-->

পাম তেলের কমলেও বেড়েছে চিনির দাম

মো. রেজাউর রহিম
পাম তেলের কমলেও বেড়েছে চিনির দাম

ঢাকা: চিনি ও পাম তেলের দাম ফের পুনর্নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এখন থেকে পাম সুপার তেল প্রতি লিটার ১২৫ টাকা দরে বিক্রি হবে। আগে দাম ছিল ১৩৩ টাকা। অর্থাৎ পাম তেলের দাম কমেছে লিটারপ্রতি আট টাকা। অন্যদিকে পাম তেলের দাম কমানো হলেও খোলা ও প্যাকটজাত চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে। নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী খোলা চিনি প্রতি কেজি ৯০ টাকা, আগে ছিল যা ৮৪ টাকা। আর প্যাকেট চিনি ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হবে, আগে ছিল ৮৯ টাকা। আজ শুক্রবার থেকে এ দাম কার্যকর হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। শুধুমাত্র দাম নির্ধারণই যথেষ্ট নয় এজন্য সরকারি মনিটরিং জোরদার করা জরুরি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

 

গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভা শেষে সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের এ কথা জানান। বিকেলে মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

 

তিনি বলেন, চিনি ও পাম অয়েলের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশন এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, চিনি ও পাম অয়েল এ দুটি পণ্যের দাম পুনর্নির্ধাারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন দাম অনুযায়ী, চিনির দাম ৬ টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনি প্রতি কেজি ৯০ টাকা, আর প্যাকেটজাত চিনি ৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাম অয়েল সুপার প্রতি লিটারে ৮ টাকা কমিয়ে ১২৫ টাকা করা হয়েছে, যা আগে ১৩৩ টাকা লিটার বিক্রি হতো।

 

চিনির দাম বাড়ানোর বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন- কারণ আমরা আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ডলারে দাম ধরতাম না। বর্তমানে ১০৫ টাকা দরে ডলার ধরলে চিনির দাম বেশি হয়। সে জন্য কেজিতে ৬ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর সয়াবিন ইতোমধ্যেই কমিয়ে দেয়া হয়েছে লিটারে ১৪ টাকা। তিনি বলেন, গতকালের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, বেশি দামের যে তেল বাজারে আছে, সেটা আগের দামে বিক্রি করতে হবে। এখন যে তেল বাজারে যাবে, সেটা লিটারে ১৪ টাকা কম দামে বিক্রি হবে।

 

দাম পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অবা-৫ শাখার যুগ্ম নিয়ন্ত্রক শামীমা আকতার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অপরিশোধিত পাম তেল ও আরবিডি পাম অলিন এবং অপরিশোধিত চিনির আন্তর্জাতিক বাজার দর এবং স্থানীয় উৎপাদন ব্যয় পর্যালোচনান্তে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশক্রমে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে পাম সুপার খোলা, পরিশোধিত চিনি খোলা এবং পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির দাম সমন্বয় করা হলো। সমন্বয়ের মাধ্যমে পাম সুপার তেল মিলগেটে প্রতি লিটার ১২০ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১২২ টাকা এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর পরিশোধিত খোলা চিনি প্রতি কেজি মিলগেটে ৮৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৮৭ টাকা এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি মিলগেটে ৯০ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৯২ টাকা এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

এদিকে, সরকারিভাবে ভোজ্য তেলের দাম গত সপ্তাহে লিটারে ১৪ টাকা কমানোর পরও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দাম কমেনি। আর চিনির দামও বাড়তি নিচ্ছে বিক্রেতারা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দাবি, আগের বেশি দামে কেনা তেল শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না, আর চিনির পাাইকারি দামও বেশি বলে দাবি তাদের

 

গতকাল রাজধানীর কল্যাণপুর নতুন বাজার, মিরপুর ১ নম্বর বাজার, শেওড়াপাড়া, হাতিরঝিল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। আর ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৯৪০ টাকা দরে।

 

কল্যাণপুর নতুন বাজারের দোকানদার দিদার হোসেন বলেন, বাজারে এখনো বেশি দামে কেনা তেল মজুত রয়েছে। বাড়তি দামে কেনা তেল শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি করলে আমাদের লোকসান হবে। আর চিনির পাইকারি বাজারে দাম বেশি বলে জানান তিনি। খুচরা দোকানিরা জানান, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেনা বাড়তি দামের তেল ও চিনি বিক্রি হতে সময় লাগবে আরো এক সপ্তাহ। সে হিসেবে সরকার নির্ধারিত নতুন দামে তেল বিক্রিতেও সময় লাগবে।

 

কল্যাণপুর এলাকার বাসিন্দা আজহার আলি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দোকানে সরকার নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল ও চিনি বিক্রি হচ্ছে না। তিনি বলেন, দোকানিদের অজুহাতের শেষ নেই, তারা একটা না একটা অজুহাত তৈরি রাখে। দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসা মাত্র বিক্রেতারা দাম বাড়ালেও দাম কমানোর ঘোষণা আসলে তারা আর দাম কমাতে চায়না, বলে অভিযোগ করেন তিনি।

 

উল্লেখ্য, এর আগে, গত সোমবার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৭ টাকা কমানো হয়। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ১৭৮ টাকা, যা এর আগে ছিল ১৯২ টাকা। আর তখন খোলা সয়াবিন তেলের নতুন দাম লিটারপ্রতি ১৫৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এ দাম নির্ধারণ করেছিল। বিশ্লেষকদের মতে, নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে বাজারে নিয়মিত মটিরিং জরুরি।

 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানান, চিনি ও পাম সুপারের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগে, গত ২২ সেপ্টেম্বর নিত্যপণ্যের মধ্যে ৯টির দাম নির্ধারণ করে দেয়ার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, তার মধ্যে প্রথম চিনি ও পাম তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হলো।

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পাম তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা কমানোর সুযোগ আছে বলে সুপারিশ করে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন। চিনির দামো কমিয়ে আনার পরামর্শ দেয় এ প্রতিষ্ঠানটি। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দামে তেমন প্রভাব পড়েনি। কিন্তু কমেছে পাম তেলের দাম। তাই এ তেলের দাম স্থানীয় বাজারে কমানোর সুযোগ আছে। তবে সয়াবিন তেল যে দামে বিক্রি হচ্ছে তা যৌক্তিক। পাম তেলের দাম বর্তমানে ১৪৫ টাকা । এ তেলের দাম লিটারে অন্তত ১২ টাকা কমিয়ে ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করা যেতে পারে।

 

চিনির দামের বিষয়ে ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, প্রতি কেজি খোলা চিনি ভোক্তাপর্যায়ে খুচরা মূল্য ৮৪ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনির কেজিপ্রতি দাম হওয়া উচিত ৮৮ টাকা। এদিকে, গত ৩০ আগস্ট বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল ৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি তখন বলেন, ভোজ্যতেল, চিনি, রড, সিমেন্ট, চাল, আটা, ময়দা, মসুর ডাল, ডিমের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেয়া হবে। সেই অনুযায়ী তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণও শুরু করে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন। তবে দাম নির্ধারণ নিয়ে বিভিন্ন জটিলতা থাকায় এখনো ৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে পারেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে রড ও সিমেন্টের দাম নির্ধারণে তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ায় দাম নির্ধারণে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানা গেছে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version