতি মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার নতুন বিনিয়োগকারী বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। বর্তমানে যে বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে মধ্যে ১৩ লাখ ২৮ হাজার ২৮২ পুরুষ এবং ৪ লাখ ৫২ হাজার ৪৪২টি রয়েছে নারীর বিও অ্যাকাউন্ট।

 

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাজারের সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর ক্রয়যোগ্য অবস্থায় থাকার পরও ফিরছে না স্থিতিশীলতা। বেশিরভাগ দিনই কমছে লেনদেন হওয়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট-দর। পাশাপাশি ভাটার টান দেখা যাচ্ছে বাজার মূলধনেও। আইপিওতে তেমন সুবিধা করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে তারা বাজারবিমুখ হচ্ছেন। তারা বলেন, এখন বাজারের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর তলানিতে রয়েছে। অর্থাৎ ক্রয়যোগ্য অবস্থায় রয়েছে। এ সময়কে বলা হয় পুঁজিবাজারের বিনিয়োগযোগ্য সময়। বিষয়টি মাথায় রেখেই এখন বাজারের সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত।

 

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, অন্য সময়ের চেয়ে পুঁজিবাজারে এখন বেশিরভাগ শেয়ারের দর কম। এ অবস্থায় দেখেশুনে এবং ধৈর্যধারণ করে বিনিয়োগ করলে এখান থেকে ভালো ফল প্রত্যাশা করা যায়। যারা এখন বাজারের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে তারা এ সুবিধা পেতে পারেন। এ ছাড়া বাজারে নিয়মিত আইপিওর মাধ্যামে নতুন কোম্পানি আসছে এ কারণেও নতুন বিনিয়োগকারী আসার কথা। কিন্তু কেন নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন না বিষয়টি বোধগম্য নয়। একই বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বাজারের অবস্থা আগামীতে আরো ভালো হওয়ার প্রত্যাশা করছি। সমস্যা হচ্ছে বাজার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল থাকছে না। সে কারণে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পান না। তবে নিশ্চয় এ অবস্থার পরিবর্তন হবে।

 

এদিকে পুঁজিবাজারে বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের যে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব রয়েছে, তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশে কোনো শেয়ার নেই। অর্থাৎ এসব বিও হিসাব শেয়ারশূন্য হয়েছে। এর মধ্যে গত এক বছরেই শেয়ার শূন্য হয়ে পড়েছে প্রায় ১ লাখের বেশি বিও হিসাব। গত বছরের শেষদিকে ধারাবাহিক সূচক পতনের কারণে অনেকে বিও অ্যাকাউন্ট খুলে ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেননি। আবার পরিস্থিতি নাজুক দেখে অনেকে শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে গেছেন। যে কারণে অনেক বিও শূন্য হয়ে পড়েছে। তবে এ বছর পরিস্থিতি বদলে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, আমাদের প্রত্যাশা পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো হবে। বাজারে তালিকাভুক্ত হবে ভালো ভালো কোম্পানি।

 

সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজারে সবসময়ই শেয়ার শূন্য বিও অ্যাকাউন্ট থাকে। তবে বাজার পরিস্থিতি খারাপ হলে এর সংখ্যা বাড়ে। যখন বাজার ভালো থাকে, তখন অনেকেই সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করার জন্য বিও হিসাব খোলেন। পরবর্তীতে পরিস্থিতি খারাপ হলে তারা আর বিনিয়োগ করেন না। ফলে শেয়ার শূন্য থাকা বিও হিসাবের সংখা বাড়ে। এতে ভয়ের কিছু নেই। নিয়মানুযায়ী, জুনে বিও ফি পরিশোধ না করলে, সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে সেসব হিসাব বন্ধ হয় না।

 

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা-২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুনে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময় বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version