-->
বড় পতনে বেসামাল বিনিয়োগকারীরা

মূলধন কমেছে ২৬ হাজার কোটি টাকা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
মূলধন কমেছে ২৬ হাজার কোটি টাকা

ঢাক: পুঁজিবাজারে বড় পতন থামছেই না। দিন যত যাচ্ছে, বাজারের অবস্থা আরো নাজুক হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বেসামাল হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী। দীর্ঘদিন থেকে সূচকের পাশাপাশি একযোগে হ্রাস পেতে শুরু করেছে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। এর জেরে হ্রাস পেতে শুরু করেছে বাজার মূলধনও। এতে করে গত ৯ কার্যদিবসে বাজার মূলধন কমেছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। ফলে আবার বিনিয়োগকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই বলে মনে করছেন পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা।

 

সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বেশিরভাগ দিনই পুঁজিবাজারের সূচক নিম্নমুখী থাকছে। পাশাপাশি কমে যাচ্ছে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। একইভাবে উল্লেখযোগ্যহারে হ্রাস পাচ্ছে বাজার মূলধন। ৯ কার্যদিবস আগে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন স্থির হয়েছে ৭ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ ৯ দিনে ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি কমেছে বাজার মূলধন। অথাৎ প্রতিদিন গড়ে বাজার মূলধন কমছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। এ সময় ডিএসইর প্রধান সূচক হ্রাস পেয়েছে ৬৭ পয়েন্ট। এ সময়ের ব্যবধানে সূচক নেমে এসেছে ৬ হাজার ৪৪৯ থেকে ৬ হাজার ৩৯২ পয়েন্টে।

 

এদিকে বড় পতনে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজারে এ ধারা অব্যাহত থাকবে কিনা, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. শহিদুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমি শঙ্কিত। ২০১০ সালেও বাজার পরিস্থিতি এমন হয়েছিল। হঠাৎ করে বাজার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর সবাই ভেবেছিল পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। বাজারসংশ্লিষ্টরাও সেরকম আশার কথা শুনিয়েছিলেন। কিন্তু সে পরিস্থিতি আর বদলায়নি। পরে এর মাশুল দিতে হয়েছে সবাইকে।’

 

একই ধরনের মন্তব্য করেন বিনিয়োগকারী আব্দুস সামাদ। তিনি বলেন, বিএসইসির কর্মকর্তারা বারবার বলছেন, বাজার ভালো হবে। সেই ভরসা নিয়ে বাজারে এসেছিলাম। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। দিন যত যাচ্ছে, বাজার পরিস্থিতি ততই খারাপ হচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমাদের অবস্থা আরো করুণ হবে। ইতোমধ্যে আমরা অনেক পুঁজি হারিয়েছি। লাভের বদলে আমাদের প্রতিদিনই লোকসানের হিসাব করতে হচ্ছে।

 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, ভয় পেয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে বাজারে বিক্রয় চাপ তৈরি হয়েছে, যার জেরে সূচক নিম্নমুখী রয়েছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

 

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, পুঁজিবাজার ঠিক করতে হলে সবার আগে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের উচিত সঠিক দায়িত্ব পালন করা। সব দেশে তা-ই হয়। বাজারের যেকোনো বৈরী পরিবেশে তারা সাপোর্ট দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে হয় উল্টো। বাজারে তাদের আচরণ ডে-ট্রেডারদের মতো। যে কারণে বাজারে মাঝে মাঝে ছন্দপতন হয়। সবার আগে তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করা জরুরি। এটা না করতে পারলে বাজারের চিত্র বদলাবে না।

 

অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আমার জানা মতে, বিএসইসি মার্কেট পরিস্থিতি ভালো রাখার জন্য কাজ করছে- যাতে কোনো ধরনের কারসাজি না হয়, সেদিকে নজর রাখছে। তবে এর মধ্যেও বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ সর্বোপরি পুঁজি তার, তাই এর নিরাপত্তা সবার আগে তাকেই ভাবতে হবে। তাদের কোনো কারণে প্যানিক হওয়া চলবে না। আমাদের দেশের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী সহজে প্যানিক হয়ে যান। বেশিরভাগ সময় তাদের কারণেই বাজার পতন অব্যাহত থাকে। বিনিয়োগকারীদের উচিত বাজারের সব পরিস্থিতি মানিয়ে নেয়া। এটা না করে যদি তারা প্যানিক হয়ে যান, তাহলেই পরিস্থিতি আরো বৈরী হয়।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version