-->

বিনিয়োগকারীদের চোখ এখন ডিসেম্বর ক্লোজিং কোম্পানির শেয়ারে

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
বিনিয়োগকারীদের চোখ এখন ডিসেম্বর ক্লোজিং কোম্পানির শেয়ারে

ঢাকা: শেষ পর্যায়ে রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জুন ক্লোজিং কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা। ইতোমধ্যে এ ধরনের সিংহভাগ কোম্পানির লভ্যাংশের ঘোষণা এসেছে। এরই সঙ্গে কমে গেছে এসব কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধির উত্তাপ। পক্ষাত্মরে দর বৃদ্ধির উত্তাপ বাড়তে শুরম্ন করেছে ডিসেম্বর ক্লোজিং কোম্পানির শেয়ারের। কারণ সামনেই এসব কোম্পানির ইয়ার ক্লোজিং। এরপরই আসবে লভ্যাংশ ঘোষণা। মূলত ভালো লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় বিনিয়োগকারীদের নজর এসব কোম্পানিতে।

 

বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, তুলনামূলতভাবে জুন ক্লোজিং কোম্পানির চেয়ে ডিসেম্বর ক্লোজিং কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি শক্ত। এসব কোম্পানির লভ্যাংশ প্রদানের হারো বেশি। সে কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের নজর বেশি। এ তালিকায় রয়েছে ব্যাংক, বিমা ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, গ্রামীণফোন, ইফনিলিভার, রেকিট বেনকিজার, বাটা, ম্যারিকো, রবি আজিয়াটার মতো কোম্পানি।

 

প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রতি বছরই আর্থির বছর শেষ হওয়ার আগে এ ধরনের কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, আর্থিক দিক দিয়ে এসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অন্যসব কোম্পানির চেয়ে শক্তিশালী; যে কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। এর জেরে সম্প্রতি ডিসেম্বর ক্লোজিং বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। বিশেষ করে যে কোম্পানিগুলো পূর্বে ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে, সেসব কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা খাত ও বহুজাতিক হিসেবে তালিকাভুক্ত কোম্পানি। এর মধ্যে ব্যাংক খাতে ৩৩টি কোম্পানি, বিমা খাতে ৫৫টি, আর্থিক খাতে ২৩টি এবং ১১টি বহুজাতিকসহ মোট ১২১টি কোম্পানি রয়েছে।

 

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, এ বছর ডিসেম্বর ক্লোজিং কোম্পানির দিকে বাড়তি নজর রয়েছে। এর কারণ তালিকাভুক্ত এসব কোম্পানির মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর অনেক কম। এমন দরে শেয়ার কিনতে পারলে লভ্যাংশ নিয়ে লাভবান হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে; যে কারণে এখন এসব শেয়ারদর বাড়ছে। অন্যদিকে আর্থিকভাবে শক্ত অবস্থানে থাকার কারণে এসব শেয়ারে ঝুঁকি কম। মূলত সে কারণেই এসব কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের ঝোঁকটা বেশি।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, এসব কোম্পানি; বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আগে বেশি বেশি বোনাস শেয়ার প্রদান করা হতো। এতে বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হতো। কারণ এতে বাজারের প্রচুর বোনাস শেয়ার যোগ হতো। এতে বেড়ে যেত মোট শেয়ার। ফলে এসব শেয়ারদর কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হতো। তবে গত বছর বোনাস শেয়ার দেয়ার ড়্গেেত্র কিছু নিয়ম বেঁধে দেয়ায় বেশিরভাগ কোম্পানি থেকে নগদ লভ্যাংশ এসেছে। আশা করা যায় এ বছরও তেমন আসবে। যে কারণে আর্থিক বছর শেষের দিকে এসব শেয়ারদর বাড়ে।

 

একই এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সব ভালো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিনিয়োগকারীরা ভালো রিটার্ন আশা করে, সেটা যেকোনো খাতের কোম্পানি হতে পারে। তবে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকে এ প্রত্যাশা একটু বেশিই থাকে। কোম্পানিগুলো যদি শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যাশার প্রতিফল দেখাতে পারে, তাহলে এসব কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরো বাড়বে।

 

অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, গত বছর এসব কোম্পানি বিশেষ করে ব্যাংক থেকে ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা আসেনি। এ বছর আমরা তার বিপরীত চিত্র দেখতে চাই। ভালো লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় তারা এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন বলে জানান বিনিয়োগকারীরা। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস ১৯৮৭-এর ১২(৩এ) এবং ১৩নং ধারায় বলা হয়েছে, বছর শেষ হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে এবং ১৪ দিনের মধ্যে তা উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ ও কমিশনে জমা দিতে হয়। পাশাপাশি এ সময় লভ্যাংশ-সংক্রান্ত ঘোষণা দিতে হয়।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version