মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন চলছেই। দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও স্থিতিশীল বাজারের দেখা পাচ্ছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। পতনের জের ধরে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমেছে। ভাটা পড়েছে নতুন বিনিয়োগকারীর আগমন। সম্প্রতি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজস্ব আহরণ। লাগাতার পতন থাকায় পুঁজিবাজার থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় কমে গেছে। তবে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন বাজার ঘুরে দাঁড়ালে আবারও এখান থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে অক্টোবর মাসে দেশের প্রধান ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় কমেছে, যা ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের তুলনায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা কম। সংশ্লিষ্ট সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে। ডিএসইর তথ্যমতে, অক্টোবর মাসে উদ্যোক্তা-পরিচালক ও বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচা বাবদ লেনদেন হয়েছে ২১ হাজার ৯১ কোটি ৭২ লাখ ৯৩ হাজার ৮৬৯ টাকা। সেখান থেকে কর বাবদ সরকারের মোট রাজস্ব আয় হয়েছে ৩৪ কোটি ১৮ লাখ ৩৪ হাজার ৮১৪ টাকা।
দুই প্রকার লেনদেনের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লেনদেন থেকে কর বাবদ রাজস্ব আয় হয়েছে ২১ কোটি ২০ লাখ ৩০ হাজার ৫৬৮ টাকা। আর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ১২ কোটি ৯৮ লাখ ৪ হাজার ২৪৬ টাকা। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে উদ্যোক্তা-পরিচালক ও বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচা বাবদ লেনদেন হয়েছিল ৩৭ হাজার ১৭ কোটি ২৭ লাখ ৪২ হাজার ৮৮১ টাকা। সেখান থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৪০ কোটি ৭৪ লাখ ৫ হাজার ৭৪১ টাকা।
তার মধ্যে ৩৭ কোটি ২ লাখ ৩৯ হাজার ৭২৮ টাকার রাজস্ব পেয়েছে সরকার বিনিয়োগকারীদের লেনদেন বাবদ কর থেকে। আর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার কেনাবেচা থেকে রাজস্ব পেয়েছে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৬৬ হাজার ১৩ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ে তুলনায় ৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার ৯২৭ টাকা কম রাজস্ব আয় হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চেক নগদায়ন, ফ্লোর প্রাইস এবং আইএমএফের নানা শর্তের ইস্যুকে কেন্দ্র করে অক্টোবর মাসজুড়ে আরও খারাপ অবস্থায় ছিল পুঁজিবাজার। এর মধ্যে ৬ বার বড় পতনের ঘটনা ঘটে। অক্টোবরে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট ২১ কার্যদিবস লেনদেন হয়। এর মধ্যে ১৪ দিনই সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। এ সময় বড় পতন হয়েছে ছয়বার। বিদায়ী মাসে সবচেয়ে বড় পতন ঘটে ১০ অক্টোবর। এদিন সূচক কমে যায় ৬৫ পয়েন্ট। ২৩ অক্টোবরও বড় পতন দেখেন বিনিয়োগকারীরা। এদিন সূচকের পতন হয় ৪৮ পয়েন্ট। কয়েকদিনের বিরতি দিয়ে ৩০ অক্টোবর আবারও বড় পতনে ফিরে যায় পুঁজিবাজার। এদিন সূচক কমে ৪৩ পয়েন্ট। এ ছাড়া গত মাসে এক দিন ৩৭ পয়েন্ট সূচক কমে। একইভাবে অন্য দুদিন ২৭ এবং ২৫ পয়েন্ট সূচকের পতন দেখা যায়। এ কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের লেনদেন কম হয়েছে। লেনদেন কম হওয়ায় সরকার ডিএসই থেকে রাজস্বও কম পেয়েছে বলে মনে করেন তারা।
এদিকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছিল ৩৫ হাজার ৪৮০ কোটি ২৪ লাখ ৪১ হাজার ১১৯ টাকা। সেখান থেকে কর বাবদ সরকার মোট রাজস্ব পেয়েছিল ৪০ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭২ টাকা। তার আগের মাস আগস্টে ডিএসই থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল ৩২ কোটি ৮৬ লাখ ৮৫ হাজার ৮৫৯ টাকা। আগস্ট মাসে ৩২ কোটি ৮৬ লাখ ৮৫ হাজার ৮৫৯ টাকার রাজস্ব আয়ের মধ্যে ব্রোকার হাউসের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের লেনদেন থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২৬ কোটি ১৫ লাখ ৯১ হাজার ৭৭১ টাকা। আর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের লেনদেন থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৬ কোটি ৭০ লাখ ৯৪ হাজারর ৮৮ টাকা।
বিষয়টি নিযে আলাপ করলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, রাজস্ব নির্ভর করে শেয়ার কেনাবেচার ওপর। শেয়ার কেনাবেচা কম হলে রাজস্ব আহরণ কমে যায়। সম্প্রতি বাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো না থাকার কারণে লেনদেন কমে যায়। লেনদেন কম হওয়ার কারণে রাজস্ব কমে গেছে। এতে ভয়ের কিছু নেই। বাজার ভালো হলে লেনদেন আবারও বাড়বে। আর লেনদেন বাড়লে এমনিতেই রাজস্ব বেড়ে যাবে।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য