ঢাকা: দীর্ঘদিন থেকে পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো নেই। বেশিরভাগ দিনই নিম্নমুখী থাকছে পুঁজিবাজারের সূচক। কমেছে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। কিন্তু এ পরিস্থিতির মধ্যেও লেনদেন সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি নিয়মিতই লেনদনে হচ্ছে হাজার কোটি টাকার বেশি। এতে করে ব্যবসায় ফিরছে ব্রোকারেজ হাউস। পূর্বে হাউস মালিকরা গচ্চা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করলেও এখন সেই পরিস্থিতি কেটে কেটে উঠেছে। তবে এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হলে বাজার ভালো থাকার পাশাপাশি লেনদেন বৃদ্ধির বিকল্প নেই বলে জানান তারা।
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে লেনদেন ৩ হাজার টাকা অতিক্রম করে। ধসের পর তা ধীরে ধীরে ৫০০ কোটি টাকার নিচে চলে আসে, যা একসময় ৩০০ কোটির ঘরে চলে যায়। এতে ধীরে ধীরে নাজুক হতে থাকে ব্রোকারেজ হাউস মালিকদের ব্যবসা। পরবর্তীতে করোনাকালীন পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। তখন লেনদেন ৪০ কোটি টাকার নিচে নেমে আসে। এতে বিপাকে পড়েন হাউস মালিকরা। কারণ হাউস মালিকদের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে শেয়ার এবং ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় থেকে পাওয়া কমিশন। যে কারণে লেনদেন কমে গেলে কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয় অনেক মালিক। খরচ কমাতে হাউসও তাদের অফিস স্পেস ছোট করে ফেলে। করোনার সময় আশঙ্কাজনক হারে লেনদেন কমে গেলে কিছু মালিক ব্যবসার আকার ছোট করে ফেলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশিরভাগ মালিক অন্য খাত থেকে অর্থ নিয়ে আসেন। এ পরিস্থিতিতে ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবসা হুমকির মুখে পড়ে। পওর ৬৬ দিন পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকে। এরপর চালু হওয়ার পর থেকে লেনদেনে বাড়তে থাকে। ফলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবসা। বর্তমানে গড় লেনদেন হচ্ছে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এতে হাউসগুলোর আয় বেড়েছে। লেনদেন আরো বাড়লে তাদের অবস্থা আরো ভালো হবে মন্তব্য করেন তারা।
একই প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়লে তা হাউস মালিকসহ সবার জন্যই ভালো। কারণ তাদের আয় আসে বিনিয়োগকারীদের লেনদেন থেকে। পক্ষান্তরে লেনদেন কমে গেলে হাউস মালিকদের চিন্তিত হওয়ার কারণ রয়েছে। আমার জানা মতে, এখনো অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর অনেক কম। অর্থাৎ বাজার বিনিয়োগযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থা থাকলে সার্বিকভাবে বাজার ভালো হবে। যার ফল সবাই ভোগ করবেন। এখন যদি বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসেন, তাহলে তারা কম দরে শেয়ার কিনতে পারবেন। এতে তাদের ভালো ফল পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। পক্ষান্তরে হাউস মালিকরা লাভবান হবেন।
একই প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, আমরা যারা ব্রোকারেজ হাউস চালায়, লেনদেন কমে গেলে তাদের অবস্থা খারাপ হয়। কারণ এ সময়ে তাদের আয় কমে যায়। কিন্তু আয় কমলেও খরচ কমে না। ফলে ব্যবসা চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তখন আমাদের অন্য খাত থেকে এনে ব্যবসায় চালাতে হয়। এ সময় সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েন যেসব মালিকদের ব্রোকারেজ হাউস ছাড়া অন্য কোনো ব্যবসা নেই। তিনি বলেন, এখন বাজারের যে সাইজ, সে হিসাবে গড় লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি হওয়া উচিত।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ডিএসইতে ইতিহাসের রেকর্ড লেনদেন হয়, যার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। ওই সময়ে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর আয় ছিল চোখে পড়ার মতো। বড় বড় কিছু কিছু হাউস থেকে এ সময়ে প্রতিদিনই প্রায় ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কিন্তু সেই সময়ের ধসের পর থেকে বাজার পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। এদিকে ২০১০ সালের পর মিউচুয়াল ফান্ড এবং কোম্পানি মিলে প্রায় ১৩০ বেশি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। কিন্তু তারপর লেনদেনে নেই কোনো উন্নতি। তবে বর্তমানে সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, লেনদেন এবং বাজার মূলধন কমে যাওয়ার প্রধান কারণ পুঁজিবাজারের নাজুক পরিস্থিতি হয়েছিল। এখন সে চিত্র বদলেছে। এ অবস্থা দীর্ঘমেয়াদি হবে এমন প্রত্যাশা করছেন তারা।
মন্তব্য