-->
শিরোনাম
জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির মচ্ছব

সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা

ঢাকা: পুঁজিবাজারে কিছু বিনিয়োগকারী রয়েছেন যাদের অন্য কোনো আয় নেই। এদের কেউ চাকরি জীবনের শেষ সম্বল পেনশনের টাকা পুঁজিবাজারে নিয়ে এসেছেন। কেউবা অন্য ব্যবসার ঝামেলায় না গিয়ে বেছে নিয়েছেন শেয়ার ব্যবসা। এসব বিনিয়োগকারীর সংসার চলে পুঁজিবাজার থেকে পাওয়া আয় দিয়ে। ফলে বাজারে বৈরী পরিবেশ তৈরি হলে সমস্যায় পড়ে যান এসব বিনিয়োগকারী। সংসার চালাতে বেগ পেতে হয় তাদের। বর্তমানে তাদের অবস্থা হয়েছে আরো করুণ। একদিকে হু হু করে বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, অন্যদিকে শেয়ারবাজার পরিস্থিতিও করুণ। প্রতিদিনই হ্রাস পাচ্ছে শেয়ারদর। এই পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন এসব বিনিয়োগকারী।

 

সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। যার জের ধরে বেড়েছে গাড়ি ভাড়া। বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। গ্যাসের দামও ঊর্ধ্বমুখী। পালা দিয়ে বাড়ছে বাড়ি ভাড়া। এসব সামাল দিতেই বেগ পেতে হচ্ছে মধ্যবিত্তদের। এরপর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর উচ্চমূল্যের কারণে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

 

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে সবার আগে আসে চালের কথা। দীর্ঘদিন থেকে চালের দাম চড়া। সম্প্রতি প্রকারভেদে চালের দাম কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোটা চালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা আর চিকন চালের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা পর্যন্ত। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে।

 

রাজধানীর খুচরা বাজারে সবচেয়ে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজিতে। আর মাঝারি মানের মোটা পাইজাম কিংবা স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা কেজিতে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগের দিনও এই চাল বিক্রি হয়েছে ৪৬-৪৮ টাকা ও ৫২ টাকা কেজিতে। বিআর ২৮ ও ২৯ জাতীয় চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজিতে। মিনিকেট ৭০ থেকে ৭৪ এবং নাজিরশাইল ৭৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

অথচ কিছুদিন আগেও বিআর-২৮ জাতীয় চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, মিনিকেট ৬৮ থেকে ৭২ এবং নাজিরশাইল ৭০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এসব চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা করে। এ ছাড়া সব ধরনের পোলাওর চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা।

 

একইভাবে ডাল, তেল, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, মাংস, ডিম, চিনি, আটা, শীতকালীন সবজিসহ সব দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। কিছুদিন আগে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালী মুরগির দাম ১৮০ থেকে বেড়ে পৌঁছেছে ২৭০ থেকে ৩০০ টাকায়। কিছুদিন আগে যে দেশি মুরগির দাম ছিল ৩৫০ টাকা এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯০ টাকায়। এক মাসের ব্যবধানে লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ টাকা।

 

একইভাবে ভালো মানের প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৫০ টাকা, শিম ৮০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৫ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, শাক ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিকেজি চিনি ৮০ টাকা, রুলার ময়দা ৪৮ টাকা, গমের আটা ৩৫ টাকা, ভালো মানের মসুরের ডাল ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সবমিলে মধ্যবিত্তদের অবস্থা করুণ। এই পরিস্থিতিতে আরো বেগ পাচ্ছেন কেবল শেয়ার ব্যবসা করে সংসার চালাচ্ছেন এমন বিনিয়োগকারীরা।

 

জানতে চাইলে আব্দুল হাকিম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘আমরা যারা শেয়ার ব্যবসা করে সংসার চালাই তাদের পুঁজিবাজারের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। বাজার পরিস্থিতি ভালো না থাকলে আমাদের অবস্থাও খারাপ হয়ে যায়। যাদের অন্য আয় আছে তাদের কথা আলাদা। তারা ভিন্ন খাত থেকে এনে সংসার চালান। বর্তমানে আমাদের অবস্থা নাজুক। কারণ পরিস্থিতি খারাপ থাকায় পুঁজিবাজার থেকে কোনো আয় নেই। অন্যদিকে জীবন ধারণ করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন সবকিছুর দাম বেড়েছে। এতে করে আমরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।’

 

একই প্রসঙ্গে আসলাম উদ্দীন নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘শেয়ার ব্যবসা করেই আমাকে সংসার চালাতে হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সংসার চালানোর খরচ আরো বেড়ে গেছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে দেখতে হচ্ছে উল্টো চিত্র। প্রতিনিয়ত শেয়ারদর কমছে। সম্প্রতি যে শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগ করেছিলাম, সেসব শেয়ারের দর ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে। ফলে পুঁজির নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছি।’

 

প্রাপ্ত গত এক মাসে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর কমেছে প্রায় ছয় শতাংশ। প্রভাব পড়েছে বাজার মূলধনে। যদিও সম্প্রতি সরকারি বন্ডের বাজার মূলধন যুক্ত হওয়ার কারণে বাজার মূলধন অতিরিক্ত সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা বেশি দেখাচ্ছে। এদিকে গত এক মাসের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচকও উল্লেখযোগ্য হারে কমে যেতে দেখা গেছে। এ সময় সূচক কমেছে সাড়ে ছয় শতাংশের বেশি। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আরো সমস্যায় পড়েছেন।

 

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়া বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর কাজ। কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী অল্পতে ধৈর্যহারা হয়ে পড়েন। তারা ভীত হয়ে লোকসানে হলেও শেয়ার বিক্রি করে দেন। এটা ঠিক নয়। এতে তাদেরই আর্থিক ক্ষতি হয়।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version