মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: নানা উদ্যোগ নিয়েও বাড়ানো যাচ্ছে না প্রবাসী আয়। বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা, সরকার রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা প্রদান, রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজীকরণের পাশাপাশি প্রবাসীদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ন অর্থায়ন সুবিধা দেয়া, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়নিব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধকরণ এবং রেমিট্যান্স প্রেরণে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু এতে তেমন কাজ হচ্ছে না। বরং দিন দিন পরিস্থিতি আরো নাজুক হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমতে দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে আয় কিছুটা বাড়লেও ডিসেম্বরে আবারো প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ মার্কিন ডলার, আগস্টে তা কমে দাঁড়ায় ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। পরের মাসে রেমিট্যান্স আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। এই মাসে (সেপ্টেম্বর) এসেছে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। পরের মাস অক্টোবরেও প্রবাসী আয়ে ভাটা দেখা যায়। এ মাসে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার পাঠান প্রবাসীরা। নভেম্বরে তা কিছুটা বেড়ে হয় ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার।
সর্বশেষ চলতি মাসে প্রথম ১৮ দিনে দেশে ৯৪ কোটি ১০ লাখ (৯৪১ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ১০ হাজার ৬৮ কোটি টাকা।
এদিকে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে আসার মূল কারণ হিসেবে হুন্ডিকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘হুন্ডির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া’র ফলে রেমিট্যান্স কমেছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, আমদানির খরচ বেশি দেখিয়ে এবং রপ্তানির খরচ কম দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া আগামী নির্বাচন ও সম্ভাব্য রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এটি বন্ধ করা জরুরি। একই প্রসঙ্গে অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, প্রবাসী আয় কমে গেছে কথাটা আসলে ঠিক নয়। অর্থ চলে আসছে অবৈধ পথে। যে কারণে প্রবাসী আয় কম দেখা যাচ্ছে। এটা বন্ধ করতে পারলেই প্রবাসী আয় বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ডিসেম্বরে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। এসব ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৭৬ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৪ কোটি ৬৪ লাখ মার্কিন ডলার। আর বিশেষায়িত এক ব্যাংকের মাধ্যমে ২ কোটি ২৫ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৪২ লাখ মার্কিন ডলার।
অন্যদিকে ডিসেম্বরে সাতটি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। ব্যাংকগুলো হলো রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল), বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, উরি ব্যাংক এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
এদিকে অর্থনীতির অন্যতম এ সূচকটির নেতিবাচক গতি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। এমন পরিস্থিতিতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনতে বিভিন্ন শর্ত শিথিল, চার্জ ফি মওকুফসহ সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত ১৬ নভেম্বর প্রবাসীদের উদ্দেশে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) জানায়, বৈধ পথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ করুন, প্রিয়জনকে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ রাখুন। হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে রেমিট্যান্স না পাঠানোর জন্য এভাবে আহব্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে (হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে) প্রেরণ করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ এবং এতে দেশ রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হয়। অবৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রমাণসাপেক্ষে প্রচলিত আইনে বিএফআইইউ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য