-->
শিরোনাম

কমতে শুরু করেছে শীতের সবজির দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
কমতে শুরু করেছে শীতের সবজির দাম

রাজধানীর বড় বাজারগুলোয় শীতের সবজির প্রাচুর্যের প্রভাবে দাম কমা শুরু হয়েছে ছোট ছোট বাজারে। সপ্তাহ দুয়েক আগেও এসব বাজারে সবজি বিক্রি হতো কারওয়ানবাজারের চেয়ে অনেক বেশি দামে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার দামের সেই বিস্তর ফারাক দেখা যায়নি, যাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতাদের অনেকে। রাজধানীর মতিঝিল, কমলাপুরসহ আশপাশের বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। কমলাপুর বাজারের ক্রেতা কলেজপড়ুয়া তারিক বলেন, ‘সপ্তাহ দুয়েক আগে কমলাপুরে সবজির দাম কারওয়ান বাজারের চেয়ে কেজিতে ২০, ৩০ বা ৪০ টাকা পর্যন্ত বেশি ছিল। এখন সেটা নেই। কিছু সবজিতে হয়তো ৫, ১০ টাকার পার্থক্য আছে। সেটা তেমন বেশি কিছু না।’

 

আরেক ক্রেতা শিশির বলেন, ‘আগে এ বাজারে সবজির দাম অনেক বেশি নিত, যে কারণে বেশি বাজার করার প্রয়োজন হলে কারওয়ানবাজার থেকেই করতাম। ‘এখন দাম মোটামুটি একই। তাই এখান থেকেই নিয়মিত বাজার করছি। শীতের সময়টাতে যেকোনো বাজারেই সবজি কিনতে ভয় লাগে না।’ শীতের শুরুতে চড়া দামে বিক্রি হয় ফুলকপি ও বাঁধাকপি, তবে এসবের দাম প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমেছে। বিক্রেতারা জানান, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে। কিছুদিন আগেও সবজি দুটির দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, তবে এখনো বেশ চড়া টমেটোর দর। পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। শিমের দাম তিন থেকে চার ভাগ কমেছে। প্রতি কেজি শিম বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। মৌসুমের শুরুতে এর কেজি ছিল ১২০ টাকা। গত সপ্তাহেও মতিঝিল এলাকায় কেজিপ্রতি ৫০ টাকার বেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া পেঁপে ২০ টাকা, বেগুন রকমভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, করলা মানভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে। আমদানি করা লম্বা গাজরের দাম একই থাকলেও কমেছে দেশি গাজরের দাম। বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, যা কিছুদিন আগেও ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেচাকেনা হয়। এছাড়া চিচিঙ্গা ও ধুন্দল বিক্রি হয় ৬০ টাকা কেজিতে। রকমভেদে প্রতিটি লাউ বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। নতুন পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৩৫ টাকা। রকমভেদে কাঁচামরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। এছাড়া ভালো মানের আদা ও রসুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। জানতে চাইলে কমলাপুরের বিক্রেতা রিফাত বলেন, ‘এখন প্রচুর মালের (সবজি) আমদানি। আমরা কম দামে কিনতে পারছি। তাই সেই এরকম দামে বিক্রি করছি।’

 

আরেক বিক্রেতা জহির বলেন, ‘এখন সবজির আমদানি বেশি। এজন্য দাম কম। সবজির দাম বেশি থাকলে আমাদের খরচও বেড়ে যায়। ধরেন ১০০ টাকা কেজিতে ১ মণ মাল কেনার পরে সেখান থেকে যদি ৫ কেজি নষ্ট বের হয়, তাহলে কত টাকা লস হয়? আর যদি সেই মাল ৫০ টাকা কেজিতে কেনা পড়ে, তাহলে কয় টাকা লোকসান হবে? অবশ্যই কম। ‘এ কারণে দাম চড়া থাকলে আমাদের খরচও বেশি পড়ে। বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে, যার কারণে কাস্টমারও খুশি থাকে না। আমরাও বেচে আরাম পাই না।’ তিনি বলেন, ‘শীতকালে এ সমস্যাটা খুব বেশি থাকে না। মালও তেমন পচে না; নষ্ট কম হয়। আমদানি বেশি থাকার কারণে কম দামেও পাওয়া যায়, যার কারণে কাস্টমাররাও সন্তুষ্ট থাকেন।’ বাজারে সবজির দামে অসন্তোষ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে কাউকে কাউকে। এমনই একজন বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুর রহমান ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘শীতকালে কেন সবজির এমন দাম হবে, সেটা যেই বাজারেই হোক। বেগুন ২০ টাকার বেশি হওয়া উচিতই না। ছোট ছোট ফুলকপি ৩০ টাকা পিস, তাহলে দাম কোথায় কম হলো? তবে অন্য সময়ের চেয়ে এখন এসব ছোট বাজারে কিছুটা কম দামে সবজি কেনা যাচ্ছে। ‘অন্য সময় তো আগুন; ছোঁয়াই যায় না। হাজার টাকার বাজার করলেও মনে হয় কিছুই কিনিনি।’

 

কেমন ছিল মাছের দাম : চাষ করা কই, তেলাপিয়া, পাঙ্গাস বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে। রকমভেদে রুই, কাতলা কার্পজাতীয় মাছ ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া প্রায় অপরিবর্তিত ছিল অন্যান্য মাছের দামও। বিক্রেতা রশিদ বলেন, ‘এখন তো সব ধরনের মাছের চাষ হয়, যার কারণে দাম একটু কম থাকে।’

 

শীতের সবজিতে স্বস্তি ছোট বাজারেও : দাম অপরিবর্তিত থেকে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ১৫৫ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া লেয়ার ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতা ইয়াসিন। দাম অপরিবর্তিত থাকা পাইজাম চাল প্রতি কেজি ৫৮ টাকা, আটাশ ৬০ থেকে ৬২ টাকা, নাজিরশাইল ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version