-->

বিনিয়োগকারীদের চোখ এখন নতুন বছরে

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
বিনিয়োগকারীদের চোখ এখন নতুন বছরে

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: আরো একটি বছর যায় যায় করছে। চলতি বছর পুঁজিবাজারে লেনদেন বাকি ২৪ কার্যদিবস। এরপর শুরু হচ্ছে নতুন বছর। পুঁজিবাজার ভালো হবে এমন প্রত্যাশায় বছর কেটেছে ভুক্তভোগীদের। বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাজারে স্থিতিশীল পরিবেশ ছিল না।

 

মাঝেমধ্যে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তা স্থায়ী হয়নি। ছোট ছোট পতনের পাশাপাশি বড় পতন এসে বিনিয়োগকারীদের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। পতনের জের ধরে এখন তলানিতে অবস্থান করছে বেশিরভাগ শেয়ারদর। পতন থামতে দেয়া হয়েছে ফ্লোর প্রাইস। কিন্তু এতেও কাজ হয়নি। নিরুপায় হয়ে এখন নতুন বছরে চোখ বিনিয়োগকারীদের। তাদের প্রত্যাশা নতুন বছরে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।

 

চলতি বছরের শুরুটা ভালো ছিল না। বছরের শুরু থেকে ছিল পতন। এভাবে বছরের বেশিরভাগ সময় কেটে যায়। তবে শেষের দিকে এসে বাজারের ছন্দপতন আরো হয়। পরে যা ধারাবাহিক পতনে রূপ নেয়। যে কারণে বছরের শেষভাগে এসে লাভের বদলে দৈনিক লোকসানের হিসাব কষতে হয়।

 

ভারী হয় পতনের পাল্লা। আশা করছি নতুন বছরে আমরা পুঁজিবাজারের নতুন রূপ দেখতে পাব। প্রত্যাশা থাকবে এ বছর ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার।

 

কথাগুলো বলছিলেন রাশেদ আলম নামে এক বিনিয়োগকারী। বছরজুড়ে লোকসানে থাকা এই বিনিয়োগকারী পুরোনো দিনের কথা ভুলে যেতে চান। তার প্রত্যাশা নতুন বছরে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে, দেখা পাবেন মুনাফার। তার মতো লাখো বিনিয়োগকারীর প্রত্যাশা নতুন বছরে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। মুনাফার পাশাপাশি সুযোগ হবে লোকসান পুষিয়ে নেয়ার। একই ধরনের প্রত্যাশা করছেন পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা।

 

প্রাপ্ত তথ্যমতে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে সূচকের যে পরিমাণ উত্থান হয়েছে, পতন হয়েছে তার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। বছরের শেষভাগে এসে লাগাতার পতন হওয়ায় বদলে যায় বিনিয়োগকারীদের হিসাব-নিকাশ। ফলে সার্বিক বিবেচনায় অতৃপ্তিতেই ছিলেন তারা। এ বছর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে চান ভুক্তভোগী এসব বিনিয়োগকারী।

 

বছরের শেষ সময় এসেও বড় পতন অব্যাহত রয়েছে। গত সপ্তাহেও তিন দিন সূচকের পতনে বাজার মূলধন কমে গেছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। সূচক পতনের পাশাপাশি লেনদেন এবং অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। তাতে বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন অর্থাৎ পুঁজি কমেছে ৩ হাজার ৪৫৪ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৪৯০ টাকা।

 

প্রথম কর্মদিবস রোববার লেনদেনের শুরুতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূলধন ছিল ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৭৯ কোটি টাকা। আর শেষ দিন বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে মূলধন ছিল ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। শতাংশের হিসাবে মূলধন কমেছে দশমিক ৪৫ শতাংশ। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই অবস্থায় লেনদেন হয়েছে। এর আগের দুই সপ্তাহে পতনের জের ধরে বাজার মূলধন কমেছে আট হাজার কোটি টাকা। অথাৎ তিন সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি।

 

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট বলেন, নতুন বছরে পুঁজিবাজার ভালো থাকবে। তাদের যুক্তি, বাজারে এখনো সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং ইউনিট দর হাতের নাগালে রয়েছে। দেখেশুনে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করলে এখান থেকে ভালো মুনাফা পাওয়া সম্ভব। তারা জানান, বিদায়ী বছরে বাজার পতনের তেমন কোনো কারণ ছিল না। মূল কারণ ছিল বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা। তারা ভীত হয়ে শেয়ার ও ইউনিট কম দরে ছেড়ে দেয়ার কারণেই বেশির ভাগ দিন সূচকের পতন ঘটেছে। বিনিয়োগকারীদের এ মনোভাব পরিহার করতে হবে।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারের যে কোনো পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধারণ করা উচিত। তা না করে আমাদের দেশের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী ভীত হয়ে শেয়ার ছেড়ে দেন।

 

একইভাবে যখন কোনো শেয়ারদর বাড়তে শুরু করে, বিনিয়োগকারীরা সেই শেয়ারে অর্থলগ্নি করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এতে তারা নিজেরাই নিজের ক্ষতি ডেকে আনেন। তাদের উচিত হবে বাজারের যে কোনো পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেয়া। যদি তারা এটা করতে পারেন, তাহলে বাজারচিত্র অনেকখানি পরিবর্তন হবে।

 

এদিকে নতুন বছরে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম।

 

তিনি বলেন, সার্বিক অর্থে চলতি বছরজুড়ে পুঁজিবাজার চিত্র খুব খারাপ ছিল, তা বলা যায় না। তবে মাঝেমধ্যে কিছুটা ছন্দপতন ঘটে। পুঁজিবাজার যাতে ভালো থাকে, বিনিয়োগকারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে চেষ্টা আমরা করছি। এর জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা দরকার। আশা করছি এ বছর বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version